ছুটিতে সিলেটের আকর্ষণীয় জায়গাগুলো যেভাবে ঘুরে দেখতে পারেন
Published: 2nd, April 2025 GMT
কারও শখ চা-বাগানের আঁকাবাঁকা মেঠোপথে ঘুরে বেড়ানো। কেউ কেউ পাহাড়-টিলার নির্জনতায় কিংবা হাওরের পানিতে ডুব দিতে ভালোবাসেন। অনেকে আবার একাকী কিংবা পরিবার–পরিজন নিয়ে রিসোর্ট অথবা বাংলোয় কয়েকটা দিন আয়েশে কাটাতে চান। এমন সবকিছুরই সমাহার রয়েছে সৌন্দর্যের লীলাভূমিখ্যাত সিলেটে।
পর্যটকেরা সাধারণত বর্ষা মৌসুমেই সিলেটে বেশি আসেন। এখন শুষ্ক মৌসুম। তবে এ সময়েও বেশকিছু স্থানে প্রতিদিন হাজারো পর্যটক ভিড় করেন। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোয় এসব জায়গা থাকে লোকে–লোকারণ্য। এবারের পবিত্র ঈদুল ফিতরের টানা ছুটিতে ঘুরে দেখতে পারেন সিলেটের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রগুলো। মোটামুটি তিন দিন সময় হাতে থাকলে সিলেটের আকর্ষণীয় জায়গাগুলো আয়েশ করে ঘুরে দেখা যায়। কেউ কেউ এক–দুদিন সময় নিয়েও সিলেট ঘুরে আসতে পারেন।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মায়ায়ী সৌন্দর্যের টানে সব মৌসুমেই সিলেটে দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা ভিড় জমান। এবারের ছুটিতে লাখো পর্যটক সিলেটে আসবেন বলে আমরা ধারণা করছি। পর্যটকদের সুবিধার্থে স্থানীয় প্রশাসন নিরাপত্তাসহ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।’
শহরে ঘোরাঘুরিপ্রায় সাত শ বছরের পুরোনো শহর সিলেট। এর আনাচকানাচে রয়েছে পুরোনো সব ঐতিহ্যের চিহ্ন। সফরের প্রথম দিন পর্যটকেরা শহর ও শহরতলীতে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন। রিকশা কিংবা সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে যেকোনো স্থানেই যাওয়া যায়। হাওয়াপাড়া, তাঁতীপাড়া, দরগামহল্লা, কাষ্টঘরসহ বিভিন্ন এলাকায় ঐতিহ্যবাহী পুরোনো ‘আসামটাইপ বাড়ি’ রয়েছে। স্থাপত্যশৈলীর অনুপম এসব নিদর্শন দেখা নেওয়া যেতে পারে।
আসামটাইপ বাড়ি দেখতে গেলে সিলেট শহরের টিলাগড়ে অবস্থিত মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজেও যাওয়া যেতে পারে। ১৮৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কলেজের ছাত্রাবাস এমন স্থাপত্যশৈলীতে তৈরি করা হয়েছে। টিলাবেষ্টিত এ কলেজের সামান্য দূরেই সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই টিলাগড় ইকোপার্ক। উঁচু টিলায় সারি সারি লম্বা গাছ আর বন্য প্রাণী দেখতে ১১২ একর আয়তনের ইকোপার্কটিতেও অনেকে নিয়মিত ভিড় জমান।
সিলেট শহরের আশপাশের চা-বাগানগুলোতে ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন অনেকেই। সদরের হিলুয়াছড়া চা-বাগানে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে বইমেলায় বিক্রি কম, এখনো আশায় আছেন প্রকাশকেরা
রাজশাহী বিভাগীয় বইমেলার প্রথম তিন দিনে লোকজনের ভিড় থাকলেও বেচাকেনা তেমন হয়নি। এতে অনেক প্রকাশকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তবে আগামী কয়েক দিনে বেচাকেনা বাড়বে বলে আশা করছেন প্রকাশকেরা ও আয়োজক কর্তৃপক্ষ।
গত শুক্রবার রাজশাহী জেলা কালেক্টরেট মাঠে ৯ দিনব্যাপী এই বইমেলার উদ্বোধন করা হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায়, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে এবং রাজশাহী বিভাগীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এ মেলা চলবে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত। মেলায় ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ৭০টি বেসরকারি প্রকাশনাসহ মোট ৮১টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে মেলা চলছে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। আর ছুটির দিনে মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়।
উদ্বোধনের আগের দিন বৃষ্টিতে মেলার মাঠ কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। সেই কর্দমাক্ত পরিবেশেই মেলার উদ্বোধন হয়। দর্শনার্থীদের ভোগান্তি কমাতে পরে প্রতিটি স্টলের সামনে ইট বিছিয়ে দেওয়া হয়। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও বিক্রির খরা কাটেনি বলে জানালেন বিক্রেতারা।
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের বিভিন্ন অংশে তখনো পানি জমে আছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত মঞ্চের সামনের প্যান্ডেলেও কাদা। সেখানেই কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও সাহিত্য নিয়ে আলোচনা চলছিল, তবে দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতি ছিল নগণ্য। স্টলের সামনে ইটের সলিংয়ের তৈরি রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন অনেকে। অনেকে বই দেখছেন।
সূর্যোদয় প্রকাশনীর বিক্রেতা রিপন আলী বলেন, প্রথম দিন তো কাদাপানির মধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। তখনো মানুষ ছিলেন। এখন ইট বিছানোর পর আরও বেশি মানুষ আসছেন, ভিড়ও করছেন, কিন্তু বই কিনছেন খুব কম।
ঐতিহ্য প্রকাশনীর স্টলে কাদার ওপর চেয়ার পেতে বসে থাকতে দেখা গেল বিক্রয়কর্মী ও চিত্রশিল্পী অর্ণব পাল সন্তুকে। তিনি বলেন, মানুষ আসছেন, ঘুরে দেখছেন, কিন্তু বিক্রি নেই বললেই চলে। মেলার ব্যবস্থাপনা আরও ভালো হতে পারত। আরেক বিক্রেতা আবদুল্লাহ হীল বাকি জানালেন, এমনও স্টল আছে, যেখানে সারা দিনে ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বইও বিক্রি হচ্ছে না।
তবে হতাশার ভিড়ে আশার কথাও শোনালেন কেউ কেউ। চট্টগ্রাম থেকে আসা নন্দন বইঘর প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী সুব্রত কান্তি চৌধুরী বলেন, বেচাবিক্রি আজ না হোক কাল হবে। মানুষ যে মেলায় এসে বই হাতে নিয়ে দেখছেন, এটাই বড় পাওয়া। এতে তাঁদের মধ্যে বই কেনার আগ্রহ তৈরি হবে।
মেলায় আসা পাঠকদের মধ্যে অবশ্য ভিন্ন চিত্র। দুই সন্তানের জন্য শিশুতোষ বই কিনে এক অভিভাবক বলেন, বাচ্চাদের হাতে বই তুলে দেওয়ার আনন্দটাই অন্য রকম।
মেলা থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপ্যাধ্যায়ের বই কিনেছেন মনির হোসেন। তিনি বলেন, মেলায় একসঙ্গে অনেক বই পাওয়া যায়, যা বই কেনার জন্য দারুণ সুযোগ।