যুক্তরাষ্ট্রে দেখা গেল খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েলের ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) সাঈদুর রহমানকে। দেশটির পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ল্যাঙ্গাস্টার শহরে বন্ধুদের নিয়ে বেড়ানোর একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন সাঈদুর।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময়ের পর থেকে সাঈদুর রহমানকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। আত্মগোপনে চলে যান তিনি। তার যুক্তরাষ্ট্রের ভিসাপ্রাপ্তি এবং যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর ডিগ্রি কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন সাঈদুর রহমান।  তার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার কোটচাদপুরে। থাকতেন নগরীর ট্যাংক রোডে। ধারাভাষ্যকার হিসেবে ক্রীড়া জগতের সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে শেখ জুয়েল খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে তাকে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেন। এরপরই প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তালিকায় নাম ওঠে সাঈদুরের। সাবেক এমপি শেখ জুয়েলের হয়ে সরকারি দপ্তরে নিয়োগ, বদলি, তদারকি করতেন তিনি। একপর্যায়ে শেখ জুয়েলের নাম ভাঙিয়ে নিজেও নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। সাঈদুর খুলনা মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র সহসভাপতি পদে রয়েছেন।

সাঈদুর সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হন ২০২৪ সালের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েলের সঙ্গে ডামি প্রার্থী হিসেবে খুলনা-২ আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন সাঈদুর রহমান। তার প্রতীক ছিল ঈগল। দেশের বিভিন্ন স্থানে ডামি প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের ছোট নেতারা প্রার্থী হলেও খুলনা-২ আসনে তা হয়নি। এমপির পিএসকে ডামি প্রার্থী হিসেবে দেখে আওয়ামী লীগের নেতারা ক্ষুব্ধ হন। বিষয়টি নিয়ে তখন বেশ হাস্যরস তৈরি হয়েছিল। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদও প্রকাশ হয়। 

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চুকনগর কলেজে এমপিওভুক্ত ছিলেন সাঈদুর রহমান। এমপির এপিএস  হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর কলেজে অনিয়মিত ছিলেন তিনি। তারপরও নিয়মিত বেতন তুলতেন। এমপিওভুক্ত শিক্ষক নির্বাচনে অংশ নিতেন পারেন না। কিন্তু তার নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাহস পাননি কেউ। গত বছর জুলাই আন্দোলনের কয়েকদিন আগে কলেজের চাকরি থেকে অব্যহতি নেন তিনি। ওই সময় শেখ হাসিনার চাচাতো ভাইয়েরাও দেশত্যাগ করেন।

চুকনগর ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো.

আবদুল হাফিজ মাহমুদ বলেন, গত বছর ৩০ জুন সাঈদুর রহমান অব্যাহিত চেয়ে আবেদন করেন। জুলাই মাসে সেটি গ্রহণ করা হয়। এরপর কলেজ কমিটির সভায় তাকে বাদ দেওয়া হয়।

জানা যায়, অভ্যুত্থানের আগেই যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা পেতে তৎপরতা চালান তিনি। আন্দোলন শুরুর আগে তার চাকরি থেকে অব্যাহতি গ্রহণ, আমেরিকার ভিসা গ্রহণ, শেখ পরিবারের সদস্যদের দেশত্যাগ একই সূত্রে গাঁথা কিনা, তা নিয়েও আলোচনা চলছে। অভ্যুত্থানের কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি দেশ ছাড়েন।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঈদের পরদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েকটি ছবি পোস্ট করেন সাঈদুর। তার একটিতে তিনি লেখেন, ‘এতো ভালো ঈদ কাটবে; কল্পনাও করিনি।’

গত বছর সংসদ নির্বাচনের সময় জমা দেওয়া হলফনামায় দেখা যায়, নগদ ও ব্যাংক মিলিয়ে সাঈদুরের কাছে ৯৭ লাখ ৩৮ লাখ টাকা রয়েছে। ঝিনাইদহ, ঢাকা ও খুলনায় জমি রয়েছে ৫ জায়গায়। তার স্ত্রীর নামেও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জমি রয়েছে।

এসব বিষয়ে সাঈদুর রহমানের বক্তব্য জানতে তার সঙ্গে ওয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনি সাড়া দেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘আমরা দলের পেছনে খেটে মরতাম। আর সুবিধা নিতো এপিএসরা। অভুত্থানের পর থেকে এমপি, নেতা, কারও কোনো হদিস নেই। আমরা পালিয়ে আছি। তারা কেউ আমেরিকা, কেউ ভারতে আরামে সময় কাটাচ্ছেন।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন স ঈদ র রহম ন গত বছর আওয় ম ২ আসন

এছাড়াও পড়ুন:

প্রেম ছিল না তবু কেন মধুবালাকে বিয়ে করেছিলেন কিশোর কুমার

দিলীপ কুমারের সঙ্গে বিচ্ছেদের কিছুদিন পরই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেন অভিনেত্রী মধুবালা। তবে তখন তিনি ছিলেন অসুস্থ। কিশোর কুমার জানিয়েছিলেন, ভালোবাসা থেকে নয়, বরং কথা রাখতেই তিনি এ বিয়ে করেছিলেন।
মধুবালা ও দিলীপ কুমারের প্রেম নিয়ে একসময় মুখর ছিল মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু অভিনেত্রীর বাবার বাধার কারণে সে সম্পর্কে ফাটল ধরে এবং দুজনের বিচ্ছেদ ঘটে। কিছুদিন পরেই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেন মধুবালা। তাঁদের এই বিয়ে অনেককে চমকে দিয়েছিল। কারণ, তাঁদের প্রেমের কথা তখনো গোপন ছিল। তবে মধুবালার শরীর তখন ভালো যাচ্ছিল না। বলা হয়, দীর্ঘ রোগভোগের সময় কিশোর কুমার তাঁকে মায়ের বাড়িতে রেখেই চলে যান।

দ্য ইলাস্ট্রেটেড উইকলি অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমার বলেছিলেন, ‘বিয়ের আগেই জানতাম, ও খুব অসুস্থ। কিন্তু কথা তো দিয়েছিলাম। তাই সে কথা রেখেই ওকে ঘরে এনেছিলাম স্ত্রী হিসেবে। জানতাম, ওর জন্মগত হৃদ্‌রোগ আছে। তবু ৯ বছর ধরে সেবা করেছি। চোখের সামনেই ওকে মরতে দেখেছি। কেউ বুঝবে না এর যন্ত্রণা, না ভুগলে। ও অসম্ভব সুন্দরী ছিল। আর কত যন্ত্রণায় মারা গেছে, সেটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। হতাশায় চিৎকার করত, কান্নাকাটি করত। এত প্রাণোচ্ছল মানুষ নয়টা বছর বিছানায় শুয়ে থাকবে—এ কল্পনাই করা যায় না। ডাক্তার বলেছিল, ওকে হাসিখুশি রাখতে হবে। আমি তা–ই করেছি—ওর শেষনিশ্বাস পর্যন্ত। কখনো হেসেছি, কখনো কেঁদেছি ওর সঙ্গে।’

তবে কিশোর কুমারের এই বক্তব্য নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। কারণ, পরে ফিল্মফেয়ার সাময়িকীতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একেবারে ভিন্ন কথা বলেন তিনি। সেই সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমার বলেন, ‘মধুবালার সঙ্গে আমি প্রেমে পড়িনি কখনো। বরং ওর প্রেমিক ছিল আমার বন্ধু দিলীপ কুমার। আমি তো শুধু ওদের বার্তা পৌঁছে দিতাম। বিয়ের প্রস্তাবটা দিয়েছিল মধুবালাই। এমনকি, যখন আমার প্রথম স্ত্রী রুমা তখনো আমার সঙ্গে ছিল, তখনো মধু বলত, “ওকে কখনো ছেড়ো না, না হলে আমি তোমার হয়ে যাব।”’

আরও পড়ুনকিশোর কুমার কি সত্যিই ঘরে কঙ্কাল আর মাথার খুলি নিয়ে ঘুমাতেন২৭ মে ২০২৫

মধুবালার পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, চিকিৎসকেরা তখন বলেছিলেন, অভিনেত্রীর পক্ষে শারীরিক সম্পর্ক কিংবা সন্তানধারণ কোনো কিছুই সম্ভব নয়। সেই বাস্তবতা হয়তো প্রভাব ফেলেছিল কিশোরের সিদ্ধান্তে। এক ঘনিষ্ঠজন বলেন, ‘আমরা বলছি না কিশোরদা ভুল করেছিলেন। ডাক্তার তো স্পষ্ট বলেছিল—শারীরিক সম্পর্ক বা সন্তান কোনোটাই সম্ভব নয়। তবে একজন নারীর তো মানসিক সঙ্গীও দরকার হয়।’
ওই ঘনিষ্ঠজন আরও জানান, কিশোর কুমার তিন মাসে একবার আসতেন মাত্র। বলতেন, ‘আমি এলে তুমি কাঁদবে, আর এতে তোমার হৃদ্‌যন্ত্রের ক্ষতি হবে। তুমি বিষণ্ন হয়ে পড়বে।’ সে সময় মধু অনেক ছোট ছিলেন, ঈর্ষাও ছিল স্বাভাবিক। হয়তো এ দূরত্বই ধীরে ধীরে তাঁকে শেষ করে দিয়েছিল।
১৯৬৯ সালে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বলিউড অভিনেত্রী মধুবালা

সম্পর্কিত নিবন্ধ