দেশের বাজারে প্রথমবারের মতো জাপানি কোম্পানি ইয়ামাহার ২৫০ সিসি ইঞ্জিনক্ষমতার মোটরসাইকেল বাজারে আনছে এসিআই মোটরস। আজ শুক্রবার ‘ইয়ামাহা এফজেড ২৫’মডেলের মোটরসাইকেলটি বাজারজাতের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

নতুন এই মোটরসাইকেলের বাজারজাতের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন উপলক্ষে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে (আইসিসিবি) জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ইয়ামাহা এফজেড ২৫ মডেলের মোটরসাইকেলটি ১৫৩ কেজি ওজনের। মেটালিক ব্ল্যাক, রেসিং ব্লু ও ওয়ারিয়র ওয়াইট-এই তিনটি রঙে পাওয়া যাবে এই মোটরসাইকেল। বাংলাদেশের বাজারের জন্য মোটরসাইকেলটির দাম ঠিক করা হয়েছে ৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া পুরোনো ১৫০ সিসি কিংবা তার বেশি সিসির ইয়ামাহা মোটরসাইকেল অদলবদলের মাধ্যমেও নতুন এই মোটরসাইকেল কেনার সুযোগ থাকছে ক্রেতাদের জন্য। এ ক্ষেত্রে ক্রেতাদের জন্য থাকছে বিশেষ ছাড়।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, আজ শনিবার থেকে চালু হচ্ছে মোটরসাইকেলটির আগাম বুকিং। আগাম বুকিং দিলে ৭ হাজার টাকা মূল্যছাড় পাবেন ক্রেতারা। ইয়ামাহার বাংলাদেশের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে মোটরসাইকেলটি আগাম বুকিং করতে পারবেন ক্রেতারা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগাম বুকিংয়ের এক মাস পর ক্রেতারা হাতে পাবেন মোটরসাইকেলটি। ২৫০ সিসির মোটরসাইকেলটিতে থাকছে ১৪ লিটারের ফুয়েল ট্যাংক, অয়েল কুলড বিএসসিক্স ইঞ্জিন, ৫ স্পিড গিয়ার, ৭ স্তরের অ্যাডজাস্টেবল মনোক্রস সাসপেনশনসহ নানা সুবিধা।

এসিআইয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইয়ামাহার বিভিন্ন মডেলের মোটরসাইকেলের মধ্যে এফজেড সিরিজের মডেলগুলো খুবই জনপ্রিয়। এখন পর্যন্ত এই সিরিজের ৪টির বেশি মডেল বাজারে এসেছে; যার সবই ক্রেতা চাহিদার শীর্ষে রয়েছে। এত দিন ইয়ামাহা বাংলাদেশে শুধু ১৫৫ সিসি ইঞ্জিনক্ষমতার মোটরসাইকেল বিক্রি করত। কিন্তু বাংলাদেশে উচ্চ সিসির মোটরসাইকেল অনুমোদনের পর ইয়ামাহা বাংলাদেশ গ্রাহকদের চাহিদা মাথায় রেখে এফজেড সিরিজের ২৫০ সিসির মোটরসাইকেল বাজারে আনে।

অনুষ্ঠানে ইয়ামাহা মোটর ইন্ডিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান ইতারু ওটানি বলেন, বাংলাদেশ ইয়ামাহার জন্য অনেক বড় একটি বাজার। বাংলাদেশের উৎপাদন শিল্পে ইয়ামাহা অনেক বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের মোটরসাইকেলের বাজারে ৩৯ শতাংশ ইয়ামাহার দখলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ইয়ামাহা মোটরসাইকেলের কার্যক্ষমতা ও নির্ভরযোগ্যতার পাশাপাশি ক্রেতার রুচির কথা মাথায় রেখে মোটরসাইকেল তৈরি করে।

অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে এসিআই মোটরসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এফ এইচ আনসারি বলেন, ইয়ামাহা বাংলাদেশের তরুণদের আবেগ ও ভালোবাসার মোটরসাইকেল। মূলত জেনারেশন জির কথা মাথায় রেখে টেকসই ও আধুনিক প্রযুক্তির মিশেলে এই মোটরসাইকেল তৈরি করা হয়েছে।

এসিআই মোটরসের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস বলেন, বাংলাদেশের আবহাওয়া ও পরিবেশের কথা চিন্তা করে মোটরসাইকেলটি তৈরি করা হয়েছে। এটির ব্রেকিং সিস্টেম ঢাকার ট্রাফিক জ্যামের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা।

মোটরসাইকেলটির বাজারজাত অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এসিআই মোটরসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, ইয়ামাহার জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের পরিবেশক ও ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাবের সদস্যরা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন ২৫০ স স র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ভোগবাদী যুগে ইসলামে সুখের খোঁজ

আপনার বাড়িতে কি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের স্তূপ জমে আছে? জানেন কি, এর থেকে মুক্তির পথ আছে ইসলামের সরল জীবনধারায়? আধুনিক বিশ্বে ভোগবাদের তীব্র ঝড়ে আমরা প্রায়ই নিজেদের দেখি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে ঠাসা ঘরে।

নতুন ফ্যাশনের পোশাক, সর্বশেষ প্রযুক্তির গ্যাজেট বা মধ্যরাতে এক ক্লিকে কেনা অপ্রয়োজনীয় পণ্য—এসব আমাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ইসলাম আমাদের ন্যূনতম একটি সরল জীবনধারার পথ দেখায়, যা পার্থিব লোভ থেকে মুক্ত করে আমাদের আল্লাহর পথে নিবেদিত হতে উৎসাহিত করে।

আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০সংযম কেন জরুরি

মিনিমালিজম বা ন্যূনতাবাদ এমন একটি জীবনধারা, যেখানে আমরা শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর নির্ভর করব এবং অতিরিক্ত ভোগবিলাস থেকে দূরে থাকব। ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ না হয়ে শুধু যেটুকু না হলেই জীবন চলে না, সেটুকু নিজের কাছে রাখব।

আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান, প্রত্যেক নামাজের সময় বেশভূষা সৌন্দর্য গ্রহণ করো, খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ৩১)।

এই আয়াত আমাদের জীবনে সংযম ও সরলতার গুরুত্ব মনে করিয়ে দেয়।

আরও পড়ুনদুনিয়ার ভোগ–বিলাস নিয়ে সুরা তাকাসুরের সতর্কতা১০ এপ্রিল ২০২৩

বিজ্ঞাপনের প্রলোভন আজকাল আমাদের অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটার দিকে ঠেলে দেয়। প্রায়ই এমন জিনিস কিনে ফেলি, যেমন একটি ইউএসবি মগ হিটার বা জামাকাপড়, যা তারপর বছরের পর বছর অব্যবহৃত পড়ে থাকে।

বাড়িতে জমে থাকে প্যাকেট না খোলা গ্লাস–বক্স, অপঠিত বইয়ের স্তূপ। প্রশ্ন করে দেখি তো, আমাদের আসলেই কি এগুলো প্রয়োজন ছিল?

মহানবী (সা.)-এর সাদাসিধা জীবন

মহানবীজি (সা.) এবং তাঁর সাহাবারা সরল জীবনযাপনের উজ্জ্বল উদাহরণ। হজরত আয়েশা (রা.)-কে নবীজি বলেছিলেন, ‘হে আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো। ধনীদের সঙ্গে মেলামেশা থেকে সাবধান থাকো এবং কোনো পোশাককে তখনই জীর্ণ হয়ে গেছে মনে করো, যখন তুমি তাতে প্যাঁচ লাগিয়েছ (মানে যখন পুরোনো হয়ে যাওয়ার কারণে পেঁচিয়ে যায়)।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০)।

এই হাদিসে নবীজি (সা.) স্পষ্টভাবে সরল জীবনযাপন এবং অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।

ইসলাম আমাদের শেখায় যে পার্থিব সম্পদ ক্ষণস্থায়ী এবং এটি আমাদের চিরস্থায়ী জীবনের জন্য প্রস্তুতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। নবীজি (সা.) কখনো অপ্রয়োজনীয় সম্পদ সঞ্চয় করেননি এবং সব সময় দানশীলতার মাধ্যমে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করেছেন।

দানের সংস্কৃতি

আজকের বিশ্বে ভোগবাদী সংস্কৃতি আমাদের জীবনকে জটিল করে তুলেছে। ক্রেডিট কার্ড, সহজলভ্য ঋণ এবং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ করে। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম, যেমন আমাদের দাদা-দাদিরা, সীমিত সম্পদের মধ্যে সরল জীবন যাপন করতেন। কিন্তু গত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাপী মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান এবং সহজে ঋণ পাওয়ার সুযোগ আমাদের ভোগবাদী প্রবৃত্তিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

আরও পড়ুনখাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা০৯ জুন ২০২৫

কিন্তু ইসলাম আমাদের শেখায়, প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় করা লোভ ও কৃপণতার দিকে নিয়ে যায়, যা একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়।

ইসলাম আমাদের জীবনকে সরল করার পাশাপাশি আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করে। আমরা চাইলে মাসিক বাজেটের একটি অংশ দানের জন্য বরাদ্দ করতে পারি।

যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪

বিয়ের মতো উৎসবে আমরা বিলাসবহুল আয়োজনের পরিবর্তে সরলতা বেছে নিতে পারি। উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪)।

আমাদের ভালো কাজ এবং দানশীলতা পরকালে যেমন উপকারে আসবে, তেমনি সমাজের জন্যও হবে কল্যাণকর। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে দানশীলতার দিকে মনোযোগ দিলে সমাজের দরিদ্র ও অভাবী মানুষের জীবন উন্নত হবে।

ভোগবাদী জীবন মানুষকে অস্থির করে তোলে এবং ন্যূনতম খরচের জীবনধারা মানুষকে তৃপ্তির জীবন উপহার দেয়। এটি একই সঙ্গে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনেরও একটি পথ।

আমরা যদি আমাদের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে আল্লাহর পথে ব্যয় করি, তবে তা আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে সমৃদ্ধ করবে। ন্যূনতমবাদ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমাদের প্রকৃত সুখ পার্থিব সম্পদে নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের প্রস্তুতিতে নিহিত।

আরও পড়ুনআধুনিক এই প্রবণতার শিকড় ইসলামে২০ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ