ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে কোচ আর্নে স্লটের অভিষেক মৌসুমেই লিভারপুল শিরোপা জিততে চলেছে, তা অনেকটাই নিশ্চিত। এখন আলোচনা হতে পারে শুধু একটি বিষয় নিয়ে—শিরোপা নিশ্চিত হওয়ার পর লিভারপুলকে ‘গার্ড অব অনার’ দেবে কোন দল?

দুইয়ে থাকা আর্সেনালের সঙ্গে অনেক দিন ধরেই ১২ পয়েন্টের ব্যবধান লিভারপুলের। পরশু রাতে ফুলহামকে ২–১ গোলে হারিয়ে ব্যবধানটা ৯–এ নামিয়ে এনেছিল আর্সেনাল। কাল রাতে মার্সিসাইড ডার্বিতে এভারটনের বিপক্ষে ১–০ গোলের জয় আবার লিভারপুলকে ১২ পয়েন্টে এগিয়ে দিয়েছে।

৩০ ম্যাচে লিভারপুলের পয়েন্ট ৭৩, সমান সংখ্যক ম্যাচে আর্সেনালের পয়েন্ট ৬১। তবে গত রাতের ম্যাচে লিভারপুলকে ঠিক লিভারপুল মনে হয়নি। মোহাম্মদ সালাহ ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। বলের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারলেও অলরেডরা পুরো ম্যাচে লক্ষ্যে শট নিতে পেরেছে মাত্র তিনটি। একমাত্র গোলটা করেছেন দিয়োগো জোতা ম্যাচের ৫৭ মিনিটে।

ম্যাচের শুরুতেই লিভারপুলের জালে একবার বল পাঠান এভারটন স্ট্রাইকার বেতো। কিন্তু কিঞ্চিৎ ব্যবধানে তিনি অফসাইডে থাকায় মেলেনি গোল। ৩৪ মিনিটে লিভারপুল গোলকিপার কেলভিন কেলেহারকে একা পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি বেতো, শট নিয়েছেন পোস্ট বরাবর। শেষ পর্যন্ত কষ্টে পাওয়া জয় লিভারপুলকে শিরোপার আরও কাছাকাছি পৌঁছে দিয়েছে।

এভারটনকে হারাতে যে অনেক বেগ পেতে হয়েছে, তা এক বাক্যে স্বীকার করেছেন স্লট, ‘অবশ্যই কঠিন লড়াই হয়েছে। এতে অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। এভারটন টানা নয় ম্যাচ অপরাজিত ছিল। এই সময়ে তারা খুব কম গোল হজম করেছ, তাদের বিপক্ষে খুব কম সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে।’

ম্যাচের সবচেয়ে আলোচিত মুহূর্ত ছিল লিভারপুলের আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টারকে বাজেভাবে ফাউল করেও এভারটনের সেন্টার ব্যাক জেমস তারকোফস্কিকে রেফারির লাল কার্ড না দেখানো। একটা হলুদ কার্ডেই পার পেয়ে গেছেন তারকোফস্কি।

এ ব্যাপারে স্লটের ভাষ্য, ‘এ নিয়ে আমি আর মন্তব্য করতে চাই না। কারণ, এরই মধ্যে অনেকেই এই বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। এমনকি যাঁরা লিভারপুলকে খুব একটা পছন্দ করেন না, তাঁরাও স্পষ্টভাবে বলেছেন, সিদ্ধান্তটি কী হওয়া উচিত ছিল। (রেফারির এই সিদ্ধান্তে) আমি কি অবাক হয়েছিলাম? না।’

প্রিমিয়ার লিগে লিভারপুলের পরবর্তী পাঁচ প্রতিপক্ষ ফুলহাম, ওয়েস্ট হাম, লেস্টার সিটি, টটেনহাম ও চেলসি। এই সময়ে আর্সেনাল লিগে চারটি এবং চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ খেলবে। এই মৌসুমে বাকি সব প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়ায় লিভারপুলের সব মনোযোগ শুধু লিগ নিয়ে। বিপরীতে আর্সেনালেকে প্রিমিয়ার লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ নিয়ে ভাবতে হচ্ছে।

লিভারপুল আগামী এক মাস এই সুবিধাই নিতে চাইবে। এই সময়ে আর্সেনাল পয়েন্ট হারালে আর লিভারপুল নিজেদের পাঁচ ম্যাচেই জিতলে লিগ চ্যাম্পিয়ন হবে। সেক্ষেত্রে স্লটের দল পরের ম্যাচেই প্রতিপক্ষের ‘গার্ড অব অনার’ পাবে। সেই ম্যাচে লিভারপুলের কার বিপক্ষে খেলবে জানেন? আর্সেনাল! ২০২০ সালে লিভারপুল নিজেদের সর্বশেষ লিগ শিরোপা জয়ের পর আর্সেনালকেই সর্বপ্রথম ‘গার্ড অব অনার’ দিতে হয়েছিল।

গত রাতের অন্য ম্যাচগুলোতে ম্যানচেস্টার সিটি ২–০ গোলে লেস্টার সিটিকে, নিউক্যাসল ২–১ গোলে ব্রেন্টফোর্ডকে এবং অ্যাস্টন ভিলা ৩–০ গোলে ব্রাইটনকে হারিয়েছে।

এই মুহূর্তে ৫১ পয়েন্ট নিয়ে সিটি চারে আছে। পাঁচে থাকা নিউক্যাসলের পয়েন্ট ৫০। ৪৮ পয়েন্ট নিয়ে অ্যাস্টন ভিলার অবস্থান সাতে, ভিলার কাছে হেরে যাওয়া ব্রাইটন ৪৭ পয়েন্ট নিয়ে আছে আটে। আর ছয়ে থাকা চেলসির পয়েন্ট ৪৯। অর্থাৎ, চার থেকে আট থাকার দলগুলোর মধ্যে মাত্র ১ পয়েন্টের ব্যবধান!

আজ রাতে টটেনহামকে হারাতে পারলেই সিটিকে টপকে শীর্ষ চারে উঠে আসবে চেলসি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আর স ন ল ব যবধ ন

এছাড়াও পড়ুন:

আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান

এশিয়া কাপ-২০২৫ এর সুপার ফোরে জায়গা করে নিলো আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান। বুধবার দিবাগত রাতে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে স্বাগতিক আরব আমিরাতকে ৪১ রানের ব্যবধানে হারিয়ে ভারতের সঙ্গী হলো সালমান-শাহীনরা।

দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আলো-ঝলমলে রাতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭.৪ ওভার পর্যন্ত টিকেছিল আমিরাত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় তাদের ইনিংস। সেই সুবাদে সহজ জয় নিয়ে শেষ চারে জায়গা নিশ্চিত করে পাকিস্তান।

আরো পড়ুন:

আরব আমিরাতকে ১৪৭ রানের টার্গেট দিল পাকিস্তান

বেথেলের ইতিহাস গড়া দিনে ইংল্যান্ডের দাপুটে জয়

এই জয়ের নায়ক নিঃসন্দেহে শাহীন শাহ আফ্রিদি। বিপদের মুহূর্তে নামতে হয় তাকে ব্যাট হাতে। সেখানে ১৪ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কার ঝড়ে অপরাজিত ২৯ রানের ইনিংস খেলেন তিনি, যা পাকিস্তানের সংগ্রহকে দাঁড় করায় লড়াইযোগ্য অবস্থানে। শুধু ব্যাটেই নয়, বল হাতেও ছিলেন সমান কার্যকর। ৩ ওভারে মাত্র ১৬ রান খরচ করে তুলে নেন ২টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। এমন সর্বাঙ্গীন পারফরম্যান্সে স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠে যায় তার ঝুলিতে।

তবু শুরুটা বেশ আশাব্যঞ্জক ছিল আমিরাতের। ১৩.৫ ওভার পর্যন্ত তারা প্রতিযোগিতায় টিকে ছিল দারুণভাবে। তিন উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করেছিল ৮৫ রান। কিন্তু এরপর যেন ধস নামে। মাত্র ২০ রানের ব্যবধানে বাকি সাত উইকেট হারিয়ে পুরো দল অলআউট হয়ে যায় ১০৫ রানে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৫ রান করেন রাহুল চোপড়া, যার ইনিংসে ছিল ১টি চার ও ১টি ছক্কা। ধ্রুব পারাশার যোগ করেন ২০, মুহাম্মদ ওয়াসিম ১৪ এবং আলিশান শারাফু করেন ১২ রান।

পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণে শাহীনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দুটি করে উইকেট নেন হারিস রউফ ও আবরার আহমেদ।

এর আগে ব্যাট হাতে পাকিস্তানও ভুগেছে। চারজন ছাড়া কেউ দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পারেননি। ফখর জামান খেলেন ৩৬ বলে ৫০ রানের দৃষ্টিনন্দন ইনিংস, যেখানে ছিল ২টি চার ও ৩টি ছক্কা। শাহীন আফ্রিদির অপরাজিত ২৯ রান ছাড়া অধিনায়ক সালমান আলি আগা ২০ এবং মোহাম্মদ হারিস যোগ করেন ১৮ রান।

আমিরাতের হয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেন জুনায়েদ সিদ্দিকী। তিনি ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়ে তুলে নেন ৪টি উইকেট। সিমরানজিত সিংয়ের বোলিং ফিগারও কম চমকপ্রদ নয়, ৪ ওভারে ২৬ রান খরচ করে শিকার করেন ৩ উইকেট।

এই জয়ে পাকিস্তান-ভারত দ্বৈরথের আরেকটি অধ্যায় লেখার সুযোগ তৈরি হলো। শুধু তাই নয়, ভাগ্য যদি সহায় হয়, তবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ফাইনাল লড়াইও দেখা যেতে পারে এবারের এশিয়া কাপে।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ