বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছেন হেফাজতে ইসলামের নেতারা। শনিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়। হেফাজত নেতারা জানিয়েছেন, বিএনপির মতো তারাও দ্রুত নির্বাচন চান। 

বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ছিলেন। হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান, নায়েবে আমির ড.

আহমদ আবদুল কাদের, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী, মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, মাওলানা জুনাইদ আল হাবিব, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী বৈঠকে অংশ নিয়েছেন।

মহিউদ্দিন রব্বানী সমকালকে জানিয়েছেন, হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে ২০১৩ এবং ২০২১ সালে দায়ের মামলা, নির্বাচন, আওয়ামী লীগের বিচার এবং সংবিধান সংস্কার নিয়ে কথা হয়েছে বৈঠকে। হেফাজত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে থাকা মামলা প্রত্যাহারের দাবি বিএনপিও তুলবে বলে আশ্বস্ত করেছে। 

২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হেফাজত অরাজনৈতিক সংগঠন হলেও কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, নেজামে ইসলাম, খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোটের নেতারা হেফাজতেরও নেতৃত্বে রয়েছেন। খেলাফত, জমিয়ত, ইসলামী ঐক্যজোট এক সময়ে বিএনপির জোটে থাকলেও দলগুলোর নেতারা আওয়ামী লীগ আমলে হেফাজত সংশ্লিষ্ট মামলায় পড়ার পর বেরিয়ে যায়। 

আগামী নির্বাচনে ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে কাছে টানতে বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী। এ সময়ে বিএনপির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে মহিউদ্দিন রব্বানী সমকালকে বলেছেন, বিএনপি দ্রুত নির্বাচন চায়, হেফাজতও তাই চায়। হেফাজতের ব্যানারে কেউ নির্বাচনে অংশ নেবে না। তবে সংগঠনের নেতারা নিজ নিজ দলের হয়ে নির্বাচন করবেন। একটি বৃহত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে হেফাজতও মনে করে, যত দ্রুত নির্বাচন হবে ততই ভালো। নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে সরকার একেক সময় একেক কথা বলায় অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে। 

সংবিধান সংস্কার কমিশন সংবিধানের মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে বহুত্ববাদ যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে। বিএনপি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানে যুক্ত করা ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসকে’ ফের মূলনীতি হিসেবে চায়। মহিউদ্দিন রব্বানী বলেছেন, হেফাজতও বহুত্ববাদ ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসকে’ মূলনীতিতে চায়। 

জামায়াতের সমালোচক হেফাজত আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে সমর্থন করতে বলে গুঞ্জন রয়েছে। এর জবাবে মহিউদ্দিন রব্বানী বলেছেন, যারা হেফাজতের ১৩ দফাকে সমর্থন করবে, তাদেরকেই হেফাজত সমর্থন করবে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ব এনপ র ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা

বছর পাঁচেক আগেও ধান কাটার শ্রমিকেরা বৈশাখ মাসের অপেক্ষায় থাকতেন। বৈশাখে হাওরের বুকজুড়ে সবুজ ধান যখন সোনালি রঙ ছড়াতে শুরু করে, তখন থেকেই দূরদূরান্ত থেকে হাওরে আসতে থাকেন ধান কাটার শ্রমিকেরা। কিন্তু, এই চিত্র দ্রুত বদলাচ্ছে। হাওরের কৃষক এখন ধান কাটার জন্য বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করেন। ফলে কৃষকের শ্রম এবং অর্থ দুটোরই সাশ্রয় হচ্ছে। তবে, কর্মহীন হয়ে পড়ছেন কৃষি শ্রমিকেরা। বাধ্য হয়ে তারা পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে ঝুঁকছেন অন্য পেশায়।

তিন বছর হলো ধান কাটার পেশা ছেড়েছেন মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া গ্রামের মো. মকবুল মিয়া। এখন তিনি সারাবছর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান।

আরো পড়ুন:

খুলনার বরফশ্রমিক
নেই নিয়োগপত্র, আইডি কার্ড ও ছুটি

ফুড ডেলিভারিম্যান: খাবারের রাজ্যে অতৃপ্ত দিনরাত

মকবুল মিয়া বলেন, ‘‘আগে বছরের ছয় মাস বর্ষায় নৌকা বাইতাম, আর হুগনা সিজন আইলে নিজের জমি চাষ করতাম, আবার মাইনষের জমিতেও কামলা দিতাম। যা আয় অইতো তাই দিয়া আমরার ছয়জনের সংসার চইল্যা যাইতো। কিন্তু, যহন থেইক্যা নতুন নতুন মেশিন হাওরে আইতাছে, তহন থেইক্যা আমরার আর বেইল নাই।’’

‘‘কেউ আর আমরারে আগের মতন দাম দেয় না। কাম করলেও ঠিকমতো টেহা পাই না, তাই পুষায় না,’’ বলেন এই কৃষিশ্রমিক।

মকবুলের মতো ধান কাটা, মাড়াই, রোদে শুকানো, ঝাড়া, কাঁধে বহন করার মতো স্বাধীন পেশা ছেড়েছেন অষ্টগ্রামের ফয়জুল, ইটনার শামছুল মিয়া, নিকলীর ফরিদ উদ্দিনসহ অসংখ্য শ্রমিক। এক সময় যারা এ পেশায় দলবেঁধে কাজ করতেন, এখন দৃশ্যপট পুরোটাই ভিন্ন। ধান কাটার পেশা বদলে তারা এখন কেউ রিকশাচালক, কেউ চায়ের দোকানদার, কেউ চটপটি-ফুচকার দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

তারা বলছেন, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির গতির সঙ্গে তারা কখনো তাল মেলাতে পারবেন না। কৃষকরাও তাদের শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছেন না। বেশি জমি যাদের আছে তারাও আধুনিক পদ্ধতির প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন। যে কৃষক অল্প জমিতে চাষাবাদ করেছেন, তারাও আর পয়সা খরচ করে কৃষিশ্রমিকের ওপর নির্ভর করছেন না। তারা পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা নিচ্ছেন। ফলে খেটে খাওয়া শ্রমিকেরা পড়েছেন বিপাকে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সনাতন পদ্ধতিতে এক বিঘা জমির ধান কাটতে প্রচুর সময় লাগে। ফসল কাটার পরে বহন ও মারাই করা, তারপর বস্তায় সংরক্ষণ করার জন্যও অনেক শ্রমিকের দরকার। এটুকু ৬ থেকে ৭ জন শ্রমিকের সারা দিনের কাজ। তার জন্য মজুরি গুনতে হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। কিন্তু, এ কাজে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করলে সময় এবং অর্থ দুটোই কম লাগে।

বৈশাখে বর্ষার পানি ও বৈরী আবহাওয়া না থাকায় কৃষকেরা হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটছেন। বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে ঝড়-তুফান শুরু হলে পাকা ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে তারা যে পদ্ধতিতে ধান কাটা সহজ এবং দ্রুত হয় সেই পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার পুরো জেলায় এক লাখ ৬৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওর এলাকাতেই আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। ফলন ভালো হওয়ায় এই ধান থেকে এবার প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ধান কাটতে এ বছর হাওর অঞ্চলে ৩৫ হাজার শ্রমিক নিয়োজিত আছেন। এই সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধান কাটতে কৃষক কম্বাইন্ড হারভেস্টারসহ ৪১৩টি ধান কাটার যন্ত্র ব্যবহার করছেন। 

জেলা শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. খোরশেদ উদ্দিন বলেন, ‘‘মানুষের পেশা পরিবর্তনশীল। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের বিভিন্ন পেশা বেছে নিতে হয়। কিন্তু, কৃষি এমন একটা পেশা, যারা এ পেশা রপ্ত করেছেন তাদের জন্য নতুন পেশায় আসা খুব কঠিন। বর্তমানে কৃষিকাজে যেভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, তাতে কৃষিশ্রমিকেরা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।’’

‘‘শুধু কৃষিতেই নয়, বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে,’’ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকারকেই সুদৃষ্টি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান, মাঠে যদি কৃষক ও শ্রমিক ন্যায্য শ্রমমূল্য না পান, তাহলে কৃষিও একদিন হুমকির মুখে পড়বে।’’

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ