চট্টগ্রাম (সন্দ্বীপ) ও নোয়াখালী (হাতিয়া) অংশে আন্তঃজেলা সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির চলমান প্রক্রিয়া সমাপ্ত হওয়ার আগেই বিরোধপূর্ণ ভাসানচরকে হাতিয়ার দাবি করে জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদের একটি ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম হয়েছে।

সোমবার দুপুরে দেওয়া পোস্টে তিনি ভাসানচরকে হাতিয়ার অংশ হিসেবে উল্লেখ করে দলমত নির্বিশেষে সকল রাজনৈতিক নেতাদের হাতিয়ার স্বার্থে নিজেদের ভূমি রক্ষার স্বার্থে এক হওয়ার আহ্বান জানান।

তবে, তার এই পোস্টের ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সন্দ্বীপের আপামর জনগণ। সন্দ্বীপবাসীর দাবি, জেগে ওঠা ভাসানচর মূলত একসময় নদীভাঙণে বিলীন হয়ে যাওয়া সন্দ্বীপের ন্যায়ামস্তি ইউনিয়ন। বিগত সরকারের আমলে অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক ভাসানচরকে নোয়াখালীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।

জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য এহসানুল মাহবুব জুবায়ের ভাসানচরকে নিজেদের দাবি করার আগে ইতিহাস পড়ার ও মানচিত্র দেখার আহ্বান জানন সহকর্মী আব্দুল হান্নান মাসউদকে। ফেসবুকে তিনি লেখেন, নদীভাঙণে বিলীন হওয়া সন্দ্বীপের বহু জমি পুনরায় জেগে উঠেছে। জেগে ওঠা ভাসানচর আগে ছিল সন্দ্বীপের ন্যায়ামস্তি ইউনিয়নের অংশ। এই জেগে ওঠা জমিগুলো এখন নোয়াখালী হাতিয়া, কোম্পানীগঞ্জ আর সুবর্ণচরের নামে রেকর্ড করে নিচ্ছে। ভাসানচর সন্দ্বীপ থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে। সেটি রেকর্ড করা হয়েছে ২৫ কিমি দূরের হাতিয়া উপজেলার নামে।

সন্দ্বীপবাসীর দাবীর যথার্থতা উঠে এসেছে আন্তঃজেলা সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির নিমিত্তে গঠিত কমিটির সিদ্ধান্তে করা জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস চট্টগ্রামের অধীন একটি প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিরোধপূর্ণ ভাসানচর সি এস, আর, এস এবং পেন্টাগ্রাফ পদ্ধতি পর্যালোচনায় চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার সীমানার অন্তর্ভুক্ত মর্মে দৃশ্যমান হয়। অথচ দিয়ারা জরিপে ০৬টি মৌজা নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, সন্দ্বীপের দক্ষিণ উপকূলের কাছাকাছি ২০১০ সালের দিকে নতুন ভূমি জেগে ওঠে। ২০১৭ সালের দিকে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের আলোচনার মধ্যেই সেটির নামকরণ হয় ভাসানচর। একই বছর দিয়ারা জরিপের মাধ্যমে সেটিকে নোয়াখালীর অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হলে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।

২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ সেখানে ‘ভাসানচর থানা’ গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেই প্রজ্ঞাপনেও ভাসানচরকে হাতিয়া ও নোয়াখালীর অংশ বলে উল্লেখ করা হলে সন্দ্বীপের ছাত্র, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ তখন বিক্ষোভ করেন।

সম্প্রতি সন্দ্বীপের বিভিন্ন স্তরের মানুষের দাবির মুখে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় সীমানা জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করে। কমিটিতে সন্দ্বীপ ও হাতিয়ার নির্বাহী কর্মকর্তার পাশাপাশি পেশাজীবীদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১০ এপ্রিল সেই কমিটির একটি দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ভ স নচর ভ স নচর উল ল খ

এছাড়াও পড়ুন:

ঘাড়ব্যথার কারণগুলো কী কী, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা জেনে রাখুন

অনেক কারণে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—

১. সারভাইক্যাল স্পন্ডেলোসিস

২. সারভাইক্যাল স্পন্ডেলোসিস

৩. সারভাইক্যাল রিবস

৪. সারভাইক্যাল ক্যানেল স্টেনোসিস বা স্পাইনাল ক্যানাল সরু হওয়া

৫. সারভাইক্যাল ডিস্ক প্রলেপস বা হারনিয়েশন যেখানে হারনিয়াটেড ডিস্ক নার্ভের ওপর চাপ প্রয়োগ করে

৬. মাংসপেশি, হাড়, জোড়া, লিগামেন্ট, ডিস্ক (দুই কশেরুকার মাঝখানে থাকে) ও স্নায়ুর রোগ বা ইনজুরি

৭. অস্বাভাবিক পজিশনে নিদ্রা

৮. উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্‌রোগ

৯. হাড় ও তরুণাস্থির প্রদাহ এবং ক্ষয়

১০. অস্টিওপরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় ও ভঙ্গুরতা রোগ

১১. হাড় নরম ও বাঁকা হওয়া

১২. রিউমাটয়েড-আর্থ্রাইটিস ও সেরো নেগেটিভ আর্থ্রাইটিস

১৩. সারভাইক্যাল অস্টিও-আর্থ্রাইটিস

১৪. ফাইব্রোমায়ালজিয়া

১৫. সামনে ঝুঁকে বা পাশে কাত হয়ে ভারী কিছু তুলতে চেষ্টা করা

১৬. হাড়ের ইনফেকশন

১৭. ডিস্কাইটিস (ডিস্কের প্রদাহ)

১৮. পেশাগত কারণে দীর্ঘক্ষণ ঘাড় নিচু বা উঁচু করে রাখলে ইত্যাদি।

উপসর্গ

ঘাড়ব্যথা কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুল পর্যন্ত ছড়াতে পারে।

কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুলে অস্বাভাবিক অনুভূতি বা অবশ ভাব।

বাহু, হাত ও আঙুল দুর্বল হতে পারে।

সব সময় ঘাড় ধরে বা জমে আছে মনে হয়।

ঘাড়ের মুভমেন্ট করলে, ঘাড় নিচু করে ভারী কিছু তোলার পর তীব্র ব্যথা।

হাঁচি, কাশি দিলে বা সামনে ঝুঁকলে ব্যথা বেড়ে যায়।

ব্যথা মাথার পেছন থেকে শুরু হয়ে মাথার সামনে আসতে পারে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা

ঘাড়ব্যথার কারণ নির্ণয় করার জন্য প্রয়োজনীয় ল্যাবরেটরি পরীক্ষা হতে পারে—রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা, ঘাড়ের এক্স-রে, এমআরআই বা সিটি স্ক্যান।

চিকিৎসা

চিকিৎসা এর কারণগুলোর ওপর নির্ভর করে।

কনজারভেটিভ চিকিৎসা: ১. ব্যথা বা প্রদাহনাশক ওষুধ ২.ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা। বিভিন্ন ধরনের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা যেমন ম্যানুয়াল বা ম্যানুপুলেশন থেরাপি, থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রোমেডিকেল ইকুইপমেন্ট যেমন ইন্টারফ্যারেনশিয়াল থেরাপি, অতি লোহিত রশ্মি, মাইক্রোওয়েভ ডায়াথারমি, আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, শর্টওয়েভ ডায়াথার্মি ও ইন্টারমিটেন্ট ট্র্যাকশন ইত্যাদির মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়।

সার্জিক্যাল চিকিৎসা: মেডিকেল চিকিৎসায় ভালো না হলে, ব্যথা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকলে, স্নায়ু সমস্যা দেখা দিলে, বাহু, হাত ও আঙুলে দুর্বলতা এবং অবশ ভাব দেখা দিলে এবং প্রস্রাব বা পায়খানার নিয়ন্ত্রণ না থাকলে দ্রুত সার্জিক্যাল চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।

ঘাড়ব্যথা প্রতিরোধে করণীয়

১. সামনের দিকে ঝুঁকে দীর্ঘক্ষণ কাজ করবেন না।

২. মাথার ওপর কোনো ওজন নেবেন না।

৩. প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিতে হবে।

৪. শক্ত বিছানায় ঘুমাবেন।

৫. শোবার সময় একটা মধ্যম সাইজের বালিশ ব্যবহার করবেন, যার অর্ধেকটুকু মাথা ও অর্ধেকটুকু ঘাড়ের নিচে দেবেন।

৬. তীব্র ব্যথা কমে গেলেও ঘাড় নিচু বা উঁচু করা, মোচড়ানো (টুইসটিং) বন্ধ করা।

৭. সেলুনে কখনোই ঘাড় মটকাবেন না।

৯. কাত হয়ে শুয়ে পড়বেন না বা টেলিভিশন দেখবেন না।

১০. কম্পিউটারে কাজ করার সময় মনিটর চোখের লেভেলে রাখবেন।

১১. গরম প্যাড, গরম পানির বোতল দিয়ে গরম সেঁক দেবেন।

১২. ঘাড়ের পেশি নমনীয় ও শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম করতে হবে।

এম ইয়াছিন আলী, চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ঢাকা

আরও পড়ুনকাঁধের ব্যথা বা কাঁধ জমে যাওয়ার কারণ ও করণীয়১৭ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ