সাত কলেজ নিয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় কি সফল হবে
Published: 11th, April 2025 GMT
এ বছরের ২৭ জানুয়ারি ঢাকার সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আকস্মিকভাবে এ সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিন পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়, এসব কলেজকে একত্র করে একটি আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছে সরকার। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে বলেও জানানো হয়।
প্রাথমিকভাবে এই কমিটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ‘জুলাই ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয়’ করার ব্যাপারে আলোচনা করেছিল। তবে ১৬ মার্চ শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ঘোষণা করা হয়, এর নাম হবে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’। প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের পদ্ধতি কেমন হতে পারে, তারও একটি ধারণা পাওয়া যায় ওই সময়ে। কিন্তু পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিদ্যমান সমস্যাগুলো বিবেচনায় না নিলে এই উদ্যোগও ব্যর্থ হতে পারে।
২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার পর ধারণা করা গিয়েছিল, এর ফলে সাত কলেজে অন্তত শিক্ষার মান বাড়বে। এভাবে দেশের অন্য কলেজগুলোকেও একেকটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে আনার পরিকল্পনা ছিল। দেখা যাচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়েও এসব কলেজে শিক্ষার মান বাড়ানো সম্ভব হয়নি। মজার ব্যাপার হলো, ঢাকার বাইরে থেকে এসব কলেজে বদলি হয়ে আসার জন্য শিক্ষকদের মধ্যে রীতিমতো যুদ্ধ চলে।
সাত কলেজের মধ্যে ইডেন কলেজ ও তিতুমীর কলেজ বাদে বাকিগুলোয় স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের পাশাপাশি উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণিতেও শিক্ষার্থী পড়ানো হয়। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের এবং ক্যাডারভুক্ত শিক্ষকদের রেখেই একটি ভিন্ন মডেলে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালানোর কথা শোনা যাচ্ছে। এই সাত কলেজে বর্তমানে এক হাজারের বেশি শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। বোধ করি, তাঁদের বিরোধিতা ও আন্দোলনের ভয়েই গোলমেলে এই মডেলের কথা ভাবা হচ্ছে।
প্রাথমিক পরিকল্পনায় আছে, ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় অবস্থিত কলেজগুলোকে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিন্ন ভিন্ন অনুষদে রূপান্তর করা হবে। এখনকার মতো একেকটি কলেজে সব বিষয় পড়ানো হবে না। এক বা একাধিক কলেজে অনুষদভিত্তিক ক্লাস হবে। যেমন সরকারি বাঙলা কলেজে হতে পারে মানবিক অনুষদের ক্লাস। এভাবে অন্য কলেজগুলোতে অন্য অনুষদের ক্লাস হবে। এর নাম দেওয়া হচ্ছে ‘হাইব্রিড মডেল’! ৪০ শতাংশ ক্লাস অনলাইনে এবং ৬০ শতাংশ ক্লাস সরাসরি নেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। বর্তমানে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়েও একই সঙ্গে অনলাইনে ও সরাসরি ক্লাস নেওয়া হয়। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিচার করা দরকার, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এই ফর্মুলা কেন ব্যর্থ হলো।
সাত কলেজের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা যদি অর্ধেকেও নামিয়ে আনা হয়, তারপরও এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীকে নিয়ন্ত্রণের কাজটি সহজ হবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত হওয়ার আগে এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করতেন, প্রশাসনিক কাজে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ঠিকমতো তাঁদের সহযোগিতা করে না। অধিভুক্ত হওয়ার পর এসব অভিযোগের তির ঘুরে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। তা ছাড়া অর্থসংক্রান্ত যে অস্বচ্ছতার অভিযোগ ছিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে, সেগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধেও উচ্চারিত হয়েছে।
অধিভুক্তি বাতিলের আগের দিন ২৬ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও নিউমার্কেট এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। এর আগে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন।
সেখানে তাঁদের দাবি ছিল, সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় কোটা বাতিল করতে হবে, শ্রেণিকক্ষের ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না, ভর্তি করার ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত বিবেচনা করতে হবে, ভর্তি পরীক্ষায় নেগেটিভ মার্ক যুক্ত করতে হবে এবং সাত কলেজের ভর্তি ফির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
লক্ষ করা যায়, দাবিগুলো মূলত ভর্তিপ্রক্রিয়া ও ভর্তিপরীক্ষা–সম্পর্কিত। এগুলোর সুরাহা করা কোনো জটিল কাজ ছিল না। এসব দাবি দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্যই প্রাসঙ্গিক। শিক্ষার মান বাড়ানোর প্রশ্নেও দাবিগুলো যৌক্তিক। তবে আমাদের দেশে অনেকেরই ধারণা, কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ দিয়ে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে শিক্ষার গুণগত মান বাড়ানো সম্ভব!
● তারিক মনজুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কল জ র শ ক ষ র থ স ত কল জ র ব কল জ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
করোনাসংক্রমণ প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য জরুরি যে যে নির্দেশনা
ডেঙ্গু ও করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলোর জন্য জরুরি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে সারাদেশে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচারণা কাজে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরকে সম্পৃক্ত করতে বলা হয়েছে। এ সংক্রান্ত আদেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান ও সংশ্লিষ্টদের পাঠানো হয়েছে।
আজ রোববার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এক চিঠি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিঠি ২টি পাঠানো হলো। এই চিঠির নির্দেশনা মোতাবেক এ অধিদপ্তরের আওতাধীন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উল্লিখিত নির্দেশনাগুলো প্রতিপালনের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
নির্দেশনা ১-এ বলা হয়েছে, দেশে ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচারণা কাজে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদেরকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
নির্দেশনা ২- এ বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে নির্দেশনাগুলো হলো-
১.বারবার প্রয়োজনমতো সাবান দিয়ে হাত ধোয়া (অন্তত: ২০ সেকেন্ড),
২. জনসমাগম এড়িয়ে চলা এবং বাইরে বের হলে মুখে মাস্ক পরা,
৩. আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা,
৪. অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকা, হাঁচি-কাশির সময় বাহ-টিস্যু-কাপড় দিয়ে নাক মুখ ঢেকে রাখা।