রাজধানীর মিরপুর-১০ এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী রাফিকা সুলতানা। আজ দুপুরে ছয় বছরের ছেলে নিহানুজ্জামানকে নিয়ে এসেছেন শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সেখানে চলছে বিশেষ ‘ঈদ আনন্দমেলা’ । 

 প্রায় দেড় ঘণ্টা মেলা ঘুরে গৃহিণী রাফিকা সুলতানা উচ্ছ্বাসের কথা জানালেন। তিনি বলেন, ঈদের বন্ধে সময় কাটাতে এখানে এসে খুবই ভালো লাগছে। মেলায় ঢুকতে টিকিট নেই, ভিড় কম; বাচ্চাদের খেলার জায়গাও রয়েছে। সব মিলিয়ে আমিও খুশি, ছেলেও খুশি। 

রাফিকা সুলতানা যখন এ কথা বলছিলেন, তখন মেলা প্রাঙ্গণে আরও ১৫-১৬টি শিশু খেলাধুলা করছিল। একটু দূরে তাদের অভিভাবকেরাও দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁরাও জানালেন, বাসার ছোটদের এখানে ঘুরতে নিয়ে এসে ভালোই সময় কাটছে তাঁদের। একই সঙ্গে পছন্দের কিছু পণ্য কেনারও সুযোগ পাচ্ছেন। 

 দুই দিনব্যাপী ঈদ আনন্দমেলার আজ শেষ দিন। গতকাল সোমবার সকালে মেলা শুরু হয়েছে। চলবে আজ সন্ধ্যার পর পর্যন্ত। গতকাল মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপস্থিতিও ছিল অনেক বেশি। ফলে সন্ধ্যার পর একপর্যায়ে ওই এলাকায় যানজট হয়।

 মেলায় বিভিন্ন খাতের এসএমই উদ্যোক্তার ২০০টির বেশি স্টল আছে। স্টল বরাদ্দের ক্ষেত্রে খাদ্য, অলংকার, খেলনা প্রভৃতি পণ্যকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শিশুদের বিনোদনের জন্য মেলা প্রাঙ্গণে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পাপেট, নাগরদোলা ও খেলার সামগ্রী।

মেলার আয়োজক ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। সংস্থাটি জানিয়েছে, ঈদ কেন্দ্র করে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে রাজধানীতে এ ধরনের মেলা এই প্রথম আয়োজন করা হয়েছে। 

 আজ দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিন দেখা যায়, মেলা দেখতে কয়েক শ মানুষ এসেছেন। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগ গতকাল টেলিভিশন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মেলার বিষয়ে খবর জেনেছেন।

কেউ কেউ পরিচিতদের মাধ্যমে খবর জেনে মেলায় এসেছেন। কিছু মানুষ এমনি এমনি এসেছেন, নিছক ঘোরাঘুরি করতে; কিন্তু যে যেভাবেই মেলায় আসুন না কেন, সবাই আনন্দের কথা জানিয়েছেন। 

 গাজীপুর জেলা থেকে ঢাকায় আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে এসেছেন স্কুলশিক্ষক সুমি আক্তার। আজ দুপুরে তিনি ছোট ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে মেলায় আসেন। প্রথম আলোকে সুমি আক্তার বলেন, ‘গতকাল বাসায় মেলার খবর দেখেছে ছেলে-মেয়ে। এর পর থেকে মেলায় আসার জন্য ওরা অধীর হয়ে ছিল। সে জন্য আজ ওদের নিয়ে এসেছি।’ 

  বিক্রেতাদের মূল কাজ নেটওয়ার্কিং

 ডিএনসিসির আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ মেলায় দুই শতাধিক স্টল আছে।  যদিও কিছু স্টল খালি দেখা গেছে।

যাঁরা এসেছেন, তাঁরা পণ্য বিক্রির চেয়ে নেটওয়ার্কিং বা যোগাযোগ বৃদ্ধিতে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

যেমন ‘হাতে বোনা নকশা’ নামের এক ফেসবুকভিত্তিক উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান মেলায় হাতে কাজ করা পোশাক, কাঁথা, বালিশের কাভার প্রভৃতি পণ্য নিয়ে এসেছেন।

 এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা আইরিন গোমেজ বলেন, ঈদের মধ্যে বেচাকেনা মূল লক্ষ্য নয়। অন্যান্য উদ্যোক্তা আসছেন এবং ক্রেতারাও আসছেন। ফলে ঈদের আনন্দ উদ্যোক্তাদের মধ্যে ভাগাভাগি হচ্ছে, ক্রেতাদের সঙ্গেও নেটওয়ার্কিং হচ্ছে। 

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গতকাল ঈদের দিন দুপুরের পর মেলায় ভালোই ভিড় ছিল। সে তুলনায় আজ সকাল থেকে ভিড় কমই দেখা গেছে। বিক্রেতাদের আশা, বিকেল থেকে মানুষের ভিড় বাড়বে। 

মন বুটেক্স অ্যান্ড ভ্যারাইটিজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী শাহরিন তাসনিম বলেন, ‘গতকাল ঈদের দিন হিসেবে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছিল। আশা করছি আজও ভালো বিক্রি হবে। ঈদের পরদিন সকালবেলা অনেকেই আত্মীয়স্বজনের বাসায় যান, তাই সকাল থেকে মানুষের উপস্থিতি কিছুটা কম। বিকেল হতে হতে মানুষের আগমন অনেকটা বাড়বে বলে আশা করছি।’  

 মেলায় বেচাকেনা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন লুসি'স ক্রিয়েশন নামের হাতে গয়না ও ব্যাগ তৈরির প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা লুসি অন্তি রায়। তিনি বলেন, গতকাল সারা দিনই মোটামুটি ভিড় ছিল। বিক্রি হয়েছে ২০ হাজার টাকার বেশি পণ্য। ঈদের সময় এক দিনের হিসাবে এটি ভালোই বিক্রি। আশা করছি আজ বিক্রির পরিমাণ আরও বাড়বে। 

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এস ছ ন আনন দ গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের

এমন পারফরম্যান্সই তো চাওয়ার থাকে ভালো দলের কাছে। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য, সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি, তাইজুল ইসলামের ৯ উইকেট শিকারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট হারের পর যে সমালোচনা হয়েছিল, তার জবাবটা বোধ হয় দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনে জিতে দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ‘বাউন্স ব্যাক’ করে সিরিজ ড্র ১-১-এ।

চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। এটি সম্ভব হয়েছে পছন্দের উইকেটে খেলা হওয়ায়। স্পিন ভুবনে উইকেট উৎসব করেছেন তাইজুল, মিরাজ গাঁটছড়া বেঁধে। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি দারুণ অর্জন অধারাবাহিক ব্যাটিং লাইনআপের। এই টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো করেছে। লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই সঙ্গ দেন সাদমানকে। লোয়ার মিডলঅর্ডারে মিরাজের লড়াই ছিল দেখার মতো।

টেলএন্ডারদের নিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। শেষ ৩ উইকেটে তৃতীয় দিন ১৫৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৪৪৪ রানে। ২১৭ রানের লিড থাকায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন পূরণ হয়। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর। 

গত বছর দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুটাও ভালো ছিল না। সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামে জিততেই হতো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কন্ডিশনেও পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে খেলা হয় দ্বিতীয় টেস্ট। যেখানে শাসন ছিল স্পিনারদের। পছন্দের উইকেট পাওয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তিনজনই দারুণ বোলিং করেন প্রথম থেকে।

দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিং করে গেছেন। বেশি উইকেট না পেলেও এক প্রান্তে ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন। যার সুফল তাইজুল ও মিরাজ পেয়েছেন অন্য প্রান্তে। প্রথম দিন শেষ সেশনে ব্রেক থ্রু দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার পরে পিক করে ৬ উইকেট শিকার করেন। জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে প্রথম দিন শেষ করে। পরের দিন এক বল খেলে ওই রানেই অলআউট হয়। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে বড় লক্ষ্য নিয়ে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি করায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ হয়। সাদমানের সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম কিছু রান করায় ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।

সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাদমান আশা প্রকাশ করেন, মিরাজ ও তাইজুল জুটি করবেন। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি দু’জনের। বেশি ভালো করেছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজের সঙ্গে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি। অভিষেক টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং দারুণ লেগেছে অধিনায়ক শান্তর কাছে। ৮০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মাথায় বল লাগার পরও বিচলিত হননি তিনি। মিরাজ ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রাপ্তি হিসেবে ওপেনিং জুটির ভালো খেলা, সাদমানের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ৫ উইকেট শিকার ও সাকিবের রান করাকে মনে করেন শান্ত। 

শেষের তিন উইকেটে তৃতীয় দিন প্রায় দুই সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ। তাইজুল, সাকিব ও হাসানকে নিয়ে ১৫৩ রান যোগ করে। মিরাজ ১০৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে উইকেট দেন। নার্ভাস নাইটির ঘরে প্রবেশ করে কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিলেন মিরাজ। ৯৮ রানে পৌঁছানোর পর সেঞ্চুরি ছুঁতে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল চলে যাওয়ায় এক রানে থামতে হয়। তখন স্ট্রাইকে হাসান থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কখন হাসান আউট হয়ে যায়, সে ভয় কাজ করছিল হয়তো। কিন্তু হাসান ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাসাকাদজাকে ডিফেন্স করে স্বস্তি দেন।

মিরাজ স্ট্রাইকে এসে মেদেভেরের প্রথম দুই বলে ঝুঁকি নেননি। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ। প্রথম ম্যাচের উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট করে ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে অতীতের সব পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটপ্রাপ্তি, দুই হাজার রানের মাইলফলক পেয়েছেন। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২১৭ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফ্লাডলাইটের আলো জ্বেলে নির্ধারিত সময়ের বেশি খেলান আম্পায়াররা। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা হয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা তাতে আপত্তি করেননি। তাইজুল ৩, নাঈম ১ ও মিরাজ ৫ উইকেট নিলে ম্যাচ শেষ হয়।  

সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জেতার পরও খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘আমি টেস্ট সিরিজ ড্র করে খুশি না। কারণ, প্রথম টেস্টে আমরা একেবারেই ভালো খেলিনি। এই টেস্টে একপেশে খেলে জিতলেও সিরিজে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। সিরিজটি জিততে হতো।’ টাইগার দলপতি জানান, এই পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফরে কাজে দেবে। দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বিদেশে খেলার পরিবেশ তৈরি করছিল বিসিবি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। কিউইদের বিপক্ষে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেলেও মিরপুর থেকে হারতে শুরু করে। দেশের মাটিতে টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ