সন্তানের স্মৃতি ও শোকের বোঝাই এবারের ঈদে সম্বল মাগুরার শ্রীপুরের জারিয়া গ্রামে ধর্ষণের শিকার হয়ে মারা যাওয়া শিশুটির পরিবারে। সবাই যখন ঈদের আনন্দে মেতে আছেন, তখন শিশুটির বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। পুরনো কথা মনে করে শুধুই কান্না করছেন মা আয়েশা আক্তার।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে শিশুটির মা বলেন, পরিবার থেকে যদি একটা বাচ্চা চলে যায়, তার মা–বাবা কি কোন দিন ঈদ করতে পারে। আমি মা হয়ে কিভাবে ঈদ করব। তবে ঈদের দিনে শিশুটির প্রিয় খাবার ছিল খিঁচুরি, এই খাবার সে অনেক পছন্দ করত।

প্রতিবেশিরা জানান, শিশুটির পরিবার গরীব। মেয়ের শোকে ঈদ আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে গোটা পরিবারে। শিশুটির মায়ের কান্না যেন থাকছেই না। বছর ঘুরে ঈদ আসলেও মেয়েটি মারা যাওয়ায় বাবাও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। চিকিৎসার জন্য তাকে নেওয়া হয়েছে ঢাকায়। প্রতিবেশিরাই তার খোঁজ-খবর রাখছে। 

বড় বোন হামিদা সমকালকে বলেন, ঈদের আগের চাঁদ রাতে তার হাতে মেহেদি রঙে দুই হাত রাঙিয়ে  দিতাম। সে নেই। তার জন্য মন খারাপ। ঈদের দিন ছোট বোনের সঙ্গে অনেক মজা করেছি। আমরা দুই বোন একসঙ্গে ঘুরতে যেতাম। আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যেতাম।

প্রসঙ্গত, মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে গত ৬ মার্চ ধর্ষণের শিকার হয় আট বছরের এক শিশু। ঘটনার পর তাকে প্রথমে মাগুরা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে আনা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় ফদিরপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেও তার অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি। পরে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে শিশুটিকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ মার্চ সে মারা যায়। এ ঘটনায় শিশুটির বড় বোনের শ্বশুর হিটু শেখকে প্রধান করে চারজনের নামে মামলা করেন শিশুটির মা আয়েশা আক্তার। এরই মধ্যে রিমান্ডে প্রধান আসামি হিটু শেখ আদলতে ধর্ষণের কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব র অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ