নওগাঁর মান্দায় ছাত্রীকে বাল্যবিয়ে করে ভাইরাল প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেনকে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার ১৩ দিন পেরিয়ে গেলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় এলাকাবাসীকে নিয়ে মানববন্ধন করেন অভিভাবকরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজ স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রীকে বিয়ে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ আলম মিয়া আজ মঙ্গলবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। 

এর আগে গত রোববার বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলে দুজন দু’ধরনের বক্তব্য দেন। ইউএনও অভিযোগ পেয়েই মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে জানালেও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান। বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক ও অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ হলে আজ মঙ্গলবার তড়িঘড়ি করে তিন সদস্যের কমিটি করেন ইউএনও। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- চক-কামদেব বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ ও স্থানীয় অভিভাবক সদস্য রিপন। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগ থেকে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেন নিজ প্রতিষ্ঠানের এসএসসি পরীক্ষার্থীকে বিয়ে করেন। জন্মসনদ অনুযায়ী ওই শিক্ষার্থীর বয়স ১৬ বছর ৬ মাস। গত ২৬ মার্চ তাকে বিয়ে করে তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে ঘরে তোলেন প্রধান শিক্ষক। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠে। স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবকেরা মানববন্ধন করে প্রধান শিক্ষকের অপসারণসহ বিচার দাবি করেন। তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগও দেন। এরপর ১৩ দিন পেড়িয়ে গেলেও ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। 

স্থানীয় বাসিন্দা ময়েজ উদ্দিন বলেন, আকরাম হোসেনের প্রথম স্ত্রী স্কুল শিক্ষক। দ্বিতীয় স্ত্রীও তার ছাত্রী ছিলেন। অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানি হলে তাকে বিয়ে করেন। এরপর আবারও ছাত্রীকে বিয়ে করেছেন। এবারও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

জানতে চাইলে শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম সরওয়ার স্বপন বলেন, ঘটনাটি নিয়ে শিক্ষক সমাজ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেনকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও সাড়া মেলেনি। বিদ্যালয়ে গিয়েও তার দেখা পাওয়া যায়নি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ আলম শেখ বলেন, আজ চিঠি পেয়েছি। যথাসময়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। 

ইউএনও শাহ আলম মিয়া বলেন, তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তদন্ত কমিটি নিয়ে অসত্য তথ্য দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নওগ আকর ম হ স ন কর মকর ত সদস য র ব ষয়ট উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে বইমেলায় বিক্রি কম, এখনো আশায় আছেন প্রকাশকেরা

রাজশাহী বিভাগীয় বইমেলার প্রথম তিন দিনে লোকজনের ভিড় থাকলেও বেচাকেনা তেমন হয়নি। এতে অনেক প্রকাশকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তবে আগামী কয়েক দিনে বেচাকেনা বাড়বে বলে আশা করছেন প্রকাশকেরা ও আয়োজক কর্তৃপক্ষ।

গত শুক্রবার রাজশাহী জেলা কালেক্টরেট মাঠে ৯ দিনব্যাপী এই বইমেলার উদ্বোধন করা হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায়, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে এবং রাজশাহী বিভাগীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এ মেলা চলবে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত। মেলায় ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ৭০টি বেসরকারি প্রকাশনাসহ মোট ৮১টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে মেলা চলছে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। আর ছুটির দিনে মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়।

উদ্বোধনের আগের দিন বৃষ্টিতে মেলার মাঠ কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। সেই কর্দমাক্ত পরিবেশেই মেলার উদ্বোধন হয়। দর্শনার্থীদের ভোগান্তি কমাতে পরে প্রতিটি স্টলের সামনে ইট বিছিয়ে দেওয়া হয়। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও বিক্রির খরা কাটেনি বলে জানালেন বিক্রেতারা।

গতকাল রোববার সন্ধ্যায় মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের বিভিন্ন অংশে তখনো পানি জমে আছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত মঞ্চের সামনের প্যান্ডেলেও কাদা। সেখানেই কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও সাহিত্য নিয়ে আলোচনা চলছিল, তবে দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতি ছিল নগণ্য। স্টলের সামনে ইটের সলিংয়ের তৈরি রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন অনেকে। অনেকে বই দেখছেন।

সূর্যোদয় প্রকাশনীর বিক্রেতা রিপন আলী বলেন, প্রথম দিন তো কাদাপানির মধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। তখনো মানুষ ছিলেন। এখন ইট বিছানোর পর আরও বেশি মানুষ আসছেন, ভিড়ও করছেন, কিন্তু বই কিনছেন খুব কম।

ঐতিহ্য প্রকাশনীর স্টলে কাদার ওপর চেয়ার পেতে বসে থাকতে দেখা গেল বিক্রয়কর্মী ও চিত্রশিল্পী অর্ণব পাল সন্তুকে। তিনি বলেন, মানুষ আসছেন, ঘুরে দেখছেন, কিন্তু বিক্রি নেই বললেই চলে। মেলার ব্যবস্থাপনা আরও ভালো হতে পারত। আরেক বিক্রেতা আবদুল্লাহ হীল বাকি জানালেন, এমনও স্টল আছে, যেখানে সারা দিনে ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বইও বিক্রি হচ্ছে না।

তবে হতাশার ভিড়ে আশার কথাও শোনালেন কেউ কেউ। চট্টগ্রাম থেকে আসা নন্দন বইঘর প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী সুব্রত কান্তি চৌধুরী বলেন, বেচাবিক্রি আজ না হোক কাল হবে। মানুষ যে মেলায় এসে বই হাতে নিয়ে দেখছেন, এটাই বড় পাওয়া। এতে তাঁদের মধ্যে বই কেনার আগ্রহ তৈরি হবে।

মেলায় আসা পাঠকদের মধ্যে অবশ্য ভিন্ন চিত্র। দুই সন্তানের জন্য শিশুতোষ বই কিনে এক অভিভাবক বলেন, বাচ্চাদের হাতে বই তুলে দেওয়ার আনন্দটাই অন্য রকম।
মেলা থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপ্যাধ্যায়ের বই কিনেছেন মনির হোসেন। তিনি বলেন, মেলায় একসঙ্গে অনেক বই পাওয়া যায়, যা বই কেনার জন্য দারুণ সুযোগ।

রাজশাহী কালেক্টরেট মাঠে বইমেলা উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে আলোচনা সভা। গতকাল রোববার সন্ধ্যায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ