অবশেষে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী ভর্তি শুরু
Published: 6th, April 2025 GMT
অনেক বাধাবিপত্তির পর অবশেষে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আন্তবিভাগে রোগী ভর্তি শুরু হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে মেডিসিন বিভাগে এক নারী রোগীকে ভর্তির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো রোগী ভর্তি চালু হয়। বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক আক্রামুজ্জামান মিন্টু। তিনি বলেন, ‘রোগী ভর্তি শুরু হয়েছে। সোমবার বেলা ১১টায় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে।’
আরও পড়ুনকুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গরূপে চালুর দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ১০ জুলাই ২০২৪আরও পড়ুনকুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে হাসপাতাল চালুর দাবিতে শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ, যানজট১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আনোয়ারুল ইসলামও সোমবার রোগী ভর্তি কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন। মেডিকেল কলেজ সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে (কুষ্টিয়া শহরে ম্যাটস ক্যাম্পাস) কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়। মূল ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয় ২০২২ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। সেখানে ছয়তলা একাডেমিক ভবন, চারতলা করে দুটি হোস্টেল ভবন, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য তিন ও দোতলাবিশিষ্ট ডরমিটরি, মসজিদ এরই মধ্যে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে স্থানান্তর করা হয়। তবে মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল চালু না হওয়ায় ক্যাম্পাস থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লিনিক্যাল ক্লাস করেন। শিক্ষার্থীরা দুটি ভাড়া বাসে যাতায়াত করেন। সব মিলিয়ে ক্যাম্পাসে বর্তমানে প্রায় ৩৫০ জন শিক্ষার্থী আছেন।
গত বছরের ১০ জুলাই ও চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি ওই মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গরূপে চালুর দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল চালু না হওয়ায় সেখানকার শিক্ষার্থী, রোগীসহ সাধারণ মানুষের ব্যাপক অসুবিধা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে এক পর্যায়ে হাসপাতালের পরিচালক আনোয়ারুল কবীর শিক্ষার্থীদের কাছে লিখিত দিয়ে জানান, ২০ দিনের মধ্যে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের শিশু ও মেডিসিন বিভাগ চালু করবেন।
মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে হাসপাতালে বিশেষজ্ঞসহ ৬৮ জন চিকিৎসক রয়েছেন। নার্স রয়েছেন ৩৯ জন। এর মধ্যে হাসপাতালের নিয়োগকৃত ১৯ জন, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে ২০ জনকে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য ৩৬ জন আনসার সদস্য রাখা হয়েছে। তৃতীয় ও চর্তুথ শ্রেণির কর্মচারীও রাখা হয়েছে।
আজ রোববার দুপুরে কুমারখালী উপজেলার বাখৈই গ্রামের বাসিন্দা রওশন আরা (৩৩) নামের নারীকে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করা হয়। এ ছাড়া শিশু ওয়ার্ডেও রোগী ভর্তি করা হয়। সব মিলিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ১৯ জন ও শিশু ওয়ার্ডে ২২ জন রোগী ভর্তি করা হয়েছে। আপাতত হাসপাতালে এ দুটি ওয়ার্ডেই রোগী ভর্তি করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। মেডিসিন বিভাগে সবোর্চ্চ ৪৫ জন ও শিশু বিভাগে সর্বোচ্চ ৪৫ জন রোগী ভর্তি করা হবে।
হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা যায়, আপাতত হাসপাতালের জরুরি বিভাগ চালু হচ্ছে না। রোগী ভর্তি হতে হলে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে রেফার্ড বা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে জরুরিভাবে অনুমতি বা কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসকদের পরামর্শে আসা রোগীদের ভর্তি করানো হবে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের জন্য অক্সিজেন সাপোর্ট, কিছু ওষুধ ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা–নিরীক্ষার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (কার্ডিওলজি) নাসিমুল বারী প্রথম আলোকে বলেন, জেনারেল হাসপাতাল থেকে যদি কোনো মেডিসিন ও শিশু বিভাগের রোগীদের রেফার্ড করতে হয়, তবে তা কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হবে। আর সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (স্বাস্থ্য প্রশাসন) কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী ভর্তির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন।
গণপূর্ত কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২৭৫ কোটি টাকা প্রাক্কলন ব্যয় ধরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। কুষ্টিয়া শহরের কালীশংকরপুর মৌজায় ২০ একর জমিতে প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। বিভিন্ন সময়ে ৫৩টি প্যাকেজে ৫২ জন ঠিকাদার কাজটি করতে থাকেন। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও শেষ হয়নি। তখন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় ২০১৮ সাল পর্যন্ত নানা জটিলতায় কাজ বন্ধ থাকে। ২০১৮ সালে প্রথম দফায় কাজের মেয়াদ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। নির্মাণের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬১১ কোটি টাকা। কিন্তু এ সময়েও কাজ শেষ করতে পারেননি ঠিকাদারেরা। দ্বিতীয় দফায় ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। এবার ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬৮২ কোটি টাকা, যা প্রথমে ধরা ব্যয় থেকে ৪০৭ কোটি টাকা বেশি। ওই মেয়াদেও কাজ শেষ না হওয়ায় তৃতীয়বারের মতো ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়িয়ে কাজ শেষ হয়।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সাততলা ভবনে ৫০০ শয্যার পাশাপাশি ৮৮টি কেবিন, ২৩ শয্যার সিসিইউ, ২০ শয্যার আইসিইউ সেবা আছে। এ ছাড়া জরুরি সেবা দিতে আলাদা আরও ১৩০ শয্যার ব্যবস্থা আছে। এদিকে হাসপাতালের জন্য ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুনে অন্তত ৯০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ও আসবাব কেনা হয়, যা বর্তমানে হাসপাতালের ভবনের ভেতরে পড়ে আছে। এসব যন্ত্রপাতির মধ্যে আছে অত্যাধুনিক এমআরআই মেশিন, সিটি স্ক্যান, এক্স-রে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন এবং অস্ত্রোপচার কক্ষে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি। অভিযোগ আছে, এই যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হয়েছে। এ নিয়ে দুদক কেনাকাটার কাগজপত্র নিয়ে তদন্ত করছে।
২০২৩ সালের ১৫ নভেম্বর হাসপাতাল ভবনের একটি অংশে আংশিক বহির্বিভাগ চালু হয়। কুষ্টিয়া-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফের নির্দেশে এটি চালু করা হয়। তবে বর্তমানে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বলছেন, সেটা অবৈধভাবে কোনো অনুমোদন ছাড়াই করা হয়েছিল। এই বহির্বিভাগ সেবা এখনো চলমান। তবে হাসপাতালে রোগী ভর্তি, এমনকি পরীক্ষা-নিরীক্ষাও হয় না। প্রায় তিন মাস আগে হাসপাতালে রোগী ভর্তিসহ যাবতীয় কাজে প্রশাসনিক অনুমোদন পায়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ড ক ল কল জ র র জন য প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে
বাংলাদেশে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে দিয়ে দেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থার প্রতিফলন দেখা গেছে।
বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সম্প্রতি যেসব দেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে, সেসব দেশে পরবর্তী এক বছরে এফডিআই উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালের পর এফডিআই কমেছে ১৯.৪৯ শতাংশ, চিলিতে ২০১৯ সালের পর কমেছে ১৫.৬৮ শতাংশ, সুদানে ২০২১ সালের পর ২৭.৬০ শতাংশ, ইউক্রেনে ২০১৪ সালের পর ৮১.২১ শতাংশ, মিশরে ২০১১ সালের পর ১০৭.৫৫ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৯৮ সালের পর ১৫১.৪৯ শতাংশ কমেছে। এই ধারাবাহিক হ্রাসের মধ্যে বাংলাদেশে এফডিআইর ১৯.১৩ শতাংশ বৃদ্ধির চিত্র বিশেষভাবে নজরকাড়া।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেছেন, “বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গুণ হলো—শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অর্থনীতিকে পুনরায় চালু করার অদ্ভুত ক্ষমতা। এই পরিসংখ্যান তার দারুন একটা প্রতিফলন। সাধারণত, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যায়, কিন্তু আমরা উল্টা দেখছি। সঠিক নীতি নির্ধারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার আন্তরিকতা এবং প্রাইভেট সেক্টরের অদম্য স্পৃহা কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। আমরা সব সময় বিনিয়োগকারীদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। সব সমস্যার সমাধান হয়নি, তবে সদিচ্ছার কোনো ত্রুটি ছিল না। শিগগিই সারা বছরের একটি আমলনামা (রিপোর্ট কার্ড) প্রকাশ করা হবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪৮৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭০ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৩ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ হয় ৯২৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, তবে ২০২৪ সালে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৬৭৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯২ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই ধারা বজায় থাকা অত্যন্ত ইতিবাচক। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে বলে মনে করছেন তারা।
ঢাকা/নাজমুল/রফিক