বছরজুড়ে ঢাকাই সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটে। ব্যতিক্রম শুধু দুই ঈদ। এই দুই উৎসবে সিনেমাপ্রেমীরা তাদের প্রিয় তারকার সিনেমা দেখতে হলে ভিড় জমায়। ফলে সিনেমা হল হয়ে ওঠে সরব। এই ঈদুল ফিতরে আসছে ছয়টি ভিন্নধর্মী সিনেমা, যার প্রতিটি দর্শকদের নতুন অভিজ্ঞতা দেবে বলে মন্তব্য ছবিগুলোর নির্মাতাদের। অ্যাকশন, থ্রিলার, হরর– সব ধরনের মসলাই থাকছে এবারের মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলোতে। পরিচালকদের ভিন্ন ভিন্ন নির্মাণশৈলী ও চমকপ্রদ কাস্টিং এই সিনেমাগুলোর প্রতি দর্শকদের আগ্রহ বাড়িয়ে তুলেছে। একনজরে দেখে নেওয়া যাক ঈদের ছয়টি সিনেমা ও এগুলোর বিশেষ দিক–
ধুন্ধুমার অ্যাকশনে ভরপুর ‘বরবাদ’
এবারের অ্যাকশনপ্রেমীদের জন্য থাকছে বড় বাজেটের ‘বরবাদ’ সিনেমাটি। তরুণ পরিচালক মেহেদি হাসান হৃদয় এ ছবির মাধ্যমে দর্শকদের উপহার দিচ্ছেন এক ভিন্নধর্মী গল্প। ছবিটি মূলত রিভেঞ্জ থ্রিলার ঘরানার, যেখানে প্রতিশোধ ও প্রতারণার এক জটিল খেলায় জড়িয়ে পড়বে চরিত্ররা। সিনেমাটির মূল আকর্ষণ শাকিব খান। তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেছেন কলকাতার ঈধিকা পাল। এতে আরও অভিনয় করেছেন যিশু সেনগুপ্ত, মিশা সওদাগর, শহীদুজ্জামান সেলিম, ফজলুর রহমান বাবু প্রমুখ। ছবিটি নিয়ে বেশ আশাবাদী নির্মাতা।
বখে যাওয়া প্রেমিক ও স্টাইলিশ থ্রিলার গল্পে জংলি
‘জংলি’ ছবিটি পরিচালনা করেছেন এম রাহিম, যিনি এর আগে ‘শান’ সিনেমা দিয়ে দারুণ সাড়া ফেলেছিলেন। সিনেমাটি অ্যাকশন ও সাসপেন্সের সংমিশ্রণে তৈরি হয়েছে, যেখানে গল্পের বাঁকবদল দর্শকদের চমকে দেবে। স্টাইলিশ ভিজ্যুয়াল ও রোমাঞ্চকর কাহিনির জন্য সিনেমাটি তরুণ দর্শকদের ভালো লাগবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন নির্মাতা। এতে অভিনয় করেছেন সিয়াম আহমেদ, শবনম বুবলী, প্রার্থনা ফারদিন দীঘি।
দাগি আসামির নতুন পরীক্ষা
ছোট পর্দায় একের পর এক হিট সিরিজ উপহার দেওয়ার পর জনপ্রিয় নির্মাতা শিহাব শাহীন এবার ঈদে হাজির হচ্ছেন ‘দাগি’ সিনেমা নিয়ে। থ্রিলারধর্মী এই সিনেমার গল্প সমাজের অন্ধকার দিক ও রহস্যময় ঘটনার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। শিহাব শাহীন তাঁর নির্মাণশৈলীর জন্য বরাবরই প্রশংসিত, তাই ‘দাগি’ দর্শকদের জন্য এক ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা হতে পারে। এতে অভিনয় করেছেন আফরান নিশো, তমা মির্জা, সুনেরাহ বিনতে কামাল প্রমুখ। এই সিনেমার ব্যতিক্রমী প্রচারণা সবার নজর কেড়েছে। এতে নিশোকে দেখা গেছে দাগি আসামির বেশে।
রহস্যে মোড়ানো হরর ইউনিভার্স ‘জ্বীন থ্রি’
বাংলাদেশে হরর সিনেমার জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার আসছে ‘জ্বীন থ্রি’। জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রযোজনায় তৈরি এই সিনেমা আগের দুটি পর্বের মতোই ভয় ও রহস্যে মোড়ানো। আধুনিক ভিএফএক্স ও ভয়াবহ সিনেমাটোগ্রাফি ব্যবহার করে নির্মিত হওয়ায় এটি দর্শকদের মাঝে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। ছবিটির এবারের পর্বে অভিনয় করেছেন নুসরাত ফারিয়া, সঙ্গে আছেন সজল। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন কামরুজ্জামান রোমান।
সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার গল্পে চক্কর
একটি অপরাধ, একাধিক সন্দেহভাজন ও এক রহস্যময় গল্প– এই থিম নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘চক্কর’। পরিচালক শরাফ আহমেদ জীবন ইতোমধ্যে ক্রাইম-থ্রিলার ঘরানায় বেশ পরিচিত। ‘চক্কর’ সেই ধারায় নতুন সংযোজন হতে চলেছে। এই সিনেমায় রয়েছে রহস্য, সাসপেন্স এবং মানসিক টানাপোড়েন, যা দর্শকদের শেষ পর্যন্ত ভাবিয়ে তুলবে বলে মন্তব্য নির্মাতার। তিনি আরও বলেন, ‘চক্কর মানবিক স্পর্শের গল্প। সরকারি অনুদানের সঙ্গে আরও বাজেট যুক্ত করে বড় আয়োজনে সিনেমাটি বানানোর চেষ্টা করেছি।’ সিনেমায় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম। এতে মইনুল নামে একজন গোয়েন্দা পুলিশের চরিত্র রয়েছে। এই চরিত্রই করছেন মোশাররফ করিম। তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেছেন রিকিতা নন্দিনী শিমু।
পারিবারিক গল্পের ‘অন্তরাত্মা’
পারিবারিক গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘অত্নরাত্মা’। এতে অভিনয় করছেন শাকিব খান ও কলকতার দর্শনা বনিকসহ অনেকেই। ঈদ সিনেমার তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে সিনেমাটি। এটি পরিচালনা করেছেন ফেরারী ফরহাদের গল্পে এটি পরিচালনা করেছেন ওয়াজেদ আলী সুমন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঈদ র স ন ম এই স ন ম র জন য রহস য
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।