উপজেলায় সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক
Published: 29th, March 2025 GMT
বিগত ৫০ বছরেও যে কাজটি করা সম্ভব হয়নি, তা করে দেখিয়েছে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের সঙ্গে জেলার যোগাযোগব্যবস্থার যে ভয়াবহ সংকট ও দুর্ভোগ ছিল, তা নিরসন হয়েছে। ফলে সন্দ্বীপকে ঘিরে যাবতীয় সিন্ডিকেট ও সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানের দৌরাত্ম্যও বন্ধ হলো। এখন ঢাকা–চট্টগ্রাম থেকে যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক সরাসরি সন্দ্বীপ চলে যাচ্ছে। তবে আশঙ্কা হচ্ছে, দ্বীপটির অভ্যন্তরের সড়কগুলো এসব গাড়ির চাপ নিতে পারবে তো?
চারপাশে জলবেষ্টিত সন্দ্বীপ মাত্র ৭৫০ বর্গকিলোমিটারের এক টুকরা ভূখণ্ড। এ অঞ্চলের প্রায় চার লাখ বাসিন্দার যাতায়াতব্যবস্থার জন্য রয়েছে কুমিরা-গুপ্তছড়াসহ ছয়টি নৌপথ। একটি মাত্র যাত্রীবাহী জাহাজে মানুষ যাতায়াত করতেন এত দিন। পাশাপাশি স্পিডবোট, কাঠের ট্রলারে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী পারাপার হতো। ঘটত অনেক দুর্ঘটনা। ছিল কাদা মাড়িয়ে হাঁটার দুর্ভোগ। ফেরি চালু হওয়ায় এসব দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেলেন সন্দ্বীপের বাসিন্দারা। আর যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে বা মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসায় ট্রলার বা স্পিডবোটচালক বা মালিকদের কাছে একপ্রকার জিম্মি হয়ে থাকতে হতো দ্বীপবাসীকে। এবারের ঈদযাত্রা সেসব ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেলেন দ্বীপবাসী।
২৪ মার্চ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাট থেকে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ফেরিঘাট নৌপথে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরি চলাচল শুরু করা হয়। এরপর চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে কয়েকটি বাস সার্ভিস চালু হয়েছে। ট্রাকভর্তি সবজিসহ কাঁচা পণ্যও সহজেই নেওয়া যাচ্ছে সাগরদ্বীপটিতে। এতে সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ফেরি চলাচল শুরু হওয়ার আগে ট্রলারে করে পণ্য আনা-নেওয়া হতো দ্বীপটিতে। এতে খরচ ও সময় বেশি লাগত।
মার্চ মাসের পর থেকেই ধীরে ধীরে সন্দ্বীপ চ্যানেল অশান্ত হয়ে ওঠে। জোয়ার-ভাটায় এ রকম বিশাল তারতম্যের কারণে এ চ্যানেলে ফেরি চালানো অনেক কঠিন হবে। সে সময় ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতেও হতে পারে বলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জানিয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ উপকূলীয় এলাকায় চলাচলের উপযোগী ফেরি নির্মাণ করছে। আগামী বছর থেকে এই সমস্যা আর থাকবে না বলে তারা আশা করছে। আমরা তাদের প্রতি আস্থা রাখতে চাই। সন্দ্বীপের সঙ্গে এ ফেরি যোগাযোগ আক্ষরিক অর্থেই কার্যকর ও টেকসই হোক।
তবে যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী বাস চলাচলের কারণে দ্বীপের অভ্যন্তরে সড়ক নিরাপত্তায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। অপেক্ষাকৃত সরু সড়কে বাস ও ট্রাক চলাচল করছে। অনেকে সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন। আশা করি, দ্বীপের ভেতরের সড়কগুলোতে বাস ও ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। যত্রতত্র ও বেপরোয়া যান চলাচল রোধে সুশৃঙ্খল নিয়মের মধ্যে বিষয়টি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হোক।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিতর্কিত তিন নির্বাচনে জড়িতদের ভূমিকা তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশ
বিতর্কিত তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে জড়িত সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনারগণ ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবদের ভূমিকা তদন্তে অবিলম্বে একটি কমিটি গঠনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার (১৬ জুন) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বৈঠকে আলোচনা শেষে এ নির্দেশ দেন তিনি। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
আরো পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টা অনেক বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন: ফখরুল
ইউনূস-তারেক বৈঠক
রমজান শুরুর আগের সপ্তাহেও নির্বাচন হতে পারে: যৌথ বিবৃতি
বৈঠকে কমিশন সদস্যগণ জুলাই সনদ তৈরির কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন।
কমিশনের সহ-সভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজ বলেন, “বেশকিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। খুব শিগগিরই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সনদ চূড়ান্ত করে ফেলা সম্ভব হবে।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “সবাই জুলাই সনদের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আমি আশা করি, আগামী জুলাই মাসের মধ্যে আমরা এটি জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারব।”
বৈঠকে লন্ডন সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি বলেন, “লন্ডনে বাংলাদেশি কমিউনিটির যাদের সঙ্গেই দেখা হয়েছে, তারা সংস্কার নিয়ে জানতে চেয়েছে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা খুব আগ্রহী। তারা বিস্তারিতভাবে ঐকমত্য কমিশনের কাজ নিয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা করেছে, মতামত দিয়েছে। যেখানেই গেছি, সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা আমাকে জিজ্ঞেস করছেন, ‘আমরা আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে পারব তো?’ আমাদের প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। পোস্টাল ব্যালট এবং আর কী কী অপশন আছে সেগুলো নিয়ে ভাবতে হবে, সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।”
বৈঠকে নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশন প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “সব রাজনৈতিক একমত হয়েছে যে, অতীতের তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন আয়োজনে কর্মকর্তাদের ভূমিকা তদন্ত ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা প্রয়োজন।”
ঢাকা/হাসান/মাসুদ