অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস একের পর এক ম্যাজিক দেখাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেছেন, খুবই নির্মোহভাবে কাজ করছেন মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর মধ্যে ক্ষমতার কোনো লোভ নেই, তিনি দেশের জন্য কাজ করতে চান। তবে তাঁকে দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চাইলে বিতর্ক তৈরি হবে।

মান্না বলেছেন, ‘কেউ কেউ দেখছি অধ্যাপক ইউনূসকে জোর করে পাঁচ বছর ক্ষমতায় রাখতে চান, কিন্তু কেন?’

‘জনশক্তি সভা’র আয়োজনে ‘রাষ্ট্রীয় মূলনীতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন মান্না। আজ মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এ সভা হয়।

মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘ড.

ইউনূস তাঁর সব কাজেই ম্যাজিক দেখাচ্ছেন। তা না হলে রোজার মধ্যে দ্রব্যমূল্য বাড়ার পরিবর্তে কমে কীভাবে? ঈদযাত্রা এত সুন্দর হয় কী করে? রোজার মধ্যেও বিদ্যুতে এত সুন্দর ব্যবস্থাপনা হয় কীভাবে? এ জন্য বলি, ড. ইউনূসকে আমাদের সবার সহযোগিতা করা দরকার।’

মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘মানুষ এরই মধ্যে বুঝেছে, প্রধান উপদেষ্টার মধ্যে ক্ষমতার কোনো লোভ নেই, তিনি দেশের জন্য কাজ করতে চান। আমি যতটুকু বুঝতে পারি, ড. ইউনূস ভোটটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দিয়ে চলে যেতে চান। কিন্তু কেউ কেউ দেখছি তাঁকে জোর করে পাঁচ বছর ক্ষমতায় রাখতে চান, কিন্তু কেন? তিনি ভালো কাজ করছেন, তাই যদি মনে করেন তাঁকে দেশের কল্যাণে রাখতে হবে, তাহলে বিকল্প কিছু চিন্তা করেন। কেন তাঁকে দিয়ে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করে বিতর্কিত করতে হবে?’

রাষ্ট্রীয় মূলনীতি প্রসঙ্গে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এটা নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকুক। আমাদের ভিন্নমতকে ধারণ করতে হবে। ভিন্নমতকে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে। রাষ্ট্রীয় মূলনীতি নিয়ে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে আমি একমত নই। সংস্কার কমিশনের শতাধিক প্রস্তাবের সঙ্গেই নাগরিক ঐক্য একমত নয়।’

মাহমুদুর রহমান মান্না আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রের তো কোনো ধর্মের পক্ষে থাকার কথা নয়। কিন্তু আপনি যদি রাষ্ট্রকে ধর্ম থেকে আলাদা করতে চান, তাহলে তো কেউ কেউ ধর্মবিরোধিতার প্রশ্ন তুলবে। এই জায়গাটায় বহুত্ববাদ একটা ভালো ভূমিকা রাখতে পারে। তবে অনেকেই আছেন, যাঁরা রাষ্ট্রীয় মূলনীতি সমাজতন্ত্র রাখার পক্ষে। আমি এই পক্ষে নই। আমার দলের পক্ষে সমাজতন্ত্র এখন আমাদের লক্ষ্য নয়। রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে সমাজতন্ত্রের ধস নামার পর মনে হয় রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে সমাজতন্ত্রের প্রয়োজন নেই।’

গণশক্তি সভার সভাপতি সাদেক রহমান এ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ক ষমত ইউন স

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ