দেশের শেয়ারবাজার নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই
Published: 5th, April 2025 GMT
নিজের দেশের ব্যবসা বাঁচানোর কথা বলে বিশ্বের বাকি সব দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যে যে বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, এর প্রাথমিক ধাক্কায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খোদ তাঁর দেশেরই শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা। এর পরের অবস্থানে ইউরোপের শেয়ারবাজার। এশিয়ার বাজারে পতন হচ্ছে, তবে সে তুলনায় অনেক কম।
বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারের দর পতনের প্রেক্ষাপটে বাংলদেশের শেয়ারবাজার নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই বলে মনে করছেন দেশের বিশ্লেষক এবং শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপ শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের সব দেশের ক্ষেত্রেই হয়েছে। রপ্তানি বাণিজ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোতে কারও ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি এবং কারও ক্ষেত্রে কম হয়েছে। এখন ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রপ্তানি পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, তার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে।
জানতে চাইলে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিনিয়োগ সংস্থা আইসিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ সমকালকে বলেন, ‘অতিরিক্ত শুল্কারোপের ফলে আপাতভাবে মনে হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের পণ্যের আমদানি খরচ বাড়বে, তাতে চাহিদা কমতে পারে। বাস্তবতা হলো, প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীন, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার ওপর শুল্ক আরোপ হয়েছে অনেক বেশি। তবে ভারত ও পাকিস্তান সুবিধাজনক অবস্থানে। এমনটা হবে না যে ভারত ও পাকিস্তান সব ক্রয়াদেশ পাবে, কারণ এতটা পণ্য সরবরাহ বাড়ানোর সুযোগ এ দুই দেশের নেই। তা ছাড়া বাংলাদেশ থেকে অপেক্ষাকৃত কম দামের পণ্য রপ্তানি হয়। শুল্ক আরোপে সব পণ্যের দাম বাড়লে বেশি দামের পণ্যের চাহিদা কমবে, অপেক্ষাকৃত কম দামি পণ্যের চাহিদা তৈরি হবে। এতে করে সুফল পাওয়ার সম্ভাবনাও আছে।’
আবু আহমেদ বলেন, ‘ট্রাম্প চাচ্ছেন, তাঁর দেশ থেকে আমরা বেশি পণ্য আমদানি করি। তাহলে শুল্ক কমাতে পারেন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে করণীয় নির্ধারণে জরুরি বৈঠক করেছে। এটি ইতিবাচক। সমঝোতার মাধ্যমে কিছুটা শুল্ক কমাতে পারলে বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় আরও কিছুটা বাড়তি সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে থাকা হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে। ফলে শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার যৌক্তিক কারণ তিনি দেখছেন না।
আইডিএলসি সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন সমকালকে বলেন, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে গুটিকয়েক যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সরাসরি পণ্য রপ্তানি করে। এর মধ্যে বস্ত্র খাতের কিছু কোম্পানি আছে। এরই বাইরে ওষুধ ও সিরামিক পণ্য থাকতে পারে, তবে তা খুবই কম। এ অবস্থায় বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
দর পতন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে বেশি
ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক আরোপ ইস্যুতে বিশ্বব্যাপী সব দেশের শেয়ারবাজারে দর পতন অব্যাহত। শুক্রবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুধু এসঅ্যান্ডপি-৫০০ সূচকভুক্ত কোম্পানিগুলোর বাজার মূলধন বা সম্মিলিত শেয়ারদর কমেছে ৫ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার। দর পতনে শুধু ওয়াল স্ট্রিটের বিনিয়োগকারীরাই নন, ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ইলন মাস্কের মালিকানাধীন কোম্পানি টেসলার শেয়ারেরও ব্যাপক দর পতন হয়েছে। তাতে ইলন মাস্কের সম্পদ কমেছে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা।
বাড়তি শুল্ক আরোপের পর প্রথম দুই দিনেই যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারের প্রধান সূচকগুলোর মধ্যে এসঅ্যান্ডপি-৫০০ সাড়ে ১০ শতাংশ হারিয়েছে। ডো-জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল সূচকের সোয়া ৯ শতাংশ এবং সর্বাধিক ১১ দশমিক ৪২ শতাংশ পতন হয়েছে নাসডাক সূচকের। এদিকে ইউরোনেক্সট-১০০ সূচকটির শুক্রবার পর্যন্ত দুই দিনে পতন হয়েছে ৮ দশমিক ১১ শতাংশ। এ সময়ে যুক্তরাজ্য শেয়ারবাজারের প্রধান মূল্যসূচকের পতন হয়েছে ৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম পতন হয়েছে এশিয়ার শেয়ারবাজারে। জাপানের বাজারের প্রধান মূল্যসূচক নিক্কি-২২৫ হারিয়েছে ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ। হংকংয়ের হ্যাংস্যাং ১ দশমিক ৫২ শতাংশ, কোরিয়ার কোসপি কম্পোজিট ১ দশমিক ৬১ শতাংশ হারিয়েছে। প্রতিবেশী ভারতের সেনসেক্স সূচকের পতন হয়েছে ১ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র দ শ র শ য় রব জ র শ য় রব জ র র শ ল ক আর প ১ দশম ক দর পতন র পতন
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারের ভেতরে একটা অংশ নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করছে: এনসিপি
সরকারের ভেতরের একটি পক্ষ ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের বাইরে গিয়ে নিজেরাই ঐকমত্য কমিশন হওয়ার চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, এই চেষ্টার কারণে নির্বাচন ঝুঁকিতে পড়বে।
আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আখতার হোসেন এ কথা বলেন।
আখতার হোসেন বলেন, তাঁদের কাছে স্পষ্টতই প্রতীয়মান যে সরকারের ভেতরের কোনো একটা অংশ সংস্কারকে ভন্ডুল করে নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ–আলোচনার ভিত্তিতেই কমিশন সুপারিশ উপস্থাপন করেছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, সেই সুপারিশের ভিত্তিতেই সরকার আদেশ জারি করবে, সেটাই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যখন সরকারের তরফ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে আরও এক সপ্তাহ রাজনৈতিক দলগুলোকে আলাপ–আলোচনার কথা বলা হয়, তখন মনে হয় যে সরকার আসলে এই সংস্কারের বিষয়গুলো নিয়ে সাপ-লুডো খেলছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ৯৬-তে পৌঁছে গিয়েছিলাম, সেটাকে আবার তিনে নিয়ে আসা হয়েছে সাপ কেটে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের বর্তমান যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, তাতে সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে।’
অতি দ্রুত সরকারকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, সরকারকে নিজেকেই দায়িত্ব নিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করতে হবে। সামনের সংসদকে গাঠনিক ক্ষমতা প্রদান করার মধ্য দিয়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। গণভোটের মাধ্যমে অর্জিত জনগণের অভিপ্রায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে যেন বাস্তবায়িত হয়, সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে।