কিশোরগঞ্জের ভৈরবে প্রতিবেশীর বাসায় চুরির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় প্রেমিক-প্রেমিকাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার তাদের আটক করা হয়। আজ শুক্রবার সকালে আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছেন ভৈরব থানা ওসি খন্দকার ফুয়াদ রুহানী। 

গ্রেফতার হওয়া যুবক নরসিংদীর রায়পুর উপজেলার গকুল নগর এলাকার হরিদাস বিশ্বাসের ছেলে সুমন বিশ্বাস (৩৮) ও নারী একই উপজেলার দৌলতকান্দি এলাকার মোবারক খন্দকারের মেয়ে চৈতী বেগম (২৮)।

থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পৌর শহরের কমলপুর র‌্যাব অফিস সংলগ্ন জামান মিয়ার বিল্ডিংয়ের ভাড়াটিয়া মামুনুজ্জামান বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চৈতী বেগম ও সুমন বিশ্বাসকে আসামি করে ভৈরব থানা চুরির মামলা করেন। মামুনুজ্জামান ও অভিযুক্তরা একই বিল্ডিংয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন। মামলা হওয়ার পর রাতেই অভিযুক্ত চৈতী ও সুমন বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। 

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত বছর ১০ ডিসেম্বর মামুনুজ্জামানের বাসায় চুরির ঘটনা ঘটে। এ সময় আলমারি ভেঙে ২০ হাজার টাকা, ৩টি স্বর্ণের চেইন, ৩ জোড়া স্বর্ণের কানের দুল, ১টি স্বর্ণের বেসলেট, ৩টি স্বর্ণের আংটিসহ ৩ ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে যায় চোর। 

এ বিষয়ে বাদী মামুনুজ্জামান বলেন, ‘চৈতী বেগম ও সুমন বিশ্বাস আমার প্রতিবেশী। তারা এতদিন স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে থাকতেন। আমার বাসায় চুরির পর থেকে তাদের নজরদারিতে রাখা হয়। তাদের কার্যকলাপ সন্দেহজনক ছিল। বৃহস্পতিবার সকালে জানতে পারি, তারা স্বামী-স্ত্রী নন। এছাড়া তারা বাসা ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছিল। বিষয়টি বুঝতে পেরে চৈতী ও সুমনকে আসামি করে মামলা করেছি।’ 

এ বিষয়ে চৈতী বেগম বলেন, ‘সুমন বিশ্বাস আমার পূর্ব পরিচিত। আমার দুটো ছেলে-মেয়ে রয়েছে। ৪ বছর আগে আমার স্বামী আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। সুমন বিশ্বাসকে আমি ছোট বেলা থেকে পছন্দ করতাম। আমার স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পর আমি সুমনের সঙ্গে থাকতে শুরু করি। সুমন সনাতন ধর্মে ও বিবাহিত। যদিও তার বউয়ের সঙ্গে ৬ বছর ধরে তার কোনো সম্পর্ক নাই। আমি মুসলিম ও সে হিন্দু, তাই আমাদের বিয়ে হয়নি।’ 

এ দিকে চুরির অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে চৈতী বেগম বলেন, ‘আমরা চুরি করিনি। আমাদের ফাঁসানো হয়েছে।’ 

ভৈরব থানা ওসি বলেন, ‘চুরির অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা পরকীয়ায় লিপ্ত ছিল। ৪ মাস ধরে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে এক সঙ্গে থাকছিল তারা। অভিযোগটি তদন্ত করা হচ্ছে। একই সঙ্গে চুরি হওয়া মালামাল উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক শ রগঞ জ স মন ব শ ব স স বর ণ র ও স মন

এছাড়াও পড়ুন:

রাতারাতি তারকা হলে দীর্ঘ সময় দর্শকের মনে থাকা কঠিন: রিচি

রিচি সোলায়মান। ছোটপর্দার জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী এখন অনেকটাই আড়ালে। আজ বিশ্ব বাবা দিবস উপলক্ষে প্রকাশ হয়েছে বিশেষ গানচিত্র ‘বাবা শুনতে কী পাও’। এতে অভিনয় করেছেন রিচি সোলায়মান। এই গানচিত্র এবং সাম্প্রতিক নানা বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন মীর সামী

আপনার অভিনীত গানচিত্র ‘বাবা শুনতে কী পাও’ নিয়ে কিছু বলুন?
‘বাবা শুনতে কি পাও’ শিরোনামের এই বিশেষ গানটি তৈরি করেছেন প্রান্তিক সুর। তাতে কণ্ঠ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী গজল ঘরানার শিল্পী শিরিন চৌধুরী। গানটির কথাও লিখেছেন শিল্পী নিজে। গানচিত্রে একটি সুন্দর সামাজিক বার্তা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিয়ের পর একটা মেয়ের স্বপ্ন যেন মরে না যায় এবং শুধু মানুষটাকে নয়, তার স্বপ্নকেও ভালোবাসার সংবেদনশীল এবং হৃদয়স্পর্শী বাবার অনুরোধের বার্তা থাকছে এতে। গানের কথার সূত্র ধরে গল্পনির্ভর ভিডিওটিতে বাবার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আবুল হায়াত আর মেয়ের ভূমিকায় আমি। অনেকদিন পর হায়াত চাচার সঙ্গে কাজ করলাম। 

এই কাজটির সঙ্গে যুক্ত হলেন কীভাবে? 
কিছুদিন আগে নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী আমায় গানচিত্রটিতে অভিনয়ের জন্য বললেন। যখন শুনলাম এই গানে বাবার ভূমিকায় অভিনয় কবেন আবুল হায়াত চাচা; ঠিক তখনই রাজি হয়েছি। কারণ, আমি হায়াত চাচার পরিচালনায় অনেক নাটকে তাঁর মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছি। তাই ভাবলাম বাবা দিবসের এই কাজটি আমাদের আরও একটি ডকুমেন্টেশন হয়ে থাক। আমাদের এই কাজে একজন মেয়ের দৃষ্টিভঙ্গিতে বাবাকে ঘিরে তার স্মৃতি, ভালোবাসা আর না বলা কথাগুলো উঠে এসেছে। কাজটি করার সময় আমার বাবার কথা খুব মনে পড়ছিল। একজন বাবার অবদান যে কত বিশাল, সেটি অনেক সময় আমরা বুঝতে পারি না–এই গানচিত্রে সেটিই তুলে ধরা হয়েছে।

আপনাকে এখন টিভি নাটকে খুব কম দেখা যায়। ইচ্ছা করেই দূরে সরে আছেন?
আমি এখন পরিবার আর নিজের সময়কে প্রাধান্য দিচ্ছি। পাশাপাশি কাজের মানের প্রতিও সবসময় সংবেদনশীল ছিলাম। নাটকের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে কখনও বিশ্বাসী ছিলাম না। এখন তো অনেক সময় দেখা যায় গল্প বা চরিত্রের গভীরতা কম, কাজগুলো অনেকটাই ‘কনটেন্ট ভিউ’ নির্ভর হয়ে যাচ্ছে। আমি চাই, যখন কাজ করি, সেটি যেন দর্শকের মনে থাকে। তাই শুরু থেকে এখনও বেছে বেছেই কাজ করছি। 

এখন নাটকে ‘ভিউ’ ও ‘ট্রেন্ড’ অনুসারে শিল্পী নির্বাচন হয় বলে অভিযোগ আছে... 
এটি ঠিক যে এখন ‘ভিউ’ একটি বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশ্ন হলো– দীর্ঘ মেয়াদে এই দর্শক আসলে কাদের মনে রাখে? আমার মনে হয়, একটি শিল্পমাধ্যমে যখন কেবল সংখ্যা দিয়ে শিল্পী বা কাজের মান বিচার হয়, তখন সেখানে অন্তর্নিহিত শিল্পবোধ অনেকটা হারিয়ে যায়। আমি বিশ্বাস করি অভিনেতা বা অভিনেত্রী হিসেবে আমাদের প্রথম দায় নিজের চরিত্রের প্রতি। ‘ভিউ’ দিয়ে নয়, শিল্পের গভীরতা দিয়ে একজন শিল্পীকে বিচার করা উচিত।

বর্তমান সময়ে ওটিটি মাধ্যমের প্রসারে নাটকের গুণগত মানে কী প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন?
ওটিটি একটা বড় প্ল্যাটফর্ম। নতুন গল্প আর নতুন নির্মাতাদের সুযোগ এনে দিয়েছে। এখানেও একটি সিন্ডিকেট তৈরি হচ্ছে। যারা আগে টিভিতে প্রভাবশালী ছিলেন, এখন তারা ওটিটিতেও আধিপত্য রাখছেন। এটি শিল্পের জন্য মোটেই ভালো নয়। প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও অনেক শিল্পী সুযোগ পাচ্ছেন না। আমি বলব, ওটিটি হোক কিংবা টিভি–প্রতিভা ও গল্পকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত, ‘চেনা মুখ’ বা ‘সেলিব্রেটি প্যাকেজ’কে নয়।

যে সিন্ডিকেটের কথা বললেন, তা কী ভাঙা যায় না?
অবশ্যই যায়। যারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করবেন, তারাই এখন সেই দলের হয়ে যাচ্ছে। ফলে বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? আমি যখন নিয়মিত কাজ করেছি, সেই সময় কিন্তু সবাই যার যার যোগ্যতা দিয়ে কাজ করেছেন। এখন পরিচয়ের ভিত্তিতে হচ্ছে। ফলে ধীরে ধীরে আমাদের নাট্যাঙ্গনের শিল্পটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

ওটিটির কাজে আগ্রহ অনুভব করেন?
অবশ্যই। যদি ভালো গল্প আর শক্তিশালী চরিত্র পাই, আমি ওটিটিতেও কাজ করতে চাই। অশ্লীলতা বা অহেতুক সাহসী দৃশ্যের নামে যদি গল্পের গুরুত্ব হারিয়ে যায়, তাহলে সেটি আমাকে টানে না। শিল্পমান থাকলেই আমি আগ্রহী।

বর্তমান প্রজন্মের নতুন অভিনেত্রীদের সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
নতুনদের মধ্যে অনেকেই খুব ভালো করছেন। আমি তাদের একটা কথাই বলি, নিজেকে সময় দিন, নিজেকে গড়ুন। রাতারাতি তারকা হওয়া যায়। দীর্ঘ সময় দর্শকের মনে থাকা কঠিন। টিকে থাকার জন্য শুধু সৌন্দর্য নয়, কাজের প্রতি নিষ্ঠা, অধ্যবসায় ও আত্মসমালোচনাও জরুরি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ