বাংলাদেশি যুবক নিহতের খবরে পরিবারে কান্না
Published: 3rd, April 2025 GMT
রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে যুদ্ধের সময় বাংলাদেশি ইয়াসিন মিয়া শেখ (২২) নিহত হয়েছেন বলে খবর এসেছে। এর পর থেকে ময়মনসিংহের গৌরীপুরের ডৌহাখলা ইউনিয়নের মরিচালি গ্রামের বাড়িতে চলছে মাতম। ইয়াসিন গ্রামের মৃত আবদুস সাত্তার শেখের ছেলে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, গত বছর কোম্পানি ভিসায় রাশিয়া যান ইয়াসিন। কাজের ভালো সুযোগ না পেয়ে যোগ দেন রুশ সেনাবাহিনীতে। শর্ত ছিল, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সম্মুখসারিতে থাকার। যুদ্ধ চলাকালে নিয়মিত যোগাযোগ হলেও ঈদের আগের দিন থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ইয়াসিনের। রাশিয়ায় অবস্থানরত পরিচিতজনরাও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। এর পরই খবর আসে, যুদ্ধে গিয়ে ইউক্রেন সেনাবাহিনীর গুলিতে ইয়াসিন নিহত হয়েছেন।
মামা আবুল হাসিম জানান, রাশিয়ায় থাকা ইয়াসিনের প্রতিবেশীরা ফোন করে বড় ভাই রুহুল আমিনকে বলেছেন, যুদ্ধে যাওয়ার পর থেকে ইয়াসিনের কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না তারা। তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও বন্ধ। ইয়াসিনের ইউনিটের কয়েক সেনাসদস্য গুলিতে মারা গেছেন। এ থেকে ইয়াসিনের পরিণতিও একই হয়েছে বলে তাদের ধারণা।
গ্রামের বাসিন্দা ইয়াসিনের বাল্যবন্ধু মো.
তিনি বলেন, ইয়াসিনের বাবা মারা গেছেন ২০১৬ সালে। বড় ভাই তাঁর বিদেশে যাওয়ার জন্য ১৫ লাখ টাকা খরচ করেছেন। একটি কোম্পানিতে কাজের কথা থাকলেও গত ২২ ডিসেম্বর চুক্তিভিত্তিক যোদ্ধা হিসেবে রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দেন ইয়াসিন।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন ইয়াসিনের বাড়িতে গিয়ে লোকের ভিড় দেখা যায়। ছেলের মৃত্যুর খবরে মা ফিরোজা খাতুন বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। স্বজন তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। জ্ঞান ফেরার পর ফিরোজা খাতুন বিলাপ করে বলছেন, বিদেশে যাওয়ার পর ইয়াসিন কোনো টাকা পাঠায়নি।
আমরা খুব কষ্টে দিন পার করছি। কয়েক দিনের মধ্যে টাকা পাঠাবে বলেছিল। ইয়াসিন সেনাবাহিনীর হয়ে যুদ্ধে যাবে জানলে বিদেশে পাঠাতাম না। সরকারের কাছে দাবি, ছেলের লাশ যেন আমার কাছে ফেরত দেওয়া হয়। দেশের মাটিতে তাকে যেন দাফন দিতে পারি!
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।