সিরাজগঞ্জের বেতকান্দি গ্রামের দুই বোনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না আর জীবনসংগ্রাম এক জায়গায় এসে মিলিত হয়েছে। তার নাম ‘বটতলা’। এটি ঠিক পারিবারিক উদ্যোগ নয়। বলা যেতে পারে বটতলা মাহমুদা রশীদ লতা ও মারিয়াম রশীদ ছন্দা– দুই বোনের সংগ্রামের ফল। বড় বোন লতা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে প্রায় ১০ বছর চাকরি করেছেন একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে। ছোট বোন ছন্দার পড়াশোনা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথম থেকেই তিনি নিজে কিছু করতে চেয়েছেন। করোনাকালে দুই বোনের চিন্তা এক হয়ে বটতলায় রূপ নেয়।
কাগজে-কলমে চার বছর হলেও বটতলার নিয়মিত কাজের বয়স তিন। ছন্দা তখন মাস্টার্সের শিক্ষার্থী, আর লতা চাকরি করতেন। এর মাঝে কাজ চলত। দুই বছর ধরে দুই বোন সার্বক্ষণিক সময় দিচ্ছেন।
গ্রামীণ ঐতিহ্যকে শহরের যান্ত্রিকতায় হাঁপিয়ে ওঠা মানুষদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার বাসনা থেকেই ‘বটতলা ফ্যাশন’-এর যাত্রা শুরু বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম কর্ণধার ছন্দা। তিনি বলেন, ‘যেহেতু গ্রামীণ হাটগুলো বসত বটগাছের নিচে, ওটা ছিল আমাদের কাছে শুদ্ধতার প্রতীক। তাই আমাদের নাম বটতলা। করোনার লকডাউনে ভাইবোনদের আড্ডা থেকে এই নামটা উঠে এসেছে। নামটি আমার প্রয়াত ভাই মুত্তালিব রিপনের দেওয়া।’
লতা বলেন, ‘১০ বছর চাকরি করার পর এটিকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চেয়েছি। তার প্রথম কারণ ছিল, আমি যেহেতু সিঙ্গেল মাদার, তাই আমার সন্তানকে যেন আমার মতো করে সময় ও সাপোর্ট দিতে পারি। তা ছাড়া মনে হয়েছে চাকরি করে আমি কখনও অন্যদের ভরসার জায়গা হতে পারব না বা আর্থিক সহযোগিতা করা সম্ভব না, একটা বিজনেস দাঁড় করালে যেটি সম্ভব। আমার মতো বহু নারী আমাদের দেশে আছে, যারা শ্বশুরবাড়ি বা স্বামীর অত্যাচার সহ্য করে শুধু আর্থিক ব্যাকআপ না থাকার জন্য। আমি যা পেরেছি তা অন্যদের জন্য করতে চাই।’
ছন্দা জানান, ‘বটতলা ফ্যাশনের শুরুটা পারিবারিক আড্ডায় শুধু দেশীয় ঐতিহ্য রক্ষার মিছিলে শামিল হওয়ার জন্য হলেও পরে এটিকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চেয়েছি। এর পেছনে দুটো কারণ ছিল– প্রথমত, পার্টটাইম কিছু চাকরির অভিজ্ঞতার পর মনে হলো, আমার স্বাধীন পেশা দরকার এবং যেহেতু আমি নারী, ভবিষ্যতে সন্তানদের পরিপূর্ণ সময় দিতে হলেও ব্যবসাকে উপযুক্ত পেশা মনে হয়েছে। দ্বিতীয়ত, মানুষকে সাহায্য করা, মানুষের পাশে থাকার ইচ্ছা আমার তীব্র। ব্যবসার মাধ্যমে অন্যদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। এখনও আমাদের প্রতিষ্ঠান অনেক ছোট, কিন্তু ইতোমধ্যে বেশ কিছু লোক আমাদের ওপর নির্ভরশীল।’
বটতলার শুরুটা ২০-৩০ হাজার টাকা নিয়ে। সেখান থেকে এখন মাসে ২ লাখ টাকার মতো আয় হয়। এর সিংহভাগই পুনরায় বিনিয়োগ করা হয় বলে জানান ছন্দা। এখনও তারা কোনো বেতন নেন না। ভবিষ্যতে সেই সক্ষমতা অর্জন করতে চান তারা। ছন্দা বলেন, ‘আমরা সবসময়ই ক্রেতার ভালোবাসা পেয়ে এসেছি। আমাদের রিপিট কাস্টমার প্রচুর। সঠিকভাবে মার্কেটিং করতে পারিনি, তবুও প্রায় ৫০ হাজার পরিবার আমাদের স্মরণে রেখেছে।’
এখন বটতলায় মেয়েদের শাড়ি, ব্লাউজ, থ্রিপিস, টুপিস, কুর্তি, টপস, স্কার্ট, ওড়না; ছেলেদের শার্ট, পাঞ্জাবি, ফতুয়া; শিশুদের ফ্রক, লেহেঙ্গা, থ্রিপিস, ফতুয়া, পাঞ্জাবি পাওয়া যায়। বটতলায় হাতের কাজকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। বেশির ভাগ শাড়ি, জামায় হাতের কাজের নকশা, প্যাচওয়ার্ক, ব্লকপ্রিন্ট, স্ক্রিনপ্রিন্ট, মোমডাই, টাইডাই, ডিজিটাল প্রিন্টের কাজ রয়েছে। এ ছাড়া হাতে তৈরি গহনা পাওয়া যাবে ঈদের পর থেকে।
ছন্দা বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমরা শুধু পোশাক নিয়ে কাজ করলেও অদূর ভবিষ্যতে আমাদের গ্রাম সলপের ঘোল, ঘি, দুধ, গুড়, সরিষার তেল নিয়ে কাজ করব। আমাদের আবাদি জমি আছে। সেখান থেকে উৎপাদিত নিরাপদ খাদ্য নিয়ে কাজ করব।’
এখন সাভারে একটি আউটলেট আছে বটতলার। ব্যবসা বড় করতে চান দুই বোন। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে লতা বলেন, ‘বড় একটি অফিস, যেখানে ৫০ থেকে ১০০ জনকে বেতন দেওয়ার সক্ষমতা থাকবে। এরপর ঢাকায় এবং ঢাকার বাইরে আউটলেট দেব। খাবার নিয়ে কাজ করব, দেশের বাইরেও বাংলাদেশের পণ্য তুলে ধরতে চাই। স্বপ্ন অনেক বড়। সে পথে ছোট ছোট পা ফেলছি শুধু।’ v
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সেঞ্চুরির অপেক্ষায় মুশফিকুর, তিন দিনেই জয় রাজশাহীর
জাতীয় ক্রিকেট লিগে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে তিনদিনেই জয় পেয়েছে রাজশাহী বিভাগ। ৭ উইকেটে তারা হারিয়েছে খুলনা বিভাগকে। এদিকে সিলেটে সেঞ্চুরির অপেক্ষায় জাতীয় দলের ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। ডানহাতি ব্যাটসম্যান ৯৩ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন।
তার ব্যাটে ভর করে ঢাকা বিভাগের বিপক্ষে লড়ছে সিলেট। ঢাকার করা ৩১০ রানের জবাবে সিলেটের ৭ উইকেটে রান ২৬০। ৫০ রানে পিছিয়ে তারা। ১৭০ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৯৩ রান করে অপরাজিত আছেন মুশফিকুর। তার সঙ্গে ৫ রানে অপরাজিত আছেন ইবাদত হোসেন। এছাড়া শাহানুর ৩০ ও তোফায়েল ২৭ রান করেন।
আরো পড়ুন:
মাহিদুল-মজিদের সেঞ্চুরির দিনে মুমিনুলের ৮ রানের আক্ষেপ
স্বীকৃতির ১০ বছর পর জাতীয় ক্রিকেট লিগে ময়মনসিংহ
মিরপুরে খুলনার দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংও যুৎসই হয়নি। এবার ২৫৫ রানে থেমে যায় তাদের ইনিংস। ১ উইকেটে ৬৮ রানে দিন শুরু করে তারা। এনামুলের ইনিংস থেমে যায় ৩৪ রানে। মোহাম্মদ মিথুন খুলতে পারেননি রানের খাতা। মিরাজ ৪৮ ও জিয়াউর এবং ইয়াসির মুনতাসির ৩২ রানের দুটি ইনিংস খেলে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাতেও তাদের স্কোর বড় হয়নি।
১৪৭ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে ২৫৫ রানের বেশি করতে পারেনি। তাতে ১০৯ রানের লক্ষ্য পায় রাজশাহী। ৭ উইকেট হাতে রেখে জয় নিশ্চিত করে নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
হাবিবুর রহমান সোহান ৬৮ বলে ৬২ রান করেন ৪ চার ও ৩ ছক্কায়। ২৫ রান আসে সাব্বির হোসেনের ব্যাট থেকে। সাব্বির রহমান ১২ ও মেহরব ৪ রানে অপরাজিত থেকে জয় নিয়ে ফেরেন। প্রথম ম্যাচ হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচে জয়ে ফিরল তারা।
কক্সবাজারে ময়মনসিংহ বিভাগ ও রংপুর বিভাগের ম্যাচ বাজে আউটফিল্ডের কারণে ভেস্তে যায়। একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। ২ উইকেট হারিয়ে রংপুরের রান ১৮। এখনও তারা ৫৩৭ রানে পিছিয়ে। ময়মনসিংহ প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটে ৫৫৫ রানে ইনিংস ঘোষণা করে।
পাশের মাঠে ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় খেলা হয়েছে। আগের দিনের ২ উইকেটে ১১৫ রানের সঙ্গে ৫১ রান যোগ করেন বরিশাল বিভাগ। খেলা হয়েছে কেবল ১৫ ওভার। জাহিদুজ্জামান খান ৩২ ও সালমান হোসেন ইমন ৭৫ রানে অপরাজিত আছেন। প্রথম ইনিংসে এখনও তারা ১৯২ রানে পিছিয়ে।
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল