মাতামুহুরী নদীর চরে ছোট-বড় গর্ত। পাঁচ বছর বয়সী মাসুদ ও চার বছরের হুজাইফা সেখানে খেলতে গিয়ে সেসব গর্তের একটিতে পড়ে যায়। এরপর ভেসে যায় নদীর স্রোতে। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়।

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের মাঝের ফাঁড়ি সেতুসংলগ্ন এলাকার মাতামুহুরী নদী থেকে দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, কাকারা ইউনিয়নের মাঝের ফাঁড়ি সেতুসংলগ্ন এলাকা থেকে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি চক্র। বালু উত্তোলনের ফলে নদীতে ছোট–বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়। এসব গর্তের একটিতে পড়ে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

নিহত মো.

মাসুদ ওই এলাকার মোহাম্মদ রাশেদের ছেলে ও হুজাইফা জান্নাত রাশেদের বোনের মেয়ে। মাসুদের বাবা পেশায় অটোরিকশাচালক। ছেলে ও ভাগনির লাশ উদ্ধারের সময় তিনি অটোরিকশা চালাচ্ছিলেন। সড়কেই দুর্ঘটনার খবর পান।

মোহাম্মদ রাশেদ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বোন নাসিমা আকতার এক কিলোমিটার দূরে মাতামুহুরী নদীর পাড়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। সকালে তাঁর ছেলে মাসুদ হেঁটে নাসিমার বাসায় যায়। সেখান থেকে নাসিমার মেয়ে হুজাইফার সঙ্গে মাসুদ খেলতে বের হয়ে মাতামুহুরীর চরে যায়। সেখানে গর্তে আটকে যায় দুজনই। স্থানীয় লোকজন একটু দূরে হুজাইফাকে ভেসে যেতে দেখে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রাশেদ প্রথম আলোকে আরও বলেন, ‘হুজাইফা নদীর পানিতে পড়ে মারা গেছে—এ সংবাদ মাঝের ফাঁড়ি স্টেশনের অটোরিকশাচালকেরা আমাকে প্রথম দেন। পরে তাকে হাসপাতালে নিচ্ছে, এটা জেনে আমি হাসপাতালে যাই। ততক্ষণ পর্যন্ত আমার ছেলের মৃত্যুর খবর আমি জানি না। ভাগনির মরদেহ বাড়িতে নিয়ে গেলে আমি গাড়ি চালিয়ে বাড়িতে যাচ্ছিলাম। পথে বাদশার টেক নামক এলাকায় পৌঁছালে একজন ব্যক্তি আমাকে ফোন করে জানান যে নদীতে আরেক শিশুর লাশ পাওয়া গেছে। সেটি আমার সন্তান মাসুদ। আমি কোনো রকমে গাড়ির স্টিয়ারিং চেপে রেখে সড়কের পাশে গাড়ি দাঁড় করাতে সক্ষম হই এবং সড়কের পাশে ঢলে পড়ি। পরে স্থানীয় লোকজন আমাকে সেখান থেকে তুলে বাড়িতে নিয়ে যায়।’

সরেজমিনে দেখা যায়, মাতামুহুরী নদীর মাঝের ফাঁড়ি সেতুসংলগ্ন এলাকায় প্রায় দেড় শ ফুট প্রশস্ত চর জেগে উঠেছে। সেখানে ধান ও সবজি চাষ করা হয়েছে। কেউ কেউ অগভীর যন্ত্র বসিয়ে বালু উত্তোলন করছেন। এতে ছোট-বড় অনেক গর্ত তৈরি হয়েছে। এসব গর্তে আটকে প্রাণ যাচ্ছে শিশুদের।

আজ বিকেল পাঁচটার দিকে নিহত দুই শিশুকে দেখতে বাড়িতে যান চকরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়াছিন মিয়া। তিনি বলেন, নিহত শিশুদের পরিবার বলেছে তাদের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই। এ কারণে বিনা ময়নাতদন্তে লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ