এক প্রজন্মে শুরু, চার প্রজন্ম ধরে ক্রেতা টানছে বাগমারার ‘পাতলা দই’
Published: 10th, April 2025 GMT
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার গ্রামাঞ্চলের কোনো আয়োজন যেন পাতলা দই ছাড়া পূর্ণতা পায় না। একটি পরিবার এই দই বানানো শুরু করেছিল। সেই পরিবারের হাত ধরেই চার প্রজন্ম ধরে ক্রেতার পছন্দের তালিকায় আছে ‘পাতলা দই’।
এখন এই ‘পাতলা দই’ বানান রাজশাহীর বাগমারার আকবর আলী (৫৫)। তিনি বাপ-দাদার এই পেশা আঁকড়ে ধরে আছেন ৪০ বছর ধরে। তাঁর দুই ভাইও একই কাজে যুক্ত আছেন।
বাগমারার দধির খয়রা গ্রামে থাকে আকবর আলীর পরিবার। গ্রামের নামকরণের সঙ্গে পরিবারটির একটি সম্পর্ক আছে, এমনটাই দাবি স্থানীয়দের। আকবরের বাড়ির পাশে দুই ভাই আফসার আলী ও তাসের আলীর বাস। পরিবারের বেশির ভাগ সদস্য এই দই তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকেন।
আকবর আলী বলেন, তাঁর দাদা শুকুদ্দিন আর বাবা জহির উদ্দিন পাতলা দই বানাতেন। ১৫ বছর বয়স থেকে তিনিও এ পেশায় জড়িয়ে পড়েন। এখন তাঁর ছেলেও পারিবারিক এ কাজে যুক্ত হয়েছেন। আকবরের দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছেলে স্নাতোকত্তর পাস করে চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন, সঙ্গে পারিবারিক এ উদ্যোগের সঙ্গেও যুক্ত আছেন।
সম্প্রতি মচমইল হাটে দেখা মেলে আকবর আলী ও তাঁর ছেলে শরিফুল ইসলামের। ক্রেতাদের চাহিদা মোতাবেক দই বিক্রি করছেন তাঁরা। শরিফুল বলেন, পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে তিনি লেখাপড়ার ফাঁকে দই বানানো ও বিক্রির সঙ্গে যুক্ত থাকেন।
দই বানানোর প্রক্রিয়া সম্পর্কে বাবা-ছেলে বলেন, তাঁরা দই বানানোর মূল উপকরণ দুধ কিনে আনেন উপজেলার বিভিন্ন হাট থেকে। প্রতিদিন প্রায় ৯০ কেজি পরিমাণ পাতলা দই তৈরি করেন। এসব দই তাঁরা উপজেলার মচমইল, হাট গাঙ্গোপাড়াসহ কয়েকটি হাটে পসরা সাজিয়ে বিক্রি করেন। আবার কখনো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আপ্যায়নের জন্য চাহিদা মোতাবেক দই সরবরাহ করেন। ওজনভেদে ২৫ থেকে ৯০ টাকায় দই বিক্রি করেন তাঁরা।
মচমইল উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবদুস সালাম বলেন, আকবর আলীর পরিবার দীর্ঘদিন ধরে এ পেশায় আছেন। এলাকায় তাঁদের বানানো পাতলা দইয়ের বেশ কদর। এই দইয়ের স্বাদও অন্য রকম।
মচমইল হাটে দই কিনতে আসা বিলবাড়ি গ্রামের বৃদ্ধ শুকচাঁন বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই পাতলা দইয়ের খদ্দের।
আকবর আলীর বিষয়ে শুভডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বলেন, তাঁদের পরিবারটি এলাকার পুরোনো দই বিক্রেতা। তাঁদের পরিবারের বানানো দই এলাকার ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দই ব ন ন র পর ব র ব গম র র আল র
এছাড়াও পড়ুন:
আসামি না হয়েও স্বেচ্ছায় কারাগারে যাওয়া সেই যুবক প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার
চট্টগ্রামে মাদকের একটি মামলায় আসামি সেজে আদালতে আত্মসমর্পণের পর কারাগারে যাওয়া এক যুবককে জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার (শ্যোন অ্যারেস্ট) দেখিয়েছেন আদালত। তাঁর নাম মো. রাকিব। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন মাহমুদ শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রকৃত আসামি মো. সুমনের হয়ে আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেন রাকিব। আদালতের আদেশে ১ জুলাই থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে আটক রাকিবকে জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তা মঞ্জুর করেন। আসামিকে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের ৩১ আগস্ট নগরের আকবর শাহ থানার কৈবল্যধাম এলাকায় একটি পিকআপ ভ্যানে অভিযান চালিয়ে ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করে র্যাব, যার মূল্য ৪ লাখ টাকা। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় গাড়িচালক রাহাত ইসলামকে। পালিয়ে যান চালকের সহকারী (হেলপার) মো. সুমন। এ ঘটনায় র্যাব কর্মকর্তা বাদী হয়ে আকবর শাহ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে রাহাত ইসলাম ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়।
আদালত পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে পলাতক আসামি সুমনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরই মধ্যে সুমনের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। বিষয়টি জানতে পেরে সুমন নিজেকে কারামুক্ত রাখতে তাঁর পরিবর্তে নোয়াখালীর রাকিবকে আদালতে আত্মসমর্পণ করায় ১ জুলাই। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তফা শুনানি শেষে আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। সুমনের হয়ে রাকিব আত্মসমর্পণের সময় তাঁর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ওয়াহিদ মুরাদ।
আদালতে একজনের পরিবর্তে আরেকজন আত্মসমর্পণের বিষয়টি ধরা না পড়লেও কারাগারে গিয়ে ধরা পড়ে। জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজে (তথ্যভান্ডার) ভোটারদের আঙুলের ছাপ সংরক্ষিত আছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পদ্ধতি ব্যবহার শুরু করে চট্টগ্রাম কারা কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে আঙুলের ছাপে ধরা পড়েছে অনেক বন্দীর আসল পরিচয়। এসব ঘটনায় মামলাও হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি মাসের জুলাই পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করে জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আসা ১৬ জনের আঙুলের ছাপে শনাক্ত করা হয়।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আদালত থেকে কারাগারে আসা প্রত্যেক নতুন আসামির আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। সেখানে আসামির জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা আসল পরিচয় উঠে আসে। ইকবাল হোসেন আরও বলেন, ‘সুমনের হয়ে কারাগারে আসা রাকিব স্বীকার করেছেন তিনি মাদক মামলার প্রকৃত আসামি নন। ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি সুমন সেজেছেন। তাঁকে বলা হয়েছে, দ্রুত কারাগার থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া হবে। তাই তিনি রাজি হয়েছেন। বিষয়টি চিঠি দিয়ে আদালতকে জানানো হয়েছে।’
আরও পড়ুনচট্টগ্রামে ‘আয়নাবাজি’, ধরা পড়েছে আঙুলের ছাপে০৮ নভেম্বর ২০২৩কারাগার থেকে চিঠি পাওয়ার পর মামলা করার নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান। একই সঙ্গে আসামিকে আত্মসমর্পণকারী আইনজীবী ওয়াহিদ মুরাদের কাছে কারণ ব্যাখ্যা চেয়েছেন আদালত। আদালতের প্রসিকিউশন শাখার আকবর শাহ থানার জিআরও সাইদুর রহমান বাদী হয়ে গত রোববার রাতে নগরের কোতোয়ালি থানায় প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় মো. রাকিব ও মো. সুমনকে আসামি করা হয়। সুমন এখনো পলাতক।