ঢাকা থেকে নিয়ে আসা ঈদ উপহার মোটরসাইকেলে স্বজনদের পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন তিন ভাই। তবে পথেই শেষ হয়ে গেছে সব। ঢাকাগামী রাজিব পরিবহন নামে একটি বাসের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই তারা নিহত হন। শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে পিরোজপুরের পাথরঘাটা উপজেলার সোনারবাংলা নামক এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বাসের সুপারভাইজার ও চালকের সহকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

নিহতরা হলেন মঠবাড়িয়া উপজেলার টিকিকাটা ইউনিয়নের বাইশকুরা গ্রামের নাসির উদ্দিন খানের ছেলে নাঈমুজ্জামান খান শুভ (২২), শান্ত খান (১৪) ও নাদিম খান (৮)। রাজমিস্ত্রী নাসির ও শিউলি বেগম দম্পতির চার সন্তানের মধ্যে দেড় বছর বয়সী ছেলে হাসান ২০২৩ সালের রমজান মাসে পানিতে ডুবে মারা যায়। এবার সড়ক দুর্ঘটনায় বাকি তিন ছেলের মৃত্যু হলো। 

তিন ছেলে হারানোর শোকে বাড়ির ওঠানে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন মা শিউলি বেগম। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, আমার তো সব শেষ হয়ে গেল। হায় আমার সন্তান কোথায় পাব। 

নিহত শুভর ফুফাতো ভাই রিফাত মোল্লা বলেন, তিনি ও তাঁর মামাতো ভাই সাভারের একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন। শুক্রবার ছুটি পেয়ে রাত সাড়ে ৯টায় শুভ সায়েদাবাদ থেকে গাড়িতে উঠে ভোররাতে নানাবাড়ি পৌঁছায়। সকালে দুর্ঘটনার খবর পাই। 

এদিকে লক্ষ্মীপুরে বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পথে বাসচাপায় জুথী আক্তার ও তাঁর দেড় বছর বয়সী ছেলে সিয়াম নিহত হয়েছে। শুক্রবার গভীর রাতে সদর উপজেলার কাচারিবাড়ি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। সদর উপজেলার জব্বার মাস্টারহাট এলাকার কুয়েত প্রবাসী শরীফের স্ত্রী জুথী ও তাঁর ছেলে সিয়াম। 

সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ঈদে বাড়িতে এসে বাসচাপায় সুমাইয়া (৮) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের আহসানমারা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। সুমাইয়া উপজেলার জয়কলস নোয়াগাঁও গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের মেয়ে। 

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় আজ ঈগল পরিবহনের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে মো.

করিম (৪৫) নামে চালকের সহকারীর মৃত্যু হয়েছে। করিম চন্দনাইশ উপজেলার দক্ষিণ হাসিমপুর গ্রামের মো. হাসানের ছেলে। 

ফরিদপুরের মধুখালীতে আজ নওপাড়া বাইপাস সড়কের কাছে বাস ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে মোটরসাইকেল আরোহী রোমান মোল্লা (২৮) গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি মাগুরা সদর উপজেলার রিদয়পুর গ্রামের আব্দুর রহিম মোল্লার ছেলে। 

(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা)

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন হত দ র ঘটন উপজ ল র

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা