যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করায় দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বুধবার রাত ১২টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে তথ্য জানানো হয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের অফিশিয়াল এক্স অ্যাকাউন্ট মেনশন করে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘৯০ দিনের শুল্ক স্থগিত করতে আমরা যে অনুরোধ করেছিলাম, তাতে ইতিবাচক সাড়া দেওয়ায় প্রেসিডেন্ট আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার বাণিজ্য এজেন্ডার সমর্থনে আপনার প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করা অব্যাহত রাখব আমরা।’

যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের ওপর যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছিল, বুধবার রাতে তা তিন মাসের জন্য স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এই ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, এই সময় দেশগুলোর পণ্যে পাল্টা শুল্ক ন্যূনতম ১০ শতাংশ কার্যকর হবে। তবে চীনের পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ তিন মাসের জন্য স্থগিত করার অনুরোধ করে সোমবার ট্রাম্পকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন অধ্যাপক ইউনূস। চিঠিতে প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশে শুল্ক-সুবিধা দেওয়ার কথাও বলেন। এ ছাড়া গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর, চিকিৎসাসামগ্রীর মতো বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান রপ্তানি পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক কমানোর কথা বলেন তিনি।

আরও পড়ুনপাল্টা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করলেন ট্রাম্প, এ সময় এই শুল্ক থাকছে ১০ শতাংশ৫১ মিনিট আগে

ট্রাম্পকে পাঠানো চিঠিতে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা আগামী প্রান্তিকের মধ্যে আমাদের পরিকল্পনা অনুসারে কাজ শেষ করব। এসব কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শক সভার জন্য দয়া করে প্রয়োজনীয় সময় দেবেন। তাই আমি আপনাকে অনুরোধ করতে চাই যে বাংলাদেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের কার্যকারিতা তিন মাসের জন্য স্থগিত করুন। আমি আন্তরিকভাবে আশা করি, আপনি আমাদের অনুরোধ রাখবেন।’

আরও পড়ুনপাল্টা শুল্ক তিন মাস স্থগিতের অনুরোধ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিলেন প্রধান উপদেষ্টা০৭ এপ্রিল ২০২৫

চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য এজেন্ডায় বাংলাদেশ পুরোপুরি সহায়তা করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে। এ দেশে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি বাড়ানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির সঙ্গে পুরো বিষয়টি দেখভাল করছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। আমাদের প্রধান কর্মপন্থা হলো তুলা, গম, ভুট্টা, সয়াবিনসহ যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য আমদানি বৃদ্ধি করা; যা যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকদের আয় ও জীবনযাত্রায় ভূমিকা রাখবে। যুক্তরাষ্ট্রের তুলার বাজারের প্রবৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশে বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করছি, যা পুরোপুরি শুল্কমুক্ত সুবিধা।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউন স

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ