ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে আদর্শ মানেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। রিয়াল মাদ্রিদে তার যোগ দেওয়ার পেছনেও রোনালদোর প্রভাব কম নয়। এবার সেই রোনালদোরই রেকর্ড ছুঁলেন ফরাসি তারকা। লেগানেসের বিপক্ষে জোড়া গোল করে রিয়ালকে দারুণ এক জয় এনে দিলেন এমবাপ্পে।  

সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ম্যাচের ৩২ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে রিয়ালকে এগিয়ে দেন এমবাপ্পে। তবে সেই লিড এক মিনিটের বেশি ধরে রাখতে পারেনি স্বাগতিকরা। ৩৩ মিনিটে ডিয়েগো গার্সিয়ার গোলে সমতা ফেরায় লেগানেস। বিরতিতে যাওয়ার আগেই চমক দেখায় অতিথিরা। ৪১ মিনিটে দানি রাবার গোলে ২-১ ব্যবধানে লিড নেয় লেগানেস। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ঘুরে দাঁড়ায় রিয়াল। ৪৭ মিনিটে জুড বেলিংহামের দুর্দান্ত গোল রিয়ালকে ফেরায় ম্যাচে। ২-২ সমতা নিয়ে এগোতে থাকে খেলা। ম্যাচের ৭৬ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোল করে রিয়ালের জয় নিশ্চিত করেন এমবাপ্পে।

এই জোড়া গোলের মাধ্যমে নিজের প্রথম মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৩৩ গোলের মাইলফলকে পৌঁছালেন এমবাপ্পে। এই কীর্তি গড়তে তার লেগেছে ৪৪ ম্যাচ। ২০০৯-১০ মৌসুমে রোনালদোও রিয়ালে প্রথম বছরে ৩৩ গোল করেছিলেন। তবে মৌসুমের অনেকটা সময় বাকি থাকায় এমবাপের সামনে রোনালদোকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে।  

রোনালদোর পাশে নাম লেখানো নিয়ে উচ্ছ্বসিত এমবাপে বলেন, ‘এই ম্যাচটি আমার জন্য বিশেষ কিছু। রোনালদোর সমান গোল করা গর্বের বিষয়। আমরা সবাই জানি, রিয়াল মাদ্রিদে রোনালদো কতটা গুরুত্বপূর্ণ! আমাদের মাঝে কথাও হয়, তিনি আমাকে পরামর্শ দেন। তবে শুধু গোল করলেই হবে না, শিরোপাও জিততে হবে।’  

এমবাপ্পের পারফরম্যান্সে মুগ্ধ রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তি। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘সে দারুণ খেলছে, পার্থক্য গড়ে দিচ্ছে, আর এটাই আমরা তার থেকে চাই।’  

এই জয়ে ২৯ ম্যাচে ৬৩ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকা বার্সেলোনার পাশে বসেছে রিয়াল। তবে এক ম্যাচ কম খেলে ৬৩ পয়েন্ট নিয়ে এখনো শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে বার্সা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক ল য় ন এমব প প ন এমব প প গ ল কর

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনায় এক মাসে ১৩ লাশ উদ্ধার, বাড়ছে উদ্বেগ

বাড়িতে ঝগড়া চলছিল বড় ভাই ও ভাবির। ছোট ভাই এসে ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বড় ভাই ছোট ভাইয়ের মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ধারালো বঁটি দিয়ে ছোট ভাইকে হত্যা করেন। পরে বড় ভাই শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩০ মে, খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের উলা গ্রামে।

এর আগে ২৭ মে কয়রার ইসলামপুর গ্রামের কয়রা নদীর চর থেকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় আবদুল মজিদ (৬২) নামের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ৮ জুন কয়রার কাছারিবাড়ি বাজার-সংলগ্ন পুকুর থেকে নমিতা (৪০) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

১০ জুন কয়রা সদরের গোবরা সড়কে এক ভ্যানচালকের সঙ্গে এক মোটরসাইকেলচালকের কথা-কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অন্তত ১৫ জন। ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলাও হয়েছে। এ ছাড়া কথা-কাটাকাটির জেরে কয়রার পল্লীমঙ্গল গ্রামে গত তিন দিনে কয়েক দফা মারামারি, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

অসন্তোষ-দ্বন্দ্বের জেরে কয়রা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা–সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ১০ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত এক মাসে খুলনার ১০টি থানা এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ ১৩টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।

কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান কমে যাওয়ায় মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। মূল্যবোধ ও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব ও ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। এতে খুনখারাবি বাড়ছে। একসময় সমাজের একজনের ভালোতে সবাই আনন্দ পেতেন। নেতিবাচক দিকগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতেন। এখন সেই ব্যবস্থা উঠেই গেছে বলা যায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে প্রভাববলয় সৃষ্টি করতেও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।

৩ জুন খুলনা শহরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সবুজ হাওলাদার (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ৪ জুন খুলনা সদর থানার মতিয়াখালী খালের মধ্যে আটকে ছিল এক নারীর মরদেহ। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ওই নারীর পরিচয় না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুলে দাফন করা হয়। গত ৯ জুন বিকেলে রূপসা উপজেলার আঠারোবেকী নদীতে পাওয়া যায় অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ। মরদেহের শ্বাসনালিতে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। রূপসা নৌ পুলিশের ওসি আবুল খায়ের বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড।

এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রহস্য উদ্‌ঘাটন ও অপরাধী শনাক্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই অপরাধ বেড়ে চলেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি তরিকুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে। আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধ বেড়ে চলেছে।

কয়রা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে, এটা ঠিক। তবে প্রতিটি ঘটনায় পুলিশও তাৎক্ষণিকভাবে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যে বিষয়গুলো পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্য দিয়ে সমাধান করা যায়, সেখানে খুনাখুনি, অস্থিরতা, মামলা-হামলার মধ্য দিয়ে একধরনের বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে; যা সবার জন্যই অকল্যাণকর ও ভয়ানক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ