রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধে বাংলাদেশির মৃত্যু, বাকিদের ফেরাতে দূতাবাসে আবেদন
Published: 12th, April 2025 GMT
বেকারত্ব ও বিদেশে কাজের আশায় বাংলাদেশি যুবকরা প্রতারণার ফাঁদে পড়ে রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ২২ বছর বয়সী মোহাম্মদ ইয়াসিন শেখের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর উদ্বিগ্ন পরিবারগুলো মস্কোতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
বাংলাদেশের মস্কো দূতাবাস জানিয়েছে, প্রায় ডজনখানেক পরিবার তাদের সন্তানদের ফেরত আনার আবেদন জানিয়েছেন। এদের মধ্যে আছেন মোহাম্মদ আকরাম হোসেন, যিনি জানান, তিনি ও তার ভগ্নিপতি সাইপ্রাসে চাকরির আশায় একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে রাশিয়ায় যান। পরে তারা বুঝতে পারেন, তাদের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয়েছে। খবর এএফপির।
আকরাম বলেন, আমরা কল্পনাও করিনি যে আমাদের এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে। এজেন্সি বলেছিল শুধু রাশিয়ার ভিসা পাওয়া যাচ্ছে, তাই আমরা রাজি হয়ে যাই। কিন্তু পরে দেখা গেল, আমরা একেবারে যুদ্ধের মুখোমুখি।
তিনি আরও জানান, তিনি সেনেগালের কিছু ব্যক্তির সঙ্গে পালিয়ে দেশে ফিরে আসতে সক্ষম হন, তবে তার ভগ্নিপতি এখনও রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে রয়েছেন।
ইয়াসিন শেখের পরিবার জানায়, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চীনা কোম্পানিতে ইলেকট্রিশিয়ানের কাজের আশায় রাশিয়ায় যান তিনি। পরে ডিসেম্বর মাসে তিনি রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং ২৭ মার্চ ইউক্রেন যুদ্ধে নিহত হন বলে পরিবার সূত্রে জানা যায়।
ইয়াসিনের চাচা আবুল হাশেম বলেন, ঈদের সময় তার এক বন্ধু ফোন করে জানায় যে ইয়াসিন শহীদ হয়েছে। পরে রাশিয়ান এক কমান্ডার আমাদের ফোন দেন। তিনি আরও বলেন, আমরা ছেলের লাশ ফেরত আনার জন্য সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি, যেন তার মা শেষবারের মতো ছেলেকে দেখতে পারেন।
এদিকে, মস্কোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ফারহাদ হোসেন জানান, আমরা ইয়াসিনের বিষয়ে অবগত এবং রুশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তবে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আরও কয়েকজন বাংলাদেশির পরিবার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
বাংলাদেশের পুলিশ জানিয়েছে, মানবপাচার সংশ্লিষ্ট ঘটনায় এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ছয়টি মামলা হয়েছে। অপরাধ তদন্ত বিভাগের পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, অপরাধীদের ধরতে অভিযান চলছে।
বিশ্বজুড়ে সেনা সংগ্রহে রয়েছে রাশিয়া, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে চাকরির লোভ দেখিয়ে তরুণদের রিক্রুট করা হচ্ছে বলে প্রতিবেদন রয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে শনিবার
ঢাকায় দুই দিনব্যাপী অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে আগামী শনিবার। এতে অটোমোবাইল, কৃষি যন্ত্রপাতিসহ হালকা প্রকৌশল খাতের ২৬টি স্টল থাকবে। পাশাপাশি শিল্পের সহায়ক প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকবে আরও ১২টি। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
বাংলাদেশ অটোমোবাইলস অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ও অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সহযোগিতায় এই প্রদর্শনীর আয়োজন করছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকায় এডিসন প্রাইম ভবনের ছাদে এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। এই ভবনেই বিসিআইয়ের কার্যালয় অবস্থিত।
আজ বৃহস্পতিবার বিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দুই দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী নিয়ে বিস্তারিত জানান চেম্বারটির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী। আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি আলিমুল আহসান চৌধুরী, বিসিআইয়ের পরিচালক মো. শাহেদ আলম, এস এম শাহ আলম, জিয়া হায়দার প্রমুখ।
বিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, হালকা প্রকৌশল খাতে বাংলাদেশে বর্তমানে ছোটবড় প্রায় ৫০ হাজার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই খাতে কাজ করেন ১০ লাখ মানুষ। হালকা প্রকৌশল খাতে স্থানীয় বাজার ১২ বিলিয়ন ডলারের হলেও দেশীয় উৎপাদকেরা অর্ধেক পূরণ করতে পারছেন। তা ছাড়া হালকা প্রকৌশল খাতের বৈশ্বিক বাজারের আকার প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন ডলার। তিনি আরও বলেন, তৈরি পোশাক খাত আর বেশি মূল্য সংযোজন করতে পারবে না। ফলে আমাদের অর্থনীতিকে টেকসই করতে হলে আমাদের অন্য খাতে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে হালকা প্রকৌশল খাত পারে বড় সম্ভাবনার।
অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি আলিমুল আহসান চৌধুরী বলেন, প্রতিবছর কৃষিজমি কমছে। কৃষকের বয়স বাড়ছে, তার কারণ তরুণেরা খুব কম কৃষিকাজে আসছেন। বিশ্বের অনেক দেশেই মোট জনগোষ্ঠীর ১০ শতাংশের কম কৃষিকাজে নিয়োজিত। ১০ শতাংশ মানুষ বাকি ৯০ শতাংশের জন্য খাদ্য জোগান দিচ্ছে। সে কারণে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। বাংলাদেশেও কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। তবে বড় অংশই আমদানি করতে হচ্ছে।
আলিমুল আহসান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে ১২০০ থেকে ১৫০০ কোটি টাকার কৃষি যন্ত্রপাতির বাজার আছে। তার মধ্যে দেশীয় কোম্পানিগুলো সরবরাহ করছে মাত্র ৪০০ থেকে ৪৫০ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ। নীতিসহায়তা পেলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।