মার্কিন শুল্কের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চীনের ‘হাত মেলানোর’ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে অস্ট্রেলিয়া। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) অস্ট্রেলিয়া মার্কিন শুল্ক মোকাবেলায় বেইজিংয়ের একসাথে কাজ করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, তারা তাদের বাণিজ্যকে বৈচিত্র্যময় করে তুলবে এবং তাদের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার চীনের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনবে।

অস্ট্রেলিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী রিচার্ড মার্লেস স্কাই নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “বিশ্বে চলমান যেকোনো প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে আমরা চীনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে থাকব না।” তিনি চীনা রাষ্ট্রদূতের বাণিজ্যে ‘হাত মেলানোর’ প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করে এ কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

চীন বাদে সব দেশের ওপর নতুন শুল্ক স্থগিত করলেন ট্রাম্প

চীনে নার্সিং হোমে আগুন, ২০ জনের মৃত্যু

অস্ট্রেলিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা সেটি করছি না। আমরা যা করছি তা হলো অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় স্বার্থ অনুসরণ করা এবং বিশ্বজুড়ে আমাদের বাণিজ্যকে বৈচিত্র্যময় করা।”

তিনি বলেন, “অস্ট্রেলিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, ব্রিটেন এবং মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করে তার অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করবে।”

দ্য এজ পত্রিকায় একটি মতামত কলামে, অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত জিয়াও কিয়ান অস্ট্রেলিয়ার প্রতি বহুপাক্ষিক বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থা রক্ষার জন্য বেইজিংয়ের সঙ্গে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন।

জিয়াও বলেন, “নতুন পরিস্থিতিতে, চীন বিশ্বের পরিবর্তনের সাথে যৌথভাবে সাড়া দেওয়ার জন্য অস্ট্রেলিয়া এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে হাত মিলিয়ে যেতে প্রস্তুত।”

গতকাল বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করা শুল্ক নাটকীয়ভাবে স্থগিত করেন। তবে তিনি চীনের ওপর শুল্ক আরো বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করার ঘোষণা দিয়েছেন। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে।

বিষয়টি অস্ট্রেলিয়ার জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, দেশটি তার পণ্যের প্রায় এক তৃতীয়াংশ চীনে পাঠায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অস্ট্রেলিয়ার মোট পণ্য রপ্তানির ৫ শতাংশেরও কম।

অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সতর্ক করে বলেছে,  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য প্রধান অর্থনীতির মধ্যে শুল্ক এবং অন্যান্য বাণিজ্য বিধিনিষেধ নিয়ে চলমান অনিশ্চয়তা দেশটির ব্যবসায়িক বিনিয়োগ এবং গৃহস্থালি ব্যয়ের ওপর শীতল প্রভাব ফেলতে পারে।

ট্রাম্প অস্ট্রেলিয়ার ওপর একতরফা ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা অন্যান্য দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা পারস্পরিক শুল্কের সর্বনিম্ন স্তর।

প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেছেন, ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা মিত্র অস্ট্রেলিয়ার ওপর শুল্কের ‘কোনো যুক্তিসঙ্গত ভিত্তি নেই’। তার সরকার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেবে না।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রস ত ব র ওপর শ

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ