ভূমিকম্পের পরও যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারে বিমান হামলা চালাচ্ছে জান্তা সরকার
Published: 30th, March 2025 GMT
মিয়ানমারে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়াদের উদ্ধারে যখন হিমশিম খাচ্ছে জান্তা সরকার তখনও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির কিছু অংশে বিমান থেকে বোমা হামলা চলছে। এই হামলাকে ‘আপত্তিকর ও অগ্রহণযোগ্য’ হিসেবে বর্ণনা করেছে জাতিসংঘ। খবর- বিবিসি
মিয়ানমারের উত্তর শান রাজ্যের নাউংচোতে একটি বিমান হামলায় সাতজন নিহত হয়েছে। ভূমিকম্প আঘাত হানার তিন ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে স্থানীয় সময় বিকেল ৩টার দিকে এই হামলা চালানো হয় বলে বিবিসি বার্মিজ নিশ্চিত করেছে।
সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য লড়াইরত গণতন্ত্রপন্থী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিম সাগাইং অঞ্চলের চ্যাং-ইউ শহরে বিমান হামলা হয়েছে, যা ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল। থাই সীমান্তের কাছাকাছি অঞ্চলেও বিমান হামলার খবর পাওয়া গেছে।
শুক্রবার ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ১,৬০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং অনেক মানুষ আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন সামরিক বাহিনী বিভিন্ন অঞ্চলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। ভূমিকম্পে বহু ভবন ও সেতু ভেঙে পড়েছে, রাস্তাঘাট ধ্বংস হয়েছে। এখনও উদ্ধার তৎপরতা চলছে। তবে যন্ত্রপাতির অভাবে সেই তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে দেশটিতে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।
জাতিসংঘের স্পেশাল র্যাপোটিয়ার টম অ্যান্ড্রুজ বলেন, ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর সবাই যখন ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্ধারের চেষ্টা করছেন তখন সেনাবাহিনী মানুষের ওপর বোমা নিক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে। এটি অবিশ্বাস্য।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ওপর যাদের প্রভাব আছে তাদের জান্তা সরকারকে আরও চাপ দেওয়া উচিত। স্পষ্ট করে বলা উচিত যে, এ হামলা গ্রহণযোগ্য নয়।
আমি জান্তা সরকারকে তাদের যেকোনো সামরিক অভিযান বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ন ত সরক র ভ ম কম প ভ ম কম প সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন: জামায়াতে ইসলামী
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠককে স্বাভাবিক বললেও, দুইজনের যৌথ বিবৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জামায়াতে ইসলামী।
শনিবার জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের বৈঠকের পর বিবৃতিতে দলটি বলেছে, ‘যৌথ বিবৃতি প্রদান বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয় বলে আমরা মনে করি। এর মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন, যা তার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করেছে।’
দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, ‘১৩ জুন লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাকে জামায়াত খুবই স্বাভাবিক মনে করে। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে এবং যৌথভাবে বৈঠক করেছেন।’
লন্ডন বৈঠকের যৌথ বিবৃতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে জামায়াত বলেছে, ‘গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে ভাষণে ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন প্রধান উপদেষ্টা। তার এই ঘোষণার পর লন্ডন সফরে একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিদেশে যৌথ প্রেস ব্রিফিং এবং বৈঠকের বিষয় সম্পর্কে যৌথ বিবৃতি প্রদান করা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয় বলে জামায়াত মনে করে। এর মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন, যা তার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করে।’
লন্ডন বৈঠকের যৌথ বিবৃতিতে মধ্য ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। জামায়াত এ প্রসঙ্গে বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা মনে করি দেশে ফিরে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টার অভিমত প্রকাশ করাই সমীচীন ছিল।’
জামায়াত ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিরোধী নয় বিবৃতিতে স্পষ্ট করা হয়। এতে বলা হয়েছে, ‘গত ১৬ এপ্রিল জামায়াত আমির দলীয় দৃষ্টিভঙ্গী তুলে ধরে জানিয়েছিলেন ২০২৬ সালের রসজানের পূর্বে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হতে পারে।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘জামায়াত মনে করে সরকার প্রধান হিসেবে কোনো একটি দলের সঙ্গে যৌথ প্রেস ব্রিফিং নৈতিকভাবে কিছুতেই যথার্থ নয়। প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতি দেওয়ায় আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার বিষয়ে জনগণের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল সক্রিয়ভাবে বিদ্যমান, সেখানে শুধু একটি দলের সঙ্গে আলাপে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সঠিক বলে বিবেচিত হতে পারে না। জামায়াত আশা করে, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার নিরপেক্ষ থেকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবে এবং বিচার ও সংস্কারের ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করবে। সরকারের নিরপেক্ষতা এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে যে সংশয় দেখা দিয়েছে তা নিরসনে প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকা জাতির সামনে স্পষ্ট করার জন্য বাংলাদেশ জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।’
এর আগে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের দিন জামায়াত আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না জানালেও দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা সমকালকে বলেছিলেন, ‘জামায়াতই প্রথম বলেছে, রমজানের আগে নির্বাচন হওয়া উচিত। তাই নির্বাচনের যে নতুন সময়সীমা বলা হচ্ছে, এ নিয়ে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু সরকার যেভাবে শুধু বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করে সময়সীমা নির্ধারণ করেছে, তা অগ্রহণযোগ্য।’
জামায়াত নেতারা শুক্রবার রাতেই সমকালকে বলেছিলেন, যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে বোঝানো হচ্ছে– সরকার এবং বিএনপি সমশক্তি। এর পর আর সরকারের নিরপেক্ষতা থাকে না। এ বক্তব্য ড. ইউনূসকে জানাবে জামায়াত।