পেনসিলভানিয়ায় দেখা গেল সেই এপিএস সাঈদুরকে
Published: 4th, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রে দেখা গেল খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েলের ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) সাঈদুর রহমানকে। দেশটির পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ল্যাঙ্গাস্টার শহরে বন্ধুদের নিয়ে বেড়ানোর একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন সাঈদুর।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময়ের পর থেকে সাঈদুর রহমানকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। আত্মগোপনে চলে যান তিনি। তার যুক্তরাষ্ট্রের ভিসাপ্রাপ্তি এবং যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর ডিগ্রি কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন সাঈদুর রহমান। তার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার কোটচাদপুরে। থাকতেন নগরীর ট্যাংক রোডে। ধারাভাষ্যকার হিসেবে ক্রীড়া জগতের সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে শেখ জুয়েল খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে তাকে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেন। এরপরই প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায় নাম ওঠে সাঈদুরের। সাবেক এমপি শেখ জুয়েলের হয়ে সরকারি দপ্তরে নিয়োগ, বদলি, তদারকি করতেন তিনি। একপর্যায়ে শেখ জুয়েলের নাম ভাঙিয়ে নিজেও নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। সাঈদুর খুলনা মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র সহসভাপতি পদে রয়েছেন।
সাঈদুর সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হন ২০২৪ সালের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েলের সঙ্গে ডামি প্রার্থী হিসেবে খুলনা-২ আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন সাঈদুর রহমান। তার প্রতীক ছিল ঈগল। দেশের বিভিন্ন স্থানে ডামি প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের ছোট নেতারা প্রার্থী হলেও খুলনা-২ আসনে তা হয়নি। এমপির পিএসকে ডামি প্রার্থী হিসেবে দেখে আওয়ামী লীগের নেতারা ক্ষুব্ধ হন। বিষয়টি নিয়ে তখন বেশ হাস্যরস তৈরি হয়েছিল। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদও প্রকাশ হয়।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চুকনগর কলেজে এমপিওভুক্ত ছিলেন সাঈদুর রহমান। এমপির এপিএস হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর কলেজে অনিয়মিত ছিলেন তিনি। তারপরও নিয়মিত বেতন তুলতেন। এমপিওভুক্ত শিক্ষক নির্বাচনে অংশ নিতেন পারেন না। কিন্তু তার নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাহস পাননি কেউ। গত বছর জুলাই আন্দোলনের কয়েকদিন আগে কলেজের চাকরি থেকে অব্যহতি নেন তিনি। ওই সময় শেখ হাসিনার চাচাতো ভাইয়েরাও দেশত্যাগ করেন।
চুকনগর ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো.
জানা যায়, অভ্যুত্থানের আগেই যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা পেতে তৎপরতা চালান তিনি। আন্দোলন শুরুর আগে তার চাকরি থেকে অব্যাহতি গ্রহণ, আমেরিকার ভিসা গ্রহণ, শেখ পরিবারের সদস্যদের দেশত্যাগ একই সূত্রে গাঁথা কিনা, তা নিয়েও আলোচনা চলছে। অভ্যুত্থানের কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি দেশ ছাড়েন।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঈদের পরদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েকটি ছবি পোস্ট করেন সাঈদুর। তার একটিতে তিনি লেখেন, ‘এতো ভালো ঈদ কাটবে; কল্পনাও করিনি।’
গত বছর সংসদ নির্বাচনের সময় জমা দেওয়া হলফনামায় দেখা যায়, নগদ ও ব্যাংক মিলিয়ে সাঈদুরের কাছে ৯৭ লাখ ৩৮ লাখ টাকা রয়েছে। ঝিনাইদহ, ঢাকা ও খুলনায় জমি রয়েছে ৫ জায়গায়। তার স্ত্রীর নামেও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জমি রয়েছে।
এসব বিষয়ে সাঈদুর রহমানের বক্তব্য জানতে তার সঙ্গে ওয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনি সাড়া দেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘আমরা দলের পেছনে খেটে মরতাম। আর সুবিধা নিতো এপিএসরা। অভুত্থানের পর থেকে এমপি, নেতা, কারও কোনো হদিস নেই। আমরা পালিয়ে আছি। তারা কেউ আমেরিকা, কেউ ভারতে আরামে সময় কাটাচ্ছেন।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন স ঈদ র রহম ন গত বছর আওয় ম ২ আসন
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?