দুই ‘সন্ত্রাসীর বিরোধে’ জোড়া খুন, হুকুমের আসামি ছোট্ট সাজ্জাদ ও তাঁর স্ত্রী
Published: 1st, April 2025 GMT
চট্টগ্রামের দুই ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ ও সারোয়ার হোসেনের বিরোধের জের ধরে আলোচিত জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার তিন দিন পর দায়ের করা মামলায় খুনের কারণ সম্পর্কে এই অভিযোগ করেছে বাদীপক্ষ।
গত শনিবার মধ্যরাতে প্রাইভেট কারে এলোপাতাড়ি গুলি করে দুজনকে খুন করার ঘটনায় ছোট সাজ্জাদ ও তাঁর স্ত্রী তামান্না শারমিনকে হুকুমের আসামি করে মামলা করেছেন নিহত মোহাম্মদ মানিকের মা ফিরোজা বেগম। মঙ্গলবার দুপুরে নগরের বাকলিয়া থানায় এ মামলা করা হয়। মামলার আসামি করা হয়েছে অপর পাঁচজনকে, যারা সরাসরি খুনের ঘটনায় অংশ নিয়েছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে তাঁদের নাম জানা যায়নি। মামলার হুকুমের আসামি সাজ্জাদ গত ১৫ মার্চ গ্রেপ্তার হয়ে দুটি খুনের মামলায় রিমান্ডে আছেন বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুনগুলিতে ঝাঁঝরা প্রাইভেট কার, কী ঘটেছিল মধ্যরাতে৩০ মার্চ ২০২৫মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নগরের বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইখতিয়ার উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সাজ্জাদ ও তাঁর স্ত্রীকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে। অন্য পাঁচজন সরাসরি খুনের ঘটনায় অংশ নিয়েছেন বলে এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে। মূলত সাজ্জাদ ও সারোয়ার হোসেনের বিরোধের জের ধরে এই খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করেছে বাদীপক্ষ।
এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার বা আটক করা যায়নি। তবে আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের কর্মকর্তারা।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে রুপালি রঙের একটি প্রাইভেট কার কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে বাকলিয়া অ্যাকসেস রোডে আসতে থাকে। গাড়িটি শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে কিছু দূর যাওয়ার পর পেছন থেকে তিন-চারটি মোটরসাইকেল সেটিকে ধাওয়া করে। একপর্যায়ে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। প্রাইভেট কারের ভেতর থেকেও মোটরসাইকেল আরোহীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। পেছন ও পাশ থেকে গুলি ছোড়া হয় গাড়িতে। গুলিতে অনেকটা ঝাঁজরা হয়ে যায় গাড়িটি। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাইভেট কারের দুই আরোহী নিহত হন। তাঁরা হলেন গাড়িচালক মোহাম্মদ মানিক ও আরোহী আবদুল্লাহ।
এই ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া গাড়ির আরোহী রবিউল ইসলাম প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, চান্দগাঁও এলাকার বাসিন্দা সারোয়ার হোসেনের ডাকে তাঁরা অক্সিজেন থেকে নতুন ব্রিজ বালুর টাল এলাকায় গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে হামলার মুখে পড়েন। হামলাকারীদের চিনতে না পারলেও সম্প্রতি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেনের লোকজন এর সঙ্গে জড়িত বলে ধারণা করছেন রবিউল। তিনি বলেন, সাজ্জাদের সঙ্গে সারোয়ারের সম্ভবত আগে থেকে দ্বন্দ্ব ছিল। সম্প্রতি সাজ্জাদের গ্রেপ্তার এবং এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝামেলা বেড়েছে। তাই সাজ্জাদের লোকজন সারোয়ারকে খুন করতে এ হামলা চালাতে পারে।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সারোয়ার হোসেন। ৫ আগস্টের পর জামিনে মুক্তি পান তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে ১৬টি হত্যা, অস্ত্র ও চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে।
একটি সূত্র জানায়, ১৫ মার্চ ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়ায় আকরাম নামের এক ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে প্রাইভেট কারে গুলি করা হয়। আকরামের ব্যবহৃত গাড়ি ও এই গাড়ির রং একই। সাজ্জাদকে ধরিয়ে দেওয়ার পর হুমকির ঘটনায় আকরামের স্ত্রী রুমা আক্তার বাদী হয়ে মামলা করেছিলেন। এতে সাজ্জাদের স্ত্রী, হাসানসহ কয়েকজনকে আসামি করা হয়।
স্ত্রীর পর সাজ্জাদের নানি রেহেনা বেগমও তাঁর নাতির বিরোধিতাকারীদের মারার হুমকি দিয়েছেন। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আগে গোপনে মারতাম, এখন ওপেন মারব।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অফিসে আপনি কি ১১ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন
প্ল্যান ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা নিয়ে চলছে আলোচনা। সেখানে দুই হাজার ফুলটাইম কর্মজীবীর ওপর একটা জরিপ পরিচালনা করা হয়। পেশাগত কাজ বা চাপের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে পরিচালিত গবেষণাটি থেকে পাওয়া গেছে চমকপ্রদ তথ্য।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, যাঁরা কর্মক্ষেত্রে ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি কাজ করেন, তাঁদের খাদ্যাভ্যাস তুলনামূলকভাবে অস্বাস্থ্যকর, তাঁরা অন্যদের তুলনায় মানসিক চাপে ভোগেন বেশি। ঠিকমতো পানি খাওয়ার প্রবণতা কম। পরিবার, প্রকৃতি ও পোষা প্রাণীর সঙ্গে সময় কাটানোর প্রবণতাও কম। কম ঘুমান। আর যেকোনো মানসিক আঘাত থেকে সেরে ওঠার পর্যাপ্ত সময় বা সুযোগ পান না। এই মানুষেরাই বেশি হতাশায় ভোগেন।
শুধু তা-ই নয়, দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া এবং হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের মতো কার্ডিওভাস্কুলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি। যাঁরা ১১ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় অফিস করেন, তাঁদের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার সংখ্যাও অনেক।
আরও পড়ুন২৫ বছর ধরে অফিসে যাননি তিনি১৩ মার্চ ২০২৫যদি ১১ ঘণ্টা কর্মক্ষেত্রে থাকতেই হয়, তাহলে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেনরাতে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে। তাতে শরীর ও মস্তিষ্ক দিনের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের ধকল কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পাবে।
কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি নিন। সবুজের দিকে তাকান। ডেস্কে গাছ রাখতে পারেন। উঠে একটু হাঁটুন। ব্যায়াম করুন। সহকর্মীর সঙ্গে চা খেতে খেতে গল্প করুন। গবেষণা জানাচ্ছে, ছোট ছোট বিরতি কাজে মনোযোগ পুনঃস্থাপন করতে সাহায্য করে এবং কাজের গুণমান বাড়ায়।
দুপুরে খাওয়ার পর একটা ন্যাপ নিতে পারেন।
২ লিটারের একটা বোতলে পানি রাখবেন। প্রতিদিন ১ বোতল পানি অবশ্যই শেষ করবেন। তা ছাড়া পানি, শরবত, জুস, ডাবের পানি, তরমুজ, শসা, আনারস ইত্যাদি খাবেন। হাইড্রেটেড থাকলে এনার্জি ধরে রেখে কাজ করা সহজ হয়।
প্রক্রিয়াজাত খাবার, কার্বোনেটেড ড্রিংক, চিনিযুক্ত খাবার বাদ দিন। এসব কেবল আপনার ক্লান্তি বাড়াবে।
আর সম্ভব হলে কর্মক্ষেত্রে কথা বলে আপনার কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টায় নিয়ে আসতে পারলে তো কথাই নেই।
সূত্র: এনবিসি নিউজ
আরও পড়ুনঅফিসের বাড়তি কাজকে যেভাবে ‘না’ বলবেন১৩ মার্চ ২০২৫