পাল্টা শুল্ক আরোপের নামে ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর বাড়তি যে শুল্ক আরোপ করেছে, তা এককথায় খামখেয়ালিপূর্ণ চর্চা। এ সিদ্ধান্ত বিশ্ব অর্থনীতিকে নতুন করে বিপাকে ফেলবে। ১৯৩০ সালে যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যা ছিল বৈশ্বিক মহামন্দার অন্যতম কারণ। পরে যুক্তরাষ্ট্র সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। 

বাংলাদেশ তার সব বাণিজ্যিক অংশীদারের পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে মোস্ট ফেভারড নেশন (এমএফএন) ভিত্তিতে বৈষম্যহীন শুল্ক আরোপ করে। কারও সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য বা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি হলে তখন সেই দেশের ক্ষেত্রে শুল্কহার কমায়। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশ এমএফএন ভিত্তিতে কোনো পণ্য আমেরিকা থেকে আমদানি করলে যে শুল্কহার আরোপ করে, জার্মানি থেকে আমদানি করলেও একই হার থাকে। এ কথা ঠিক, প্রস্তুতকৃত পণ্যে বাংলাদেশে ট্যারিফ বা শুল্কহার অনেক দেশের তুলনায় বেশি।

বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করে যে পরিমাণ আয় করে, সে দেশ থেকে আমদানি বাবদ ব্যয় তার চেয়ে কম। এর মানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, তাদের পণ্যের ওপর বাংলাদেশ গড়ে ৭৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এখন এই হিসাব তারা কীভাবে করেছে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। কোনো দেশের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য ঘাটতি মিলিয়ে সেই দেশে তাদের পণ্যের ওপর শুল্কহার নির্ধারণ করা হলে তা অবশ্যই অযৌক্তিক। কিন্তু তাদের পদ্ধতি সম্পর্কে আমি এখনও নিশ্চিত নই।

এখন আসি যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের প্রভাব কী হতে পারে, সেই কথায়। এটি নিশ্চিত, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে যাবে। তাদের বাজার সংকুচিত হবে। বাংলাদেশের ওপর প্রভাবের কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসে তৈরি পোশাক। বাড়তি শুল্ক আরোপে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাকের 

দাম অনেক বাড়বে। ফলে তাদের পোশাক আমদানি কমবে। যুক্তরাষ্ট্র বছরে ৯০ থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করে। আমার ধারণা, এটি ৬০ থেকে ৭০ বিলিয়ন ডলারে নেমে যাবে। বাংলাদেশ সে দেশে বছরে ছয় থেকে সাত বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করে। ফলে সার্বিকভাবে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির ওপর প্রভাব পড়বে। এখন দেখতে হবে আমাদের প্রতিযোগীদের 

ওপর কার ক্ষেত্রে নতুন শুল্কহার কতটুকু। চীনের ওপর আগেই শুল্ক বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এখন আরোপ করেছে ৩৪ শতাংশ। বাংলাদেশের ওপর তারা শুল্ক আরোপ করেছে ৩৭ শতাংশ। আবার ভারতের ওপর আরোপ করেছে ২৬ শতাংশ, যা আমাদের চেয়ে কম। কম্বোডিয়ার ওপর শুল্ক আরোপ করেছে ৪৯ শতাংশ, যা আমাদের চেয়ে বেশি। আমি মনে করি, সব দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে এর মাত্রা বোঝা যাবে আরও পরে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীন ২৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করে। চীন এখন বিশ্বের অন্যান্য বাজার বিশেষত ইউরোপীয় ইউনিয়নের দিকে ঝুঁকবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের তৈরি পোশাক বাজারের ২১ শতাংশ বাংলাদেশের দখলে। চীন ইউরোপীয় ইউনিয়নে যদি তাদের পোশাকের দাম কমিয়ে দেয়, তাহলে বাংলাদেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সবচেয়ে বেশি। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত শুধু তাদের বাজার নয়, বিশ্বের অন্যান্য বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানিকে প্রভাবিত করবে। বাংলাদেশকে এই পরিবর্তিত পরিস্থিতি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। 

লেখক: অর্থনীতিবিদ এবং চেয়ারম্যান, র‍্যাপিড

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প আম দ র র ওপর আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

সেঞ্চুরির অপেক্ষায় মুশফিকুর, তিন দিনেই জয় রাজশাহীর

জাতীয় ক্রিকেট লিগে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে তিনদিনেই জয় পেয়েছে রাজশাহী বিভাগ। ৭ উইকেটে তারা হারিয়েছে খুলনা বিভাগকে। এদিকে সিলেটে সেঞ্চুরির অপেক্ষায় জাতীয় দলের ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। ডানহাতি ব্যাটসম্যান ৯৩ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন।

তার ব্যাটে ভর করে ঢাকা বিভাগের বিপক্ষে লড়ছে সিলেট। ঢাকার করা ৩১০ রানের জবাবে সিলেটের ৭ উইকেটে রান ২৬০। ৫০ রানে পিছিয়ে তারা। ১৭০ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৯৩ রান করে অপরাজিত আছেন মুশফিকুর। তার সঙ্গে ৫ রানে অপরাজিত আছেন ইবাদত হোসেন। এছাড়া শাহানুর ৩০ ও তোফায়েল ২৭ রান করেন।

আরো পড়ুন:

মাহিদুল-মজিদের সেঞ্চুরির দিনে মুমিনুলের ৮ রানের আক্ষেপ

স্বীকৃতির ১০ বছর পর জাতীয় ক্রিকেট লিগে ময়মনসিংহ

মিরপুরে খুলনার দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংও যুৎসই হয়নি। এবার ২৫৫ রানে থেমে যায় তাদের ইনিংস। ১ উইকেটে ৬৮ রানে দিন শুরু করে তারা। এনামুলের ইনিংস থেমে যায় ৩৪ রানে। মোহাম্মদ মিথুন খুলতে পারেননি রানের খাতা। মিরাজ ৪৮ ও জিয়াউর এবং ইয়াসির মুনতাসির ৩২ রানের দুটি ইনিংস খেলে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাতেও তাদের স্কোর বড় হয়নি।

১৪৭ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে ২৫৫ রানের বেশি করতে পারেনি। তাতে ১০৯ রানের লক্ষ্য পায় রাজশাহী। ৭ উইকেট হাতে রেখে জয় নিশ্চিত করে নাজমুল হোসেন শান্তর দল।

হাবিবুর রহমান সোহান ৬৮ বলে ৬২ রান করেন ৪ চার ও ৩ ছক্কায়। ২৫ রান আসে সাব্বির হোসেনের ব্যাট থেকে। সাব্বির রহমান ১২ ও মেহরব ৪ রানে অপরাজিত থেকে জয় নিয়ে ফেরেন। প্রথম ম্যাচ হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচে জয়ে ফিরল তারা।

কক্সবাজারে ময়মনসিংহ বিভাগ ও রংপুর বিভাগের ম্যাচ বাজে আউটফিল্ডের কারণে ভেস্তে যায়। একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। ২ উইকেট হারিয়ে রংপুরের রান ১৮। এখনও তারা ৫৩৭ রানে পিছিয়ে। ময়মনসিংহ প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটে ৫৫৫ রানে ইনিংস ঘোষণা করে।

পাশের মাঠে ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় খেলা হয়েছে। আগের দিনের ২ উইকেটে ১১৫ রানের সঙ্গে ৫১ রান যোগ করেন বরিশাল বিভাগ। খেলা হয়েছে কেবল ১৫ ওভার। জাহিদুজ্জামান খান ৩২ ও সালমান হোসেন ইমন ৭৫ রানে অপরাজিত আছেন। প্রথম ইনিংসে এখনও তারা ১৯২ রানে পিছিয়ে।

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সেঞ্চুরির অপেক্ষায় মুশফিকুর, তিন দিনেই জয় রাজশাহীর