ঈদ নিরাপত্তায় ডিএমপির ৬৬৭ টহলদল দায়িত্ব পালন করবে
Published: 29th, March 2025 GMT
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক বলেছেন, পবিত্র ঈদুল ফিতর উৎসবমুখর ও নিরাপদ পরিবেশে উদযাপনের লক্ষ্যে ও ঈদে বাসা-বাড়ি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিপণি বিতানের সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশ সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। পবিত্র রমজানে নগরবাসী যাতে নিরাপদে ইবাদত বন্দেগী করতে পারে; সেজন্য যেমন ডিবি সবসময় পাশে ছিল, তেমনি নিরাপদ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদ উদযাপনে নগরবাসীর পাশে থাকবে।
আজ শনিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গৃহীত কার্যক্রম সংক্রান্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) বলেন, ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে ঢাকা মহানগর এলাকায় পুলিশি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে মহানগরীতে চেকপোস্ট ও টহল কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের ৫০টি থানা এলাকায় প্রতিদিন জননিরাপত্তা বিধানে দুই পালায় ডিএমপির ৬৬৭টি টহল টিম দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া মহানগর এলাকার নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত স্থানে ডিএমপি কর্তৃক ৭১টি পুলিশি চেকপোস্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। পুলিশকে সহায়তা করার জন্য ইতোমধ্যে অক্সিলিয়ারি ফোর্স নিয়োগ করা হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তারা কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। ইউনিফর্মড পুলিশের পাশাপাশি মহানগরীর নিরাপত্তায় ডিবির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক টিম মাঠে ক্লান্তিহীন কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, নগরবাসীর নিরাপত্তায় ডিবি ‘ভ্যানগার্ড’ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে ও যাবে। পবিত্র ঈদ উপলক্ষ্যে বিপণিবিতান, রেল স্টেশন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে ডিবির কার্যক্রম আরও বেগবান করা হয়েছে। নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে যে কোনো প্রয়োজনে ডিবি সর্বদা নগরবাসীর সঙ্গে রয়েছে। নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে যে কোনো অপতৎপরতা রুখে দিতে ডিবি প্রস্তুত।
রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিপণিবিতান, রেল স্টেশন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে কেউ যাতে নাশকতা করতে না পারে সেজন্য ডিবির গোয়েন্দা নজরদারি পূর্বের যেকোন সময়ের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়াও ডিবির সাইবার টিম তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে নজরদারি বৃদ্ধি করেছে। সাইবার স্পেস ব্যবহার করে আসন্ন ঈদ উপলক্ষে যে কোন অপপ্রচার রোধে ডিবি তৎপর রয়েছে। প্রোএকটিভ পুলিশিং এর অংশ হিসেবে ডিবির জাল সর্বত্র বিস্তৃত করা হয়েছে। ঢাকা মহানগরীকে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা দিতে ডিবি সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) বলেন, রোজা শুরুর দিন থেকে এখন পর্যন্ত ডিবির অলআউট অ্যাকশনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছিনতাইকারী, ডাকাত, চাঁদাবাজ ও বিভিন্ন অভ্যাসগত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাছাড়া ডিবির মাদকবিরোধী অভিযানে বিপুল পরিমাণ অবৈধ মাদকসহ উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পেশাদার মাদক কারবারি গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ছোট বড় যে কোনো অপরাধীর ক্ষেত্রে ডিবি জিরো টলারেন্স নিয়ে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। যে কোনো অপরাধের ক্ষেত্রে ডিবি ‘ইন্টারসেপ্টর বা প্রতিবন্ধক’ হিসেবে কাজ করবে। ডিবির সব সদস্যের মনোবল পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়ে দৃঢ় রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নগরবাসীর ‘ভরসার কেন্দ্রবিন্দুতে’ পৌঁছতে ও অপরাধীদের জন্য ‘মূর্তিমান আতঙ্ক’ হিসেবে পরিগণিত হতে ডিবির আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ডিবি তার কার্যক্রমের মাধ্যমেই থাকতে চায় নগরবাসীর ভরসার কেন্দ্রস্থলে, জনগণের দোয়ায় ও প্রার্থনায়। কোন ফাঁকা বুলি নয়; বরং ‘দৃশ্যমান এ্যাকশনের’ মাধ্যমেই ডিবি ক্রমাগত নগরবাসীর আস্থার প্রতীকে পরিণত হচ্ছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ঈদ শেষে মহানগরবাসী যাতে নিরাপদে ও স্বস্তিতে ঘরে ফিরতে পারেন এবং কোনো ধরনের বিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন না হন; সেজন্য ঈদ পরবর্তী সময়ে ডিবির ‘বিশেষ অভিযান’ পরিচালিত হবে। ছিনতাইকারী, চোর, চাঁদাবাজ ও বিভিন্ন অভ্যাসগত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে ডিবির আটটি বিভাগের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক টিম কর্তৃক মহানগরের বিভিন্ন কৌশলগত স্থানে এ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে জাল টাকা তৈরি ও সরবরাহ রোধে ডিবি অত্যন্ত তৎপর রয়েছে। ইতোমধ্যে ডিবির অভিযানে বিপুল সংখ্যক জালনোট ও জালনোট তৈরির সরঞ্জামসহ চক্রের বেশ কয়েকজন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া অনলাইনে জালনোট বিক্রয় ঠেকাতে ডিবির সাইবার টিম সার্বক্ষণিক অনলাইনে নজরদারি করছে। জালনোট তৈরি, বিক্রয় ও সরবরাহ রোধে পূর্বের যে কোনো সময়ের চেয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে ডিবি।
রেজাউল আরও বলেন, ঈদ উপলক্ষে ডিএমপির ইউনিফর্মড পুলিশ ও ডিবির কার্যক্রমের পাশাপাশি নিরাপত্তা সচেতনতার অংশ হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতানের দায়িত্বে নিয়োজিত নিরাপত্তা রক্ষীদের ডিউটি জোরদার করতে হবে এবং যেকোন অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা নজরদারির ব্যবস্থা রাখতে হবে। সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারিক করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পুলিশের পাশাপাশি মালিক পক্ষকে স্ব স্ব মার্কেট বা শপিংমলের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে হবে এবং এলাকার থানা বা ফাঁড়ির সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হবে।
ডিবির ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ঈদে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে বা ঘটার আশঙ্কা থাকলে তা স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ি, থানা বা ডিবিকে অবহিত করবেন। তাছাড়া ডিএমপির কন্ট্রোল রুমের নম্বর অথবা জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ যোগাযোগ করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষ্যে বিপণিবিতানসহ যে কোন স্থানে নাশকতা, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও নিরাপত্তাঝুঁকি সম্পর্কিত যে কোন তথ্য থাকলে ডিবিকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে হবে এবং তার পাশাপাশি তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন রেখে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড এমপ গ র প ত র কর ঈদ উপলক ষ নগরব স র ব যবস থ ড এমপ র নজরদ র ন র পদ আরও ব অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট সময়কালে ফ্যাসিবাদী শক্তি নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে, এসবির প্রতিবেদন
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে কর্মসূচি পালনকালে ফ্যাসিবাদী শক্তি অনলাইন-অফলাইনে প্রচারণা চালিয়ে সারা দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)।
গতকাল সোমবার এসবির এক প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনটি পুলিশের সব বিভাগকে পাঠিয়ে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছে এসবি। এসবির একটি সূত্র প্রথম আলোকে এই প্রতিবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ফ্যাসিবাদবিরোধী সামাজিক সংগঠনগুলো ১ জুলাই থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। এই ধারাবাহিকতায় ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত কর্মসূচি পালনের সময়কাল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে কর্মসূচি পালনকে কেন্দ্র করে বিতাড়িত ফ্যাসিবাদী শক্তি অনলাইন-অফলাইনে প্রচারণা চালিয়ে দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টি, ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির কর্মসূচিতে বাধা প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা চালাতে পারে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি ও জানমাল রক্ষায় পুলিশের বিভিন্ন বিভাগকে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে এসবি।
নির্দেশনাগুলো হলো ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা। ৮ আগস্ট পর্যন্ত নিয়মিত সন্দেহজনক ব্যক্তিসহ মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস ও অন্যান্য যানবাহন তল্লাশি করা। বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট, রেলস্টেশন ও বিমানবন্দরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল অভিযান পরিচালনা করা। মোবাইল প্যাট্রোল জোরদার করা। গুজব রোধে সাইবার পেট্রোলিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখাসহ গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা।
এ ছাড়া কোনো অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকলে তা তাৎক্ষণিকভাবে এসবিকে অবহিত করার কথাও বলা হয়েছে।