নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাত্রীবাহী বাস দোকানে, শিক্ষার্থী নিহত
Published: 12th, April 2025 GMT
ফেনীর ফুলগাজীতে একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশের দোকান ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ায় এক শিক্ষার্থী নিহত ও পাঁচজন আহত হন। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফেনী-বিলোনিয়া সড়কের ফুলগাজীর কলাবাগান নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত শিক্ষার্থীর নাম তাসিন উদ্দিন (১৫)। সে ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের মধ্যম বাশুড়া গ্রামের বেলাল হোসেনের ছেলে। তাসিন স্থানীয় ফুলগাজী পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে পরশুরাম উপজেলার আম্বিয়া বেগম, জয়নাল আবেদীন, দাগনভূঞা উপজেলার বেলাল হোসেন, ভোলা জেলার নাছির উদ্দীন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। আহত আরেকজনের পরিচয় জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, আজ সকালে ফেনী থেকে পরশুরামের উদ্দেশে ছেড়ে আসা একটি যাত্রীবাহী বাসের চালক ফুলগাজীর কলাবাগানে এসে নিয়ন্ত্রণ হারান। একপর্যায়ে বাসটি পথচারী এক শিক্ষার্থীকে চাপা দিয়ে সড়কের পাশের দোকানঘরে ঢুকে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে শিক্ষার্থী তাসিন উদ্দিনের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনায় বাসটির সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে গেলে ভেতরে থাকা অন্তত পাঁচ যাত্রী আহত হন। স্থানীয় বাসিন্দারা আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ভর্তি করেন।
ফুলগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওয়াহিদ পারভেজ প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ নিহত শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করে ফেনীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি জব্দ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত প্রক্রিয়া চলমান।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।
কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।
আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’
আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’
ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫