জুলাই ফাউন্ডেশনের অর্থ আত্মসাৎ, নাগরিক কমিটির নেত্রী কারাগারে
Published: 11th, April 2025 GMT
জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার ও আহতদের সহায়তা করার লক্ষ্যে গঠন করা জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের অর্থ আত্মসাতের মামলায় জাতীয় নাগরিক কমিটির ফতুল্লা থানা কমিটির সদস্য দিলশাদ আফরিন পিংকিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জেনিফার জেরিনের আদালত শুনানি শেষে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ কামরুল হোসেন তাকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।
দিলশাদ আফরিন পিংকির পক্ষে তার আইনজীবী ঢাকা বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হোসেন আলী খান হাসান জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
শুনানিতে তিনি বলেন, আসামি সম্পূর্ণ নির্দোষ। মামলার ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানেন না। তাকে হয়রানি করার জন্য আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের যে কথা বলা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তার জামিন প্রার্থনা করছি।
শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বলে জানিয়েছেন রমনা মডেল থানার আদালতের প্রসিকিউশন বিভাগের উপ-পরিদর্শক জিন্নাত হোসেন।
দিলশাদ আফরিন পিংকিকে বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাতে রমনা থানাধীন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
প্রতারণা করে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) ফাউন্ডেশনের লিগ্যার অফিসার ফাতেমা আফরিন পায়েল রমনা মডেল থানায় মামলা করেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, জুলাই বিপ্লবে আহত হিসেবে ক্ষতিপূরণ পেতে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে আবেদন করেন বুলবুল সিকদার ও রকিবুল সিকদার। তাদের কাগজপত্র দেখে সন্দেহ হওয়ায় জুলাই ফাউন্ডেশনে তথ্য দেওয়ার জন্য আসতে বলা হয়। ২১ মার্চ তারা ফাউন্ডেশনে উপস্থিত হলে জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত না হওয়া সত্ত্বেও দিলশাদ আফরিন ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র সত্যায়ন করার ব্যবস্থা করেন। পরবর্তী সময়ে গুরুতর আহতদের তালিকায় রকিবুলের নাম দিতে ৫০ হাজার এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে আরো ৩০ হাজার টাকা নেন। জুলাই বিপ্লবে শহীদ আহসান কবির শরিফের স্ত্রী হাদিসা আক্তার হ্যাপিকে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে আড়াই লাখ টাকা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ৫০ হাজার টাকা নিয়েও আত্মসাৎ করেন। এছাড়া, আরো কয়েক জনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করে।
গত ৮ এপ্রিল জাতীয় নাগরিক কমিটির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব আখতার হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে দিলশাদ আফরিন পিংকিকে বহিষ্কারের কথা জানানো হয়।
ঢাকা/মামুন/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে
জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং দ্রুত স্থায়ী বিধানে যুক্ত করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় ৯ ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে রেখেছেন ‘জুলাই যোদ্ধারা’। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের (আহত) ব্যানারে তাঁরা এ ‘অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করছেন।
রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ে আশপাশের সড়কগুলোতে। এসব সড়কে দিনভর ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। ফলে বৃষ্টির মধ্যে জীবনের তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে চলে গণপরিবহন, অনেক যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে হেঁটে হেঁটে। বিশেষ করে অফিসফেরত মানুষকে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
বেলা ১১টায় শাহবাগ মোড়ের সঙ্গে যুক্ত সব সড়কের মুখ আটকে দিয়ে সড়কের মাঝখানে অবস্থান নেন অবরোধকারীরা। এ সময় তাঁরা জুলাই সনদ দ্রুত বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবি জানান। অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুলাই যোদ্ধা সংসদ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম ওই কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়। এ সময় অবরোধকারীরা ‘জুলাই নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘জুলাইয়ের চেতনা দিতে হবে ঘোষণা’, ‘জুলাই সনদ দিতে হবে, দিতে হবে, দিতে হবে’ স্লোগান দিতে থাকেন।
বন্ধ হয়ে পড়ে শাহবাগ থেকে ফার্মগেট, সায়েন্স ল্যাব ও গুলিস্তানগামী প্রধান সড়কগুলোও। ফলে সকাল থেকেই এসব এলাকায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এসব সড়কে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলো বিকল্প পথে চলাচল করে।
বেলা তিনটার দিকে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ–সংলগ্ন মূল সড়কে পুলিশের ব্যারিকেড ও বাঁশ ব্যবহার করে সড়ক আটকে রেখেছেন অবরোধকারীরা। শাহবাগ থানার সামনের সড়কেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন তাঁরা।
বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ষাটোর্ধ্ব নূরে আলম বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে যাব। কোনো বাস পাচ্ছি না। রিকশায় যে কিছু দূর যাব, তারাও ভাড়া বেশি চাচ্ছে।’ একপর্যায়ে হেঁটেই রওনা দেন তিনি।
এক পথচারী ইমরান হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুই দিন পরপর সড়ক অবরোধ হয়। এর ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের।’
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শাহবাগ থানার সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হতে দেখা যায় মোটরবাইক আরোহীদের। শাহবাগ থানার সামনে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশাকে বাধা দিলে চালক বলেন, ‘এত দাবিদাওয়া এত দিন আছিলো কই।’ তবে গণপরিবহন আটকে দেওয়া হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যানবাহন এবং তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স শুরু থেকেই চলাচল করতে দেখা গেছে।
অবরোধকারীদের দাবি
অবরোধকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি; শহীদ পরিবার ও আহতদের আজীবন সম্মান; চিকিৎসা, শিক্ষা ও কল্যাণের পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের প্রতি দায়িত্ব গ্রহণ করা; আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান ও কল্যাণমূলক ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করা; আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য আজীবন সম্মানজনক ভাতা নিশ্চিত করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বিশেষ আইনি সুরক্ষা ও সহায়তাকেন্দ্র গঠন করা; শহীদ ও আহতদের ওপর সংগঠিত দমন-পীড়নের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচারকাজ সম্পন্ন করা এবং একটি স্বাধীন সত্য ও ন্যায় কমিশন গঠন করা।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালিদ মনসুর বলেন, সকাল থেকেই শাহবাগে অবরোধের কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শাহবাগ থানা-পুলিশ আলোচনার মাধ্যমে অবরোধকারীদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
তবে জুলাই যোদ্ধা সংসদের মুখ্য সংগঠক মাসুদ রানা জানান, তাঁদের আন্দোলন চলছে। সনদ ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তাঁরা এখানেই থাকবেন।