চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে এবার খাল পরিষ্কারকাজে গতি
Published: 2nd, April 2025 GMT
চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট। নগরের জলাবদ্ধতাপ্রবণ এলাকার একটি। সিডিএ অ্যাভিনিউয়ের এক পাশে নালা সম্প্রসারণের জন্য ভাঙা হচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনা। এর মধ্যে যেসব জায়গা উদ্ধার করা হয়েছে, সেখানে পুরোনো সরু নালা সম্প্রসারণ করে নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে। আরেক জায়গায় চলছে নালা থেকে থেকে মাটি উত্তোলন। এসব কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকেরা। দ্রুত কাজ এগিয়ে নিতে রাখা হয়েছে ছয়টি খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর)।
প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণে কোমরসমান পানিতে তলিয়ে যায় বহদ্দারহাট মোড়সহ আশপাশের এলাকা। পানিনিষ্কাশনের পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় বৃষ্টির পানি আটকে যায় মোড়টিতে। এতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় প্রতিবছর। এ সমস্যা নিরসনে নালার প্রশস্ততা বাড়ানো এবং এই নালার মাধ্যমে দুটি খালের (চশমা ও মীর্জা খাল) সঙ্গে সংযোগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য নালার ওপর নির্মিত সিটি করপোরেশনের বিপণিবিতানসহ বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় এ কাজ করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেড। এখন পর্যন্ত এ প্রকল্পের কাজ হয়েছে ৮০ শতাংশ।
শুধু বহদ্দারহাট নয়, নগরের জলাবদ্ধতাপ্রবণ এলাকাগুলোর নালা–নর্দমা ও খালগুলোর সম্প্রসারণ, খনন ও ময়লা–আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ শুরু হয়েছে। এবার বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, সিডিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ শুরু করেছে। এতে হালকা বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতার সমস্যা থাকবে না বলে মনে করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ সহজে দূর হবে না বলে জানান তাঁরা। এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে আগ্রাবাদের শেখ মুজিব সড়কের বক্স কালভার্ট দ্রুত পরিষ্কার এবং নতুন খনন করা বাড়ইপাড়া খালের সঙ্গে চাক্তাই ও কর্ণফুলী নদীর সংযোগ দেওয়া জরুরি বলে পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এবার বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ঢাকা ও চট্টগ্রামে অন্তত পাঁচটি সভা হয়েছে। এসব সভায় নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রামের সেবা সংস্থাগুলোর করণীয় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য মে মাস পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এই তালিকা অনুযায়ী এখন কাজ চলছে।
চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৪ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে তিন সংস্থা। এর মধ্যে সিডিএ দুটি, সিটি করপোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি করে প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পগুলোর কাজ চলছে ৫ থেকে ১১ বছর ধরে। ইতিমধ্যে খরচ হয়েছে ৮ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। প্রকল্পগুলোর কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে দুটি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস প্রথম আলোকে বলেন, এবার জলাবদ্ধতাপ্রবণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে সেখানকার সমস্যা দূর করার বিষয়ে প্রাধান্য দিচ্ছেন তাঁরা। এর ভিত্তিতে বহদ্দারহাট, বাকলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় খালের প্রশস্ততা বাড়ানো এবং নতুন সংযোগ দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় কাজ চলছে। আর আগামী এপ্রিলের মধ্যে কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে যুক্ত খালগুলোয় জলকপাটের নির্মাণকাজ শেষ হবে। পাম্পও স্থাপন হয়ে যাবে। ফলে আগামী বর্ষা মৌসুমে নগরের বেশির ভাগ এলাকায় জোয়ারজনিত জলাবদ্ধতা সমস্যা থাকবে না।
বর্ষার আগেই প্রায় পরিষ্কার খাল
সম্প্রতি সরেজমিনে নগরের শুলকবহর এলাকায় মীর্জা খাল পরিষ্কার দেখা গেছে। তেমন ময়লা–আবর্জনা নেই। আর সুগন্ধা আবাসিক এলাকায় মীর্জা খালের এক অংশে সম্প্রসারণের কাজ চলছে। খাল প্রশস্ত করতে ভাঙা হচ্ছে পাশের ভবনের বর্ধিত অংশ। আরেক পাশে প্রতিরোধ দেয়ালের নির্মাণকাজ করছেন শ্রমিকেরা। কাজ করার জন্য খালের ভেতরে মাটি ফেলে ভরাট করা হয়েছে। আরেকটি অংশে ইতিমধ্যে প্রতিরোধ দেয়ালের কাজ শেষ হয়েছে। এখন খালের ভেতরে থাকা মাটি সরানোর কাজ চলছে।
এ কাজে যুক্ত খননযন্ত্রের চালক কামরুল ইসলাম বলেন, খালের এ অংশ যে পরিমাণ মাটি রয়েছে, তা পরিষ্কার করতে আর ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগবে।
নগরের পানিনিষ্কাশনে অন্যতম প্রধান চশমা খালের ২ নম্বর গেট থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত অংশে কোনো ধরনের ময়লা–আবর্জনা নেই। তবে মোহাম্মদপুর অংশে ঘাস জন্মেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা প্রবীণ রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, জলাবদ্ধতায় কয়েক বছর ধরে কষ্ট পাচ্ছেন। তবে এবার কাজের গতি দেখে আশাবাদী। প্রচুর কাজ চলছে। কাজের গতিও অনেক বেশি। তাই জলাবদ্ধতা কম হবে বলে ধারণা।
নগরের পানিপ্রবাহের মূল মাধ্যম বলা হয় চাক্তাই খাল। বহদ্দারহাট থেকে শুরু হওয়া এই খাল বিভিন্ন এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কর্ণফুলী নদীতে যুক্ত হয়েছে। বহদ্দারহাট থেকে বাড়ইপাড়া পর্যন্ত খালে ময়লা–আবর্জনা নেই। একই অবস্থা ডিসি সড়কের পাশেও। আর চকবাজারের ধুনির পুল এলাকায় চলছে প্রতিরোধ দেয়ালের কাজ। এ জন্য খাল ভরাট করা হয়েছে।
প্রবর্তক মোড়, কাতালগঞ্জ ও পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকার খাল পরিষ্কার দেখা গেলেও চকবাজারে হিজড়া খালে ময়লা-আবর্জনা ও প্লাস্টিক, কর্কশিটেভর্তি।
স্থানীয় বাসিন্দা সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ময়লা–আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কার করা হলেও অল্প সময়ের মধ্যে তা আবার ভরাট হয়ে যায়। আর বর্ষার সময় এখানে কোমরসমান পানি হয়। এবার কী হবে, তা এখনো বুঝতে পারছেন না।
সিডিএর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ বলেন, প্রকল্পের আওতায় থাকা খালগুলো আবার আবার পরিষ্কার করা হচ্ছে। নালা ও খাল সম্প্রসারণের কাজও চলছে সমানতালে। নগরবাসী যাতে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে রেহাই পান, সে জন্য তাঁরা কাজ করে যাচ্ছেন।
কাজ করছে সিটি করপোরেশনও
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে শুরু থেকে সিডিএর সঙ্গে সিটি করপোরেশনের দ্বন্দ্ব ছিল। এ জন্য এত দিন ধরে প্রকল্পের আওতার বাইরে থাকা ২১টি খাল খনন ও পরিষ্কারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়নি সিটি করপোরেশন। তবে এবার সে অবস্থান থেকে সরে এসে বির্জা খাল, নাছির খাল, কৃষি খাল ও সুন্নিয়া খাল পরিষ্কার ও খননে কাজ করছে সিটি করপোরেশন।
এ ছাড়া সরকারের কাছ থেকে থোক বরাদ্দ পাওয়া পাঁচ কোটি টাকায় নগরের ৪১টি ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ নালা–নর্দমা পরিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সিটি করপোরেশন। ইতিমধ্যে ১৩৯টি নালার তালিকা করে তা পরিষ্কারের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতার ‘হটস্পট’গুলো চিহ্নিত করে কাজ শুরু করেছেন তাঁরা। বর্ষার আগেই ছয় লাখ ঘনফুট মাটি উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়ে জানতে চাইলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের (আইইবি) চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, এবার সংস্থাগুলোর মধ্যে তোড়জোড় চলছে। কাজও হচ্ছে। তবে কাজের যে অবস্থা তাতে হালকা বৃষ্টির সময় হয়তো জলাবদ্ধতা হবে না। ভারী বর্ষণ হলে জলাবদ্ধতা হওয়ার শঙ্কা রয়ে গেছে। এ জন্য জরুরি ভিত্তিতে আগ্রাবাদের শেখ মুজিব সড়কের বক্স কালভার্ট খনন ও পরিষ্কার; নতুন খনন করা বাড়ইপাড়া খালের সঙ্গে চাক্তাই খাল ও কর্ণফুলী নদীতে সংযোগ দেওয়া জরুরি। পাশাপাশি যেসব জলকপাটের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে, সেগুলো দক্ষ ও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিতে হবে। আর খালগুলোর ভেতরে থাকা মাটি বর্ষার আগেই অপসারণ করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: খ ল পর ষ ক র প রকল প র র ক জ চলছ ক জ করছ বর ষ র এল ক য় ক জ কর এ জন য সমস য ন রসন
এছাড়াও পড়ুন:
নেই নিয়োগপত্র, আইডি কার্ড ও ছুটি
নিয়োগপত্র নেই। এ কারণে চাকরির নিশ্চয়তাও নেই। দেওয়া হয় না পরিচয়পত্র। নেই কর্ম ঘণ্টার হিসাব। তবে রয়েছে মজুরিবৈষম্য ও জীবনের ঝুঁকি। এ চিত্র খুলনার বরফকলে কর্মরত বরফ শ্রমিকদের।
অবহেলিত ও অধিকার বঞ্চিত বরফকলের শ্রমিকেরা জানেন না মে দিবসের অর্থ। তারা শুধু এটুকু জানেন, কাজ থাকলে মজুরি পাবেন, অন্যথায় জুটবে না কিছু। খুলনার নতুন বাজার, রূপসা, শিপইয়ার্ড ও নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বরফ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে উঠে এসেছে ঝুঁকি ও বৈষম্যের এই চিত্র।
সরেজমিনে জানা গেছে, লবণ পানি এবং অ্যামোনিয়া গ্যাসের সংমিশ্রণে বরফের প্রতিটি ক্যান তৈরি হয়। এ কাজে প্রচণ্ড ঝুঁকি রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- অ্যামোনিয়া গ্যাসের সিলিন্ডার লিকেজ হলে মৃত্যুসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা। এছাড়াও অধিকাংশ সময় হাত-পা ভিজে ঠান্ডা থাকায় ক্ষত থেকে ইনফেকশন হয়। এর বাইরে বুকে ঠান্ডা লেগে সর্দি-কাশি জ্বরসহ ঠান্ডাজনিত অসুস্থতায় ভোগেন এখানকার শ্রমিকেরা। পাতলা বরফে অনেক সময় হাত-পা কেটে যায়। কিন্তু মালিক বা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের জন্য কোন ধরনের অ্যাপ্রোন বা নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ করেন না। তবে দুর্ঘটনায় কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
আরো পড়ুন:
ফুড ডেলিভারিম্যান: খাবারের রাজ্যে অতৃপ্ত দিনরাত
মহান মে দিবস: শ্রমিকের অধিকার রক্ষায় সংস্কারে জোর সরকারের
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনা মহানগরীর নতুন বাজার, নিউমার্কেট, শিপইয়ার্ড, রায়েরমহল এবং রূপসা উপজেলার পূর্ব রূপসা এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১৫টি বরফকল রয়েছে। এর মধ্যে নতুন বাজার ও পূর্ব রূপসায় সর্বাধিক বরফকল রয়েছে। এসব কলে গড়ে দশ জন হিসেবে দেড় শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করেন।
রূপসার নতুন বাজার এলাকায় অবস্থিত ‘বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজে’ কাজ করেন মোহাম্মদ রাসেল হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার আশাশুনি হলেও পরিবার নিয়ে রূপসার জাবুসা এলাকায় বসবাস করেন। দীর্ঘ সাত বছর ধরে এই বরফকলে কাজ করছেন তিনি। রাসেল জানান, তাদের মাসিক বেতন নেই। নেই নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র। মূলত উৎপাদনের উপর প্রতি পিস বরফের ক্যান অনুযায়ী ১২ টাকা হারে মজুরি পান। নামমাত্র এ মজুরিতে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে সংসার ঠিকমতো চলে না।
‘‘তিন বছর আগে নির্ধারণ করা মজুরি এখনো চলছে। লোকসানের অজুহাতে মালিকপক্ষ মজুরি বাড়াতে চান না। তাদের মতো শ্রমিকদের কোন বেতন-বোনাস নেই। নো ওয়ার্ক, নো পে অর্থাৎ কাজ থাকলে মজুরি আছে কাজ না থাকলে নেই। মালিকদের এ সিদ্ধান্ত না মানলে চাকরিও থাকে না।’’ ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন রাসেল হোসেন।
একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন মোঃ জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘‘গড়ে প্রতিমাসে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা মজুরি পাই। কিন্তু মাসিক খাবার খরচ প্রায় ৩ হাজার টাকা। বাসা ভাড়া বাবদ ৩ হাজার টাকা চলে যায়।’’
তবে জাকির হোসেন ব্যাচেলর হওয়ায় কারখানার মধ্যেই থাকেন। বিয়ের পর এ কাজ করার ইচ্ছা নেই বলে জানান তিনি।
বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ-১-এ অপারেটর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন মোঃ সেলিম শেখ। তার জন্ম নড়াইলের লক্ষ্মীপাশা হলেও কর্মসংস্থানের কারণে রুপসার বাগমারা গ্রামে বসবাস করছেন। তিনি জানান, বর্তমান বয়স ৮৪। ২০ বছর বয়স থেকেই বরফ কারখানার সঙ্গে জড়িত। প্রথমে হেলপার হিসেবে ২৫০০ টাকা বেতনে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে অপারেটর হিসেবে মাসিক ১৫ হাজার টাকা পান। প্রতিদিন ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে কাজ শুরু করতে হয়। তবে সবসময় উৎপাদন না থাকলেও ২৪ ঘণ্টা কারখানায় থাকতে হয়। ছুটি পান না।
‘অ্যামোনিয়া গ্যাসের অতিরিক্ত চাপের কারণে সিলিন্ডার লিকেজ হলে মৃত্যু ঝুঁকি রয়েছে। তবে তিনি কখনো বড় ধরনের দুর্ঘটনার সম্মুখীন হননি বলে জানান তিনি।
‘মায়ের দোয়া আইস এন্ড কোল্ড স্টোরেজে’র শ্রমিক জাকারিয়া হাওলাদার বলেন, ‘‘চার বছর বরফকলে কাজ করছি। চাকরির ভবিষ্যৎ নেই। শ্রম দিতে পারলে মজুরি হয়, না হলে হয় না। নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র দেন না মালিকপক্ষ। বেতন বাড়ানোর কথা বললে তারা আমলে নেন না।’’
একই এলাকার ‘ব্রাইট অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজে’ কাজ করছেন মোঃ মুন্না গাজী ও মোঃ হাসান শেখ। তারা নগরীর জিন্নাপাড়া এলাকায় বসবাস করেন। তারা দুজনেই মাসিক ১০ হাজার টাকা বেতন পান। এর বাইরে তেমন কোন সুযোগ সুবিধা নেই।
‘ব্রাইট অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজে’র ম্যানেজার আশিকুর রহমান বিষয়টি স্বীকার করে জানান, কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের সুরক্ষায় উদাসীন। এখানে অ্যামোনিয়া গ্যাসের সিলিন্ডার মাঝেমধ্যেই লিক হয়। তবে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি। প্রতিষ্ঠানটিতে ৫৩২টি আইস উৎপাদনের ক্যানের প্লান্ট রয়েছে। তবে প্রতিদিন গড়ে ২৫০ ক্যান বরফ উৎপাদন হয়। ছয়জন শ্রমিক কাজ করে বলে জানান তিনি।
‘বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ- ২'র ম্যানেজার জামাল উদ্দিন বলেন, ‘‘বরফের মূল ক্রেতা চিংড়ি ও সাদা মাছের ব্যবসায়ীরা। এর বাইরে গ্রীষ্ম মৌসুমে ভ্রাম্যমাণ ও দোকানে শরবত বিক্রেতারাও কারখানা থেকে বরফ কিনে নেন। গ্রীষ্ম মৌসুমের ৬ মাস চাহিদা থাকে এবং কিছুটা লাভের মুখ দেখা যায়। তবে শীত মৌসুমের ছয় মাস বরফের চাহিদা কম থাকে। তখন কারখানা ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিলসহ শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন ও মজুরি দিয়ে লোকসান গুণতে হয়।’’
জামাল উদ্দিন স্বীকার করেন কারখানায় নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকলেও তা এড়াতে কোন সরঞ্জাম নেই। তবে অপারেটরদের অ্যামোনিয়া গ্যাসের ঝুঁকি প্রতিরোধে মাক্স সরবরাহ করা হয়।
‘বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ-১'র মালিকপক্ষের প্রতিনিধি রিয়াদ-উল-জান্নাত সৈকত বলেন, ‘‘ব্যবসা খুব ভালো যাচ্ছে না। কখনো লাভ, কখনো লোকসান এভাবেই চলছে। গত বছর কারখানা ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য খরচ বাবদ ৯ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।’’
তবে লাভ হলে শ্রমিক কর্মচারীদের মজুরি ও অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এ বিষয়ে শ্রমিকদের সংগঠন রূপসা বেড়িবাঁধ হ্যান্ডলিং শ্রমজীবী ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ রিপন শেখ এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘‘নতুন বাজার এলাকায় অবস্থিত কয়েকটি বরফকলের ৪০ জন শ্রমিক তাদের ইউনিয়নের সদস্য। বিগত দেড় বছর আগে মজুরির সমস্যা নিয়ে মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে দুই একজন শ্রমিক অভিযোগ করলে ইউনিয়নের মাধ্যমে সেটির সমাধান করে দেন তারা। কিন্তু বর্তমানে অভিযোগ নিয়ে কেউ আসে না।’’
বরফকলের শ্রমিকদের নিয়ে তারা মে দিবসের কর্মসূচি পালন করেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তারা//