মিসর ও কাতারের কাছ থেকে পাওয়া গাজা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে হামাস। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠনটির প্রধান খলিল আল–হায়া গত শনিবার জানিয়েছেন, দুই দিন আগে মধ্যস্থতাকারী মিসর ও কাতারের কাছ থেকে যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাব পেয়েছেন তাঁরা। এ প্রস্তাবে তাঁরা ইতিবাচক সম্মতি দিয়েছেন। টেলিভিশনে দেওয়া এক বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

হায়া বলেন, ‘আমরা আশা করি, দখলদার ইসরায়েল এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করবে না।’

হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরোক্ষ আলোচনায় হামাসের আলোচক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন খলিল আল–হায়া।

একটি নিরাপত্তা সূত্র বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ইসরায়েলের কাছ থেকে ইতিবাচক ইঙ্গিত পেয়েছে মিসর। এ প্রস্তাবের মধ্যে বিভিন্ন রূপান্তরের ধাপ রয়েছে। প্রস্তাবে প্রতি সপ্তাহে হামাসের পক্ষ থেকে পাঁচজন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি যুক্ত রয়েছে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, মধ্যস্থতাকারীদের নতুন প্রস্তাব নিয়ে তারা কয়েক দফা আলোচনা করেছে। এরপর ইসরায়েলের পক্ষ থেকে একটি পাল্টা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলের নতুন প্রস্তাবের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে।

ধাপে ধাপে যুদ্ধবিরতি

গাজায় ১৫ মাস ধরে নির্বিচার হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এই যুদ্ধ বন্ধে প্রথম যুদ্ধবিরতি গত ১৯ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়। এ সময় হামাসের পক্ষ থেকে কয়েকজন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হয়। ইসরায়েলও কয়েক শ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেয়। তিন ধাপের যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি ও গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি যুক্ত ছিল। হামাস বলছে, যেকোনো প্রস্তাবে দ্বিতীয় ধাপে যুদ্ধবিরতির বিষয়টি যুক্ত থাকতে হবে। অন্যদিকে ইসরায়েল প্রথম ধাপে ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতির বিষয়টি আরও বাড়াতে চায়।

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে হামাসের পরিপূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ বিষয়টি চাওয়া হচ্ছে। এর জবাবে হায়া বলেন, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ হচ্ছে চূড়ান্ত রেখা। যতক্ষণ ইসরায়েলি দখলদারত্ব বিদ্যমান থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত হামাসকে নিরস্ত্রকরণ করা যাবে না।

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, যুদ্ধপরবর্তী গাজা পুনর্গঠনে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকতে পারবে না।

ইসরায়েলি হামলা চলছে

যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার কথা চললেও গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শনিবার ইসরায়েলি হামলায় আরও ২০ জন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা জেইনা ও রাফা এলাকায় স্থল অভিযান শুরু করেছে।

১৮ মার্চ প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ইসরায়েল বলছে, হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্তিতে চাপ দিতে তারা এ হামলা শুরু করেছে। এ ছাড়া সেখানে ত্রাণসহায়তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া গাজার বেশ কিছু এলাকা খালি করার নির্দেশ দিয়েছে তারা। এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশ নারী ও শিশু।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। এতে ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। এ ছাড়া বন্দী করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয় ২৫১ জনকে। এর পর থেকে গাজায় পাল্টা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল।

নেতানিয়াহুর দাবি

নেতানিয়াহু গতকাল রোববার দাবি করেছেন যে গাজায় হামাসের ওপর ইসরায়েলের তীব্র সামরিক চাপ কার্যকর হয়েছে। তিনি মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলেন, হামাসকে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে।

নেতানিয়াহু এমন সময়ে এই মন্তব্য করলেন যখন মধ্যস্থতাকারীরা জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নেতানিয়াহু বলেন, অস্ত্র সমর্পণ করে হামাসের নেতাদের গাজা ছেড়ে চলে যেতে হবে। ইসরায়েল গাজার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বেচ্ছাসেবী অভিবাসন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।

দায়িত্ব গ্রহণের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজার ২০ লাখের বেশি বাসিন্দাকে প্রতিবেশী মিসর ও জর্ডানে স্থানান্তরিত করার একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেশির ভাগ এ ঘোষণার নিন্দা জানায়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ইসর য় ল ইসর য় ল র র ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলের ৯ ভবন ধ্বংস করল ইরান

ইসরায়েলের হামলার জবাবে নতুন করে ইরানের চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর জেরুজালেম ও তেল আবিবে বড় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এতে একজন নিহত এবং প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। পাশাপাশি অন্তত নয়টি ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে।

ইসরায়েলের হারেৎজ সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র তেল আবিবের কেন্দ্রস্থলে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় একটি উঁচু ভবনে আঘাত হানায় ভবনটির নিচের এক-তৃতীয়াংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তেল আবিবের শহরতলির রামাত গানেও নয়টি ভবন ধ্বংস হয়েছে।

ইরান দেড় শতাধিক মিসাইল ছুঁড়েছে বলেও জানিয়েছে সংবাদপত্রটি। এদিকে কিছুক্ষণ আগে (বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টার দিকে) জেরুজালেমের আকাশে ফের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের একটি নতুন ঢেউ ইসরায়েলের দিকে এগিয়ে আসছে। ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েল রাষ্ট্রের দিকে আরও একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। আইডিএফ এর আগে নতুন করে হামলার বিষয়ে সতর্ক করেছিল এবং বলেছিল যে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কার্যকর রয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে এই হামলায় হতাহতের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার ভোররাতে ইরানে হামলা শুরু করে দখলদার ইসরায়েল। নৃশংস এই হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, বিজ্ঞানীসহ অন্তত ৭৮ জন নিহত হয়েছে। দখলদার বাহিনীর হামলায় আহত হয়েছেন তিন শতাধিক মানুষ। এই হামলার উপযুক্ত জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে ইরান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইসরায়েলের ৯ ভবন ধ্বংস করল ইরান