সংবাদ নিয়ে এনসিপির ব্যাখ্যা ও প্রতিবেদকের বক্তব্য
Published: 5th, April 2025 GMT
‘নিজ দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা চায় না প্রধান দলগুলো’ শিরোনামে ২ এপ্রিল প্রথম আলোর অনলাইন ও ই–পেপারে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে এনসিপি। দলটি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, প্রতিবেদনটির উপশিরোনামে ‘সংসদে নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়ার সুপারিশ সংস্কার কমিশনের। একমত নয় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি’। ওই প্রতিবেদনে এনসিপির অবস্থান ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।
এনসিপি বলেছে, প্রতিবেদনে উল্লেখিত ‘সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে’, এই দাবি সত্য নয়। কারণ, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা নয়; বরং অর্থবিল ব্যতিরেকে বাকি সব বিষয়ে ভোট দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। অন্যদিকে, এনসিপি তার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবে সংসদ সদস্যদের অর্থবিল এবং অনাস্থা ভোট ব্যতীত যেকোনো বিষয়ে নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার অধিকার প্রদানের পক্ষে মত দিয়েছে। অর্থাৎ, এনসিপি সংস্কার কমিশনের সুপারিশের সঙ্গে আংশিকভাবে একমত হয়েছে এবং অনাস্থা ভোটের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ ব্যতিরেকে অন্য সব ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের স্বাধীন মতামতকে গুরুত্ব দিয়েছে। এনসিপি মনে করে, এটি একটি ভারসাম্যপূর্ণ সংস্কার প্রস্তাব, যা একই সঙ্গে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনতা ও সরকারের স্থিতিশীলতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে।
প্রতিবেদকের বক্তব্যপ্রতিবেদনের শিরোনামের নিচে সারাংশে ‘অর্থবিল ছাড়া’ শব্দটি বাদ পড়েছে। তবে প্রতিবেদনের সূচনায় বলা আছে, ‘অর্থবিল ছাড়া অন্য যেকোনো বিষয়ে সংসদের নিম্নকক্ষের সদস্যদের নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে—সংবিধান সংস্কার কমিশনের এই সুপারিশের সঙ্গে পুরোপুরি একমত নয় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি। এ তিনটি দলই চায় অর্থবিলের মতো আস্থা ভোটের ক্ষেত্রেও সংসদ সদস্যরা (এমপি) স্বাধীন থাকবেন না।’
এ ছাড়া প্রতিবেদনের যে অংশে আলাদাভাবে এনসিপির অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, ‘জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারীদের দল এনসিপিও অর্থবিলের পাশাপাশি দলের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ থাকা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ত ব স ব ধ নত এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
দলগুলো একমত হলে বর্ষপূর্তিতেই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ
ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হবে। বিশেষ করে নির্বাচিত সরকারের সংস্কার করা সংবিধানের প্রস্তাবনায় এই স্বীকৃতির উল্লেখ থাকবে। এ ছাড়া সংবিধানের তফসিলেও ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ সংযুক্ত থাকবে। এ ঘোষণাপত্র ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর বলে ধরে নেওয়া হবে।
বহুল আলোচিত জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ায় এ কথাগুলো বলা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে অন্যতম আলোচিত বিষয় এই ঘোষণাপত্র। অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি সামনে রেখে সম্প্রতি জুলাই ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়া বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বিভিন্ন দলকে পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। দলগুলোর সবুজ সংকেত পেলে অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতেই ঘোষণা করা হতে পারে জুলাই ঘোষণাপত্র।
ঘোষণাপত্রের খসড়ায় ২৬টি দফা রয়েছে। প্রথম ২১ দফায় মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের মানুষের অতীতের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম থেকে শুরু করে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট মোকাবিলায় গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত জনগণের সার্বভৌমত্বের প্রত্যয় ও প্রয়োগ রাজনৈতিক এবং আইনি উভয় দিক থেকে যুক্তিসংগত, বৈধ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।’
আরও পড়ুনমৌলিক সংস্কারের সব বিষয়ে মতৈক্য হয়নি ৫ ঘণ্টা আগেপরের পাঁচটি দফায় রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা, আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুম-খুন, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সব ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধের দ্রুত উপযুক্ত বিচার, আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি, শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে।
খসড়া ঘোষণাপত্রে শেখ মুজিবুর রহমান সরকারের প্রতিষ্ঠিত বাকশাল বা একদলীয় শাসনব্যবস্থার সমালোচনা করা হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর দেশে সিপাহি জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লব সংঘটিত হয় বলে ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের কথা যেমন এতে উল্লেখ রয়েছে, পাশাপাশি এক-এগারোর ‘ষড়যন্ত্রমূলক বন্দোবস্তের’ কড়া সমালোচনাও ঘোষণাপত্রে আছে।
জনগণের লড়াইকে সমর্থন দেয় সামরিক বাহিনীঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন, পিলখানা ট্র্যাজেডি, শাপলা চত্বরে গণহত্যার মতো আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম-খুন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, একদলীয় স্বার্থে সংবিধান সংশোধন ও পরিবর্তন বাংলাদেশের সব রাষ্ট্রীয় এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি চরম গণবিরোধী, একনায়কতান্ত্রিক ও মানবাধিকার হরণকারী শক্তি বাংলাদেশকে একটি ফ্যাসিবাদী, মাফিয়া ও ব্যর্থ রাষ্ট্রের রূপ দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।
অবৈধভাবে ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার তিনটি প্রহসনের নির্বাচনে (২০১৪, ’১৮ ও ’২৪) দেশের মানুষকে ভোটাধিকার ও প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চিত করে বলেও জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ায় উল্লেখ রয়েছে। বলা হয়, তথাকথিত উন্নয়নের নামে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের নেতৃত্বে সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের মধ্য দিয়ে বিগত পতিত দুর্নীতিবাজ আওয়ামী সরকার বাংলাদেশ ও এর অমিত অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে বিপর্যস্ত করে তোলে এবং এর পরিবেশ-জলবায়ু ও প্রাণবৈচিত্র্য বিপন্ন করে।
খসড়া ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ৯ দফা দাবি ঘোষণা করে, যা পরে ১ দফায় রূপান্তরিত হয়। আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা জনগণের গণতান্ত্রিক লড়াইকে সমর্থন দেন। তীব্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গণভবনমুখী জনতার উত্তাল যাত্রার মুখে অবৈধ, অনির্বাচিত, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট (২০২৪) পদত্যাগ করেন এবং তিনি মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।