বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন রাজনৈতিক কারণে বা সংবাদমাধ্যমের অতিরঞ্জন বলে নাকচ করা যাবে না: ভারত
Published: 10th, April 2025 GMT
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নৃশংসতা ও সহিংসতার ঘটনা রাজনৈতিক কারণে বা সংবাদমাধ্যমের অতিরঞ্জন বলে নাকচ করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল। বুধবার নয়াদিল্লিতে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
রণধীর জয়সোয়াল বলেন, ‘ব্যাংককে বৈঠকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতার ইস্যু উত্থাপন করা হয়েছিল। তাদের ওপর নৃশংসতা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এবং সেগুলো উড়িয়ে দেওয়া যায় না অথবা রাজনৈতিক কারণে ঘটেছে বা সংবাদমাধ্যমের অতিরঞ্জন বলে নাকচ করা যাবে না।’
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে ৪ এপ্রিল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হয়। অধ্যাপক ইউনূস প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশ ও ভারতের শীর্ষ নেতাদের এটাই ছিল প্রথম বৈঠক।
রণধীর জয়সোয়াল বলেন, ওই বৈঠকে বাংলাদেশের কাছে এই বার্তা দেওয়া হয় যে ঢাকার সঙ্গে একটি ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্ক চায় নয়াদিল্লি।
ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেন, সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে, বাংলাদেশ উত্তর–পশ্চিমাঞ্চলে ভারতের ‘চিকেন নেক’ (শিলিগুড়ি করিডর)–এর কাছে একটি চীনা বিমানঘাঁটি স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে। জবাবে জয়সোয়াল বলেন, ‘আমাদের সীমান্তের কাছে যা কিছু ঘটছে, যেগুলো আমাদের নিরাপত্তার ওপর আঘাত হানতে পারে, সেগুলোর সবকিছুর ওপর আমরা নিবিড়ভাবে নজর রাখছি এবং যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
ব্যাংককে বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তিস্তা ইস্যু উত্থাপন করেছিলেন। এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে জয়সোয়াল বলেন, তিস্তার পানিবণ্টনের ইস্যুটি একটি দ্বিপক্ষীয় বিষয়। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের তিস্তাসহ ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে এবং এসব বিষয় দেখার জন্য যৌথ নদী কমিশন ও টেকনিক্যাল কমিটির মতো দ্বিপক্ষীয় ব্যবস্থা রয়েছে।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের পরদিন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল ইসলাম বলেছিলেন, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর প্রসঙ্গ উত্থাপন করলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতিক্রিয়া নেতিবাচক ছিল না। এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে রণধীর জয়সোয়াল বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান আমরা আগেই জানিয়েছি। নতুন করে বলার মতো কিছু আমার কাছে নেই।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’