চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় মুন্সিরহাট বাজারে অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ১৪টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় প্রায় ৩ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিদের। তাঁরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে সহায়তা দাবি করেছেন।

উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল সাড়ে ১০টায় উপজেলার মুন্সিরহাট বাজারের দোকানি আলম হাওলাদারের ‘আলম স্টোর’ নামের দোকানে আগুনের সূত্রপাত। পরে তা পাশের মুক্তার প্রধানীয়ার ‘মুক্তার এন্টারপ্রাইজ’, কিশোর শীলের সেলুন, শম্ভুনাথ মজুমদারের ‘মজুমদার ফার্মেসি’, মাসুদ খানের ‘কুমিল্লা মিষ্টান্ন ভান্ডার’, ফখরউদ্দিন ফরহাদের ‘হক ফার্মেসি’, গণেশ ভৌমিকের ‘ঝর্ণা শিল্পালয়’, অনিল চন্দ্রের ‘কামনা ফার্মেসি’, নবীর হাজরার ‘নবীর হার্ডওয়্যার’, বিল্লাল হোসেনের ‘বিল্লাল স্টোর’, ফরিদ প্রধানীয়ার ‘এসএস এন্টারপ্রাইজ’, মনির প্রধানীয়ার ‘মনির স্টোর’সহ আরও দুজন দোকানির প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সূত্রগুলো থেকে আরও জানা যায়, খবর পেয়ে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস বিভাগের কর্মীরা ঘটনাস্থলে যান। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তাঁরা আজ বেলা সাড়ে ১১টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী গণেশ ভৌমিক বলেন, অনেক কষ্ট করে সোনার দোকানটি করেছিলেন। আগুনে সব পুড়ে গেছে। এ ঘটনায় তাঁর প্রায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখন তিনি নিঃস্ব। সব মিলিয়ে দোকানিদের প্রায় ৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি তাঁর।

বিল্লাল স্টোরের মালিক বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘এনজিও থেকে ঋণ নিয়া এবং স্বজনদের কাছ থেকে ধার কইরা দোকানটি করছিলাম। আগুনে সব পুইড়া গেল। এই দোকানের আয়েই আমার সংসার চলত। এহন সংসার চলব ক্যামনে। আবার দোকান করুম ক্যামনে। আমি এখন পথের ফকির। আগুনে আমার কপাল পুড়ছে।’

বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে জানিয়েছেন উপজেলা ফায়ার সার্ভিস বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, মোট পাঁচটি ইউনিট একসঙ্গে কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমজাদ হোসেন বলেন, তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিদের সহায়তার চেষ্টা করবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ