গাজায় সেই চিকিৎসাকর্মীদের ওপর কাছ থেকে ১০০টির বেশি গুলি ছুড়েছে ইসরায়েলি বাহিনী: অডিও বিশ্লেষণের তথ্য
Published: 11th, April 2025 GMT
গাজায় ১৫ জন চিকিৎসাকর্মীকে হত্যার সময় ইসরায়েলি সেনারা ১০০টিরও বেশি গুলি ছুড়েছে। এর মধ্যে কিছু গুলি মাত্র ১২ মিটার (৩৯ ফুট) দূর থেকে করা হয়েছে। একটি মুঠোফোনে ধারণ করা ভিডিওর ফরেনসিক অডিও বিশ্লেষণে এমনটি দেখা গেছে। অডিও বিশ্লেষণের কাজটি করিয়েছে বিবিসি ভেরিফাই। দুজন বিশেষজ্ঞ এই বিশ্লেষণ করেন।
বিবিসি ভেরিফাইয়ের যাচাই করা ১৯ মিনিটের ওই ভিডিও পরীক্ষা করে দেখা গেছে, গত ২৩ মার্চ ফিলিস্তিনের গাজার সর্বদক্ষিণের শহর রাফার কাছে ঘটনাটি ঘটে। ভিডিওতে ঘটনার আগের মুহূর্তগুলোও দেখানো হয়েছে।
বিশ্লেষণে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্টের দাবির মিল পাওয়া গেছে। সংস্থাটি এর আগে দাবি করেছিল, ওই চিকিৎসাকর্মীদের ‘খুব কাছ থেকে নিশানা করা হয়েছিল।’ তবে ৫ এপ্রিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, আকাশ থেকে তোলা এক ভিডিও ফুটেজে সৈন্যদের ‘দূর থেকে’ গুলি চালানোর দৃশ্য দেখা গেছে।
বিবিসি ভেরিফাই ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা সরাসরি এ বিশ্লেষণের বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
আইডিএফের এক মুখপাত্র বলেছেন, তাঁরা এ হামলার তদন্ত করছেন এবং বারবার দাবি করেছেন, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছয়জন হামাসের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তবে এ দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি আইডিএফ। ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট ইসরায়েলি বাহিনীর এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে, যেমন প্রত্যাখ্যান করেছিলেন হামলায় বেঁচে যাওয়া নবম চিকিৎসাকর্মী। আইডিএফ তাঁকে ১৫ ঘণ্টা আটক করে রেখেছিল।
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, তারা হামলায় নিহত চিকিৎসাকর্মী রিফাত রাদওয়ানের মুঠোফোন থেকে সম্পূর্ণ ভিডিওটি উদ্ধার করেছে। আইডিএফ তাঁকে হত্যা করে ছোট একটি গর্তে কবর দিয়ে দেয়।
রিফাত রাদওয়ানের ধারণ করা ভিডিওতে দেখা গেছে, রাতে সম্মুখ বাতি ও জরুরি ফ্লাশলাইট জ্বালিয়ে গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন চিকিৎসাকর্মীদের ওই দল। এ সময় হাই-ভিউ জ্যাকেট পরে থাকায় কমপক্ষে একজন কর্মীকে হলেও দেখা যাওয়ার কথা।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছিল, গাড়িতে থাকা ওই দলটির গতিবিধি সন্দেহজনক ছিল এবং তাঁরা গাড়ির বাতি নিভিয়ে অগ্রসর হচ্ছিল। কিন্তু রিফাত রাদওয়ানের করা ভিডিওটি প্রকাশিত হওয়ার পর সেনাবাহিনী তাদের বক্তব্য পরিবর্তন করে স্বীকার করেছে যে তাদের দাবি ভুল ছিল।
বিশেষজ্ঞরা বিবিসি ভেরিফাইকে জানিয়েছেন, তাঁরা মুঠোফোনের মাইক্রোফোন থেকে গুলির দূরত্ব পরিমাপ করতে শব্দ তরঙ্গ এবং স্পেকট্রোগ্রাম ব্যবহার করেছেন। সংক্ষিপ্ত সময়ের ব্যবধান ইঙ্গিত দেয়, ভিডিওটি যত এগিয়েছে, মাইক্রোফোন ও গুলির মধ্যকার দূরত্ব তত কমেছে।
অডিও বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রথম গুলিটি করা হয় ৪০ থেকে ৪৩ মিটার দূর থেকে। কিন্তু ভিডিওর শেষ দিকে গুলির শব্দ এসেছে মাত্র ১২ মিটার দূর থেকে।
যুদ্ধাঞ্চলে তদন্ত পরিচালনার ক্ষেত্রে ২০ বছরেরও বেশি সময়ের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সাবেক ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা ক্রিস কব-স্মিথ বলেন, ৫০ মিটার দূর থেকে ইসরায়েলি সেনারা ‘স্পষ্টতই দলটিকে মানবিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত দল হিসেবে চিহ্নিত করতে পারতেন।’ তাঁরা নির্ণয় করতে পারতেন, ওই চিকিৎসাকর্মীরা নিরস্ত্র ছিলেন এবং কোনো হুমকি তৈরি করছিলেন না।’
অডিও বিশেষজ্ঞ রবার্ট মাহের বলেন, গুলির শব্দ যেভাবে আসছিল, তাতে এটি স্পষ্ট যে একই সময়ে একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
মাহের বলেন, একের পর এক গুলি বর্ষণের কারণে গুলির শব্দ পৃথকভাবে শনাক্ত করা যায়নি। তবে উভয় বিশেষজ্ঞই আলাদাভাবে নির্ণয় করেছেন যে ওই সময় ১০০টিরও বেশি গুলি ছোড়া হয়েছিল। তবে কী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, তা নির্ণয় করতে পারেননি বিশেষজ্ঞরা।
বিবিসির অন্য এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ২৩ মার্চ ইসরায়েলি সেনারা কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স ও একটি অগ্নিনির্বাপণের কাজে ব্যবহৃত ট্রাকে যে নির্বিচারে গুলি চালান, সে ঘটনার ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। ওই ঘটনায় ১৫ উদ্ধারকর্মী (চিকিৎসাকর্মী) নিহত হয়েছিলেন।
প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিআরসিএস) এ ভিডিও প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, অ্যাম্বুলেন্সসহ ওই গাড়িগুলো রাতের অন্ধকারে সম্মুখবাতি জ্বালিয়ে ও জরুরি ফ্লাশলাইট চালু রেখে ছুটে চলেছে। হঠাৎই এসব যানের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু হয়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’