মার্কিন প্রেসিডেন্টের পাল্টা শুল্ক আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এখন পর্যন্ত যা হয়েছে, তা মূলত আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ—এটাই বাস্তবতা। গত শনিবার বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা বিডায় দীর্ঘ একটি বৈঠক হয়েছে। সেখানে আমরা সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করেছি, কী করতে হবে বা কী করা দরকার। আমরা আশা করেছিলাম, শনিবার রাতেই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে চিঠি দেওয়া হবে, কিন্তু শেষমেশ তা হয়নি। অনেকেই আবার অনেক রকম কথা বলছেন। এখন পর্যন্ত এই হচ্ছে পরিস্থিতি।

এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি কাজ হচ্ছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ট্রাম্প প্রশাসনকে চিঠি পাঠানো—যেসব বিষয় আমরা চিহ্নিত করেছি বা বিভিন্ন পক্ষ যেসব কথা বলেছে, তার আলোকে সেই চিঠি পাঠানো দরকার। সবচেয়ে ভালো হতো যদি প্রধান উপদেষ্টা ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্টের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারেন, যদিও তার জন্য হয়তো সময় লাগবে। তবে যা–ই করা হোক, এ মুহূর্তে জাতিকে সুনির্দিষ্টভাবে জানানো দরকার, কী কী করেছে বা কী কী প্রস্তাব দিয়েছে।

গত শনিবার বিডার বৈঠকের পর গতকাল রোববার সকালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে অনেকেই অনেক রকম কথা বলছেন।

কেউ কেউ বলেছেন, এই শুল্ক আরোপের কারণে আমরা তেমন একটা ক্ষতিগ্রস্ত হব না। এমনকি কেউ কেউ বলেছেন, শুল্ক তো শুধু বাংলাদেশের ওপর আরোপ করা হয়নি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর করা হয়েছে। বরং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনামের ওপর বাংলাদেশের চেয়ে বেশি হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ফলে বাংলাদেশ উল্টো লাভবান হতে পারে।

ট্রাম্পের ঘোষণা অনুযায়ী, ভিয়েতনামের পাল্টা শুল্ক বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। কিন্তু বিবিসি বলছে, ট্রাম্পের এই পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা গত ১০০ বছরের মধ্যে বিশ্ববাণিজ্যে সবচেয়ে বড় ঘটনা। এভাবে এক ঘোষণায় বিশ্ববাণিজ্যে এতটা তোলপাড় আর কখনো হয়নি। এর জেরে মন্দা হতে পারে—জেপি মর্গ্যানসহ আরও অনেক বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান সেই কথা বলছে। সেটা হলে নিশ্চিতভাবেই উন্নত দেশগুলোতে মানুষের চাহিদা কমবে। আমাদের শুল্কহার কম হলেও তখন লাভ হবে না। সবার মতো আমাদেরও ক্ষতি হবে।

আরেকটি বিষয়, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ক্রেতাদের মধ্যে অনেকেই সরবরাহকারীদের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত পণ্য ধরে রাখতে বলেছে। অর্থাৎ তারা দেখতে চায়, শেষমেশ কী হয়। ফলে বাংলাদেশের তেমন কিছু হবে না বা উল্টো আমরা লাভবান হব—এ ধরনের কথা আমার কাছে বিভ্রান্তিকর মনে হয়।

বাস্তবতা হলো, এ মুহূর্তে পৃথিবীতে ইঁদুর দৌড় চলছে—কে কীভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে, সেই দৌড়। পুরো বিষয়টি এখন দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মধ্যে ঢুকে গেছে। যারা আগে থেকে ব্যবস্থা নিয়েছে বা ট্রাম্পের সঙ্গে যোগাযোগ করে রেখেছে, তারা হয়তো দ্রুত নিজেদের স্বার্থ অনেকাংশে রক্ষা করতে পারবে। দুঃখজনক বিষয় হলো, বাংলাদেশ এই দৌড়ে পিছিয়ে পড়ল।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প

এছাড়াও পড়ুন:

পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করল পাকিস্তান-সৌদি আরব

পাকিস্তানের ওপর কেউ হামলা চালালে সৌদি আরব তাদেরকে রক্ষায় এগিয়ে আসবে। আবার সৌদি আরবের ওপর কেউ আগ্রাসন চালালে পাকিস্তানও সৌদি আরবকে রক্ষায় এগিয়ে আসবে। ঠিক এমনই একটি পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে সৌদি আরব ও পারমাণবিক শক্তিধর পাকিস্তান।

জিও নিউজের খবর অনুসারে, বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের সৌদি আরব সফরের সময় এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে শাহবাজের বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতিতে এ চুক্তির কথা জানানো হয়।

আরো পড়ুন:

এক সপ্তাহে সৌদি আরবে ২০ হাজারের বেশি প্রবাসী গ্রেপ্তার

২০ বছর কোমায় থাকার পর মারা গেলেন সৌদির ‘ঘুমন্ত যুবরাজ’

চুক্তি স্বাক্ষরের পর উভয় দেশ একটি যৌথ বিবৃতিতে জানায় যে, ভ্রাতৃত্ব, ইসলামিক সংহতি ও অভিন্ন কৌশলগত স্বার্থের ভিত্তিতে এবং প্রায় আট দশকের দীর্ঘ অংশীদারত্বের ওপর দাঁড়িয়ে দুই পক্ষ কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

ক্রাউন প্রিন্সের আমন্ত্রণেই শরিফ সৌদি আরব সফরে গেছেন বলেও তাদের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, সৌদি আরবের সঙ্গে হওয়া এই প্রতিরক্ষা চুক্তির ফলে এখন ‘এক দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসনকে উভয়ের বিরুদ্ধে আগ্রাসন’ বিবেচনা করা হবে।

বিশেষজ্ঞরা এই চুক্তিকে 'ঐতিহাসিক ও নজিরবিহীন অগ্রগতি' বলে অভিহিত করেছেন। তাদের মতে, এটি পাকিস্তান ও সৌদি আরবের সম্পর্ককে আনুষ্ঠানিক নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতিতে উন্নীত করেছে। তারা বলছেন যে, এই পদক্ষেপ কেবল পাকিস্তান-সৌদি সম্পর্ককে দৃঢ় করছে না, বরং দক্ষিণ এশিয়া এবং মুসলিম বিশ্বের জন্যও এর গুরুত্ব রয়েছে। এটি পাকিস্তানকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষার সবচেয়ে সক্ষম মুসলিম শক্তি হিসেবে তুলে ধরেছে।

বিশ্লেষকরা আরও বলছেন যে, সাম্প্রতিক আঞ্চলিক অস্থিরতা, ইসরায়েলের হামলা, দোহা সম্মেলন এবং আরব বিশ্বে সার্বভৌমত্ব নিয়ে উদ্বেগ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এই চুক্তির তাৎপর্য অনেক বেশি। এটি প্রমাণ করে যে, বর্ধিত হুমকির সময়ে সৌদি আরব পাকিস্তানকে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে বিশ্বাস করছে। 

পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেখানো হয়, চুক্তি স্বাক্ষরের পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে আলিঙ্গন করতে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির, যাকে দেশটির সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে দেখা হয়।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ