যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানিতে শুল্ক-কর কমানো যায় কি না, তা পর্যালোচনা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ বিষয়ে এনবিআরের একটি দল কাজ করছে। আগামীকাল রোববার এ নিয়ে বৈঠক হবে।

গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ হারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ ঘোষণা দেন। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বেশির দেশের পণ্যে এমন শুল্ক আরোপ করেন তিনি। যে দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি বেশি, সেই দেশের ওপর বেশি হারে শুল্ক আরোপ হয়েছে। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় চলছে। বাণিজ্যঘাটতি বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ হলো যে দেশে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য যায়, সে দেশে উচ্চ শুল্ক হারসহ বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্য বাধা আছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এমন শুল্ক আরোপের ঘটনায় বাংলাদেশও উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আড়াই হাজারের মতো পণ্য বছরে আসে। সেসব পণ্যের ওপর শুল্ক-কর কত, তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এসব শুল্ক-কর কমানোর সুযোগ আছে কি না, তা–ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে যেসব সেবা আমদানি করা হয়, সেখানেও শুল্ক-কর কমানোর বিষয়টি চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা লিজের পণ্যেও শুল্ক-কর সুবিধা বাড়ানো যায় কি না, তা–ও দেখছে এনবিআর।

এনবিআর কর্মকর্তারা শুধু আমদানি শুল্ক পর্যালোচনা করবেন না, ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, অগ্রিম কর—এসব শুল্ক-করও পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, এই ধরনের শুল্ক আরোপে করণীয় কী, তা নিয়ে কাজ শুরু করেছে এনবিআর। পুরো বিষয়টি বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের শুল্ক-কর কমানোর বিষয়টিও আলোচনা করা হবে।

এনবিআরের আরেক কর্মকর্তা জানান, শুধু যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করলেই পণ্যের ওপর আলাদা করে শুল্ক-কর কমানোর সুযোগ নেই। এইচকোডে (পণ্যের শ্রেণি বিভাজন) থাকা পণ্য ও সেবা ধরে শুল্ক-কর কমাতে হয়। যে দেশ থেকেই ওই সব পণ্য আনা হোক না কেন, হ্রাসকৃত শুল্ক-কর আরোপ হবে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে যা আমদানি হয়

গত বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২ হাজার ৫১৫টি এইচএসকোডের পণ্য আমদানি হয়েছে বাংলাদেশে। এর মধ্যে আট ধরনের পণ্য আমদানি হয়েছে ৬৭ শতাংশ।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যভান্ডারে দেখা যায়, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য আমদানি করেছে ২৬২ কোটি ডলারের পণ্য। এর মধ্যে ১৩৩ কোটি ডলারের পণ্য আমদানিতে কোনো শুল্ক-কর দিতে হয়নি। যেমন গম, তুলার মতো পণ্যে শুল্ক-কর নেই। এরপরও যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হওয়া পণ্যে গড়ে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ শুল্ক-কর দিতে হয়েছে। সব মিলিয়ে কাস্টমস শুল্ক-কর আদায় করেছে ১ হাজার ৪১১ কোটি টাকা।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি পণ্যের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে রড তৈরির কাঁচামাল—পুরোনো লোহার টুকরা বা স্ক্র্যাপ। গত অর্থবছরে পণ্যটি আমদানি হয় ৭৭ কোটি ৮৬ লাখ ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হওয়া মোট পণ্যের প্রায় ২৭ শতাংশ। গড়ে ৪ শতাংশ শুল্কহার রয়েছে পুরোনো লোহার পণ্য আমদানিতে।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আমদানি পণ্য এলপিজির উপাদান বিউটেন আমদানি হয়েছে ৩৩ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের। বাংলাদেশের শুল্কহার গড়ে ৫ শতাংশ।
তৃতীয় সর্বোচ্চ আমদানি সয়াবিন বীজ আমদানি হয়েছে ৩২ কোটি ডলারের। এই পণ্য আমদানিতে শুল্ক-কর নেই।

চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে বস্ত্রশিল্পের কাঁচামাল তুলা। এই পণ্য আমদানি হয়েছে ২৬ কোটি ৮৭ লাখ ডলারের। এটিতেও শুল্ক-কর নেই।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানির তালিকায় আরও রয়েছে উড়োজাহাজের ইঞ্জিন, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস, হুইস্কি, গাড়ি, গম, উড পাল্প, পুরোনো জাহাজ, সয়াকেক, কাঠবাদাম ইত্যাদি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ