গাজায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পর ৪ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে: জাতিস
Published: 8th, April 2025 GMT
জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরায়েল সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করার পর থেকে গাজা উপত্যকায় প্রায় ৪ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বেসামরিক মানুষদের নিরাপত্তার জন্য কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
সোমবার (৭ এপ্রিল) জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমাদের মানবিক সহকর্মীরা জানিয়েছেন, গাজা জুড়ে ইসরায়েলি হামলা অব্যাহতভাবে অব্যাহত রয়েছে, যার ফলে প্রতিদিন ব্যাপক বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটছে।”
ডুজারিক বলেন, “গাজায় শিশুসহ অনেক মানুষ নিহত, আহত এবং সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হচ্ছেন।”
আরো পড়ুন:
আইসিসির গ্রেপ্তার এড়িয়ে যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রে গেলেন নেতানিয়াহু
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বর্বরতা, দেশজুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ
তিনি আরো বলেন, “গাজা জুড়ে বেঁচে থাকাদের বারবার বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে এবং এমন একটি সঙ্কুচিত স্থানে বসবাসে বাধ্য করা হচ্ছে যেখানে তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা অসম্ভব।”
“সামগ্রিকভাবে, আমরা ধারণা করছি যে, যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে প্রায় ৪ লাখ মানুষ আবারও বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এটি গাজার সমস্ত ফিলিস্তিনির ১৮ শতাংশ।” তিনি বলেন।
ডুজারিক জোর দিয়ে আরো বলেন, “তাদের নিরাপত্তা ও বেঁচে থাকার জন্য কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি- দখলদার শক্তি হিসেবে ইসরায়েলের ওপর একটি দায়িত্ব বর্তায়।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “গাজায় মানবিক সাহায্য প্রচেষ্টা ভেঙে পড়ছে।” তিনি বলেন, “গাজার মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য মানবিক পণ্য ও সরঞ্জাম সরবরাহে সীমান্ত ক্রসিংগুলো অবিলম্বে পুনরায় চালু না করা হলে আমরা এটি বেশি দিন ধরে রাখতে পারব না।”
জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় অফিসের উদ্ধৃতি দিয়ে ডুজারিক জানান, গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার ইসরায়েল প্রত্যাখান করেছে।
ভিডিওতে ধরা পড়া স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর ইসরায়েলের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে ডুজারিক বলেন, “জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ভিডিওটি সম্পর্কে খুব সচেতন এবং আমি মনে করি যারা এটি দেখেছেন তাদের মতো, এই ছবিগুলো দেখে তিনিও দেখে হতবাক।”
তিনি ‘যা ঘটেছে তার স্বাধীন, স্বচ্ছ এবং কার্যকর তদন্ত’ করার জন্য জাতিসংঘের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
গাজায় পোলিও টিকা সম্পর্কে ডুজারিক বলেন, “এক মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় কোনো টিকা, খাবার, জ্বালানির কোনো সরবরাহ পাওয়া যায়নি।”
গত ১৮ মার্চ ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় নতুন করে প্রাণঘাতী হামলা চালায় এবং এরপর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৩ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। জানুয়ারিতে সম্পাদিত যুদ্ধবিরতি ও বন্দী বিনিময় চুক্তি ভঙ্গ করে ইসরায়েল গাজায় নতুন করে হামলা চালাচ্ছে।
গত সপ্তাহে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গাজায় হামলা আরো বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা চলছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি নৃশংস হামলায় এ পর্যন্ত ৫০ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল র জন য ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
কারিগরি ক্ষতির (সিস্টেম লস) নামে গ্যাস অপচয় বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস বিতরণ লাইনে অপচয় হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ গ্যাস। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মার্চ পর্যন্ত অপচয় হয়েছে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে আর্থিক ক্ষতি ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর বাইরে সঞ্চালন লাইনে অপচয় হয়েছে ২ শতাংশ।
‘দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়; গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে বলা হয়, ২ শতাংশ অপচয় গ্রহণযোগ্য, তাই ওইটুকু সমন্বয় করেই আর্থিক ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। গ্যাসের অপচয় রোধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ছয়টি গ্যাস বিতরণ সংস্থা।
পেট্রোবাংলা বলছে, গ্যাস অপচয়ের জন্য দায়ী হচ্ছে পুরোনো, জরাজীর্ণ পাইপলাইন; গ্যাস সরবরাহ লাইনের গ্যাসস্টেশন রাইজারে লিকেজ (ছিদ্র); তৃতীয় পক্ষের উন্নয়নকাজে পাইপলাইন ছিদ্র হওয়া এবং আবাসিক খাতে প্রচুর অবৈধ সংযোগ। তবে এসব অপচয় রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থায় মিটারিং/ মনিটরিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা; লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কারিগরি ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা; অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা এবং আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা।
দেশের গ্যাস খাতের চিত্র তুলে ধরে সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে কমতে ১৫ বছর আগের জায়গায় চলে গেছে। গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। গ্যাস চুরি ও অপচয় কমাতে হবে। সঞ্চালন ও বিতরণ মিলে কারিগরি ক্ষতি প্রায় ১০ শতাংশ, যা অনেক বেশি। সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতি কোনোভাবেই ২ শতাংশ হওয়ার কথা নয়। এটা ভালো করে দেখা উচিত।
শিল্পে নতুন সংযোগে গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতির বিষয়টি গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ বন্ধে পেট্রোবাংলা তৎপর আছে, খোঁজ পেলেই বিচ্ছিন্ন করা হবে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিল্পে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যেহেতু তারা বেশি দাম দেবে। তাই অগ্রাধিকার বিবেচনা করে তিনটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের তালিকায় থাকছে, যেসব কারখানায় এখনই সংযোগ দেওয়া যাবে। এগুলো পরিদর্শন প্রায় শেষের দিকে, আগামী সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে।
সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে অগ্রাধিকার পাচ্ছে স্থলভাগের টার্মিনাল। মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় এটি করা হবে। এটি হলে কম দামের সময় বাড়তি এলএনজি কিনে মজুত করা যাবে। তবে এগুলো রাতারাতি করা যায় না, পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।
জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে
তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মো. শোয়েব। তিনি বলেন, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য তৈরি পিএসসির খসড়া জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৫০টি কূপ সংস্কার, উন্নয়ন ও খননের প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে। ৪টি কূপের কাজ চলমান। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আবদুল মান্নান পাটওয়ারী।
সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে
পেট্রোবাংলার আর্থিক দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে পেট্রোবাংলার রাজস্ব আয় ৫৪ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে অর্ধেক বকেয়া। গত মে পর্যন্ত গ্যাস বিল বকেয়া ২৭ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এটি ধীরে ধীরে কমে আসছে। ১৩–১৫ হাজার কোটিতে বকেয়া নেমে এলে সন্তোষজনক। সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে ১৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এরপর সার কারখানায় বকেয়া আছে ৯৬৪ কোটি টাকা। তবে বিদেশি কোনো কোম্পানির কাছে বিল বকেয়া নেই পেট্রোবাংলার। সব বিল শোধ করা হয়ে গেছে।
গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা
পেট্রোবাংলা বলছে, এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে লোকসান শুরু হয় সংস্থাটির। প্রতিবছর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিচ্ছে পেট্রোবাংলা। ২০১৮-১৯ সালে এলএনজি আমদানি শুরু হয়, ওই বছর ভর্তুকি ছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরপর এলএনজি আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তুকিও বাড়তে থাকে। গত অর্থবছরে তারা ভর্তুকি নিয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পেট্রোবাংলা মোট ভর্তুকি নিয়েছে ৩৬ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার হিসাবে গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিট গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ হয়েছে ২৭ টাকা ৫৩ পয়সা। তারা বিক্রি করেছে ২২ টাকা ৯৩ পয়সায়। এর মানে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ৬০ পয়সা।