হাকালুকি হাওরে ধানের ভালো ফলন, তবে শিলাবৃষ্টির শঙ্কা
Published: 12th, April 2025 GMT
মৌলভীবাজার জেলার বৃহৎ হাওর হাকালুকি ও কাউয়াদীঘিতে আগাম জাতের ধান কাটা শুরু হয়েছে। স্থানীয় কৃষক জানান, অনুকূল আবহাওয়ায় চলতি মৌসুমে বোরো ধানের আবাদ ও ফলন ভালো হয়েছে। দুর্যোগ না হলে দেনা পরিশোধ করেও লাভের আশা করছে প্রান্তিক চাষিরা।
জেলা কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় হাওর ও হাওরের বাইরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪০ হেক্টর বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে। আগাম জাতের (ব্রি-৯২) ধান জেলার হাকালুকি ও কাউয়াদীঘি হাওরে কাটা শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩৫০ হেক্টর জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, হাওর জনপদের কোথাও কৃষকরা ধান কাটছেন। আবার কাটা ধান নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। রাস্তায় জমা করছেন পাকা ধানের স্তূপ। কয়েকদিন দিন আগ থেকে জেলায় অবস্থিত এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকিসহ দুটি হাওরে ধান কাটা শুরু হয়েছে।
আরো পড়ুন:
ডিসেম্বরে নির্বাচনের লক্ষ্যে সংস্কার দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ প্রধান উপদেষ্টার
আইসিসির গ্রেপ্তার এড়িয়ে যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রে গেলেন নেতানিয়াহু
শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকেলে হাকালুকি হাওরের আলীনগর, উত্তর বাগবন্দ, পাড়কান্দি, জাব্দা, ফুটবিল, চকিয়া, কাটুয়া, বিলাইবিল, বাগধলবিল, মেদাবিল, বারুঘরবিল, চাউংগাবিল, লালবিল এলাকায় কৃষকরা ধান কাটতে মাঠে নেমেছে। ধানের ফলন ভালো হওয়ায় তারা খুশি।
হাকালুকি হাওর পারের আলীনগর গ্রামের বর্গাচাষি চুনু মিয়া জানান, এক একর জমিতে ৫০ মণ ধান পাওয়ার আশা করছেন। একই এলাকার কৃষক দুরুদ মিয়া রাস্তায় ধানের স্তূপ দিচ্ছেলেন। এ সময় কথা হলে তিনি জানান, এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ধান ভালো হওয়ায় তারা খুশি।
মাঠে ধান কাটছেন পাড়কান্দি এলাকার জয়নুল মিয়া জানান, তিনি তিন একর জমি চাষ করেছেন। ১৫০ মণ ধান পাওয়ার আশা করছেন। তবে শিলাবৃষ্টির ভয় আছে।
হাওর পাড়ের জাব্দা গ্রামের আহাদ আলী জানান, পাঁচ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। চলতি মৌসুমে ফলন ভালো হয়েছে। মহাজনের ঋণ পরিশোধ করেও লাভ হবে- এমনটাই তিনি মনে করছেন।
চলতি মৌসুমে হাওরে বি-৯০, বি-৯২ বি-২৮ জাতের ধান রোপন করা হয়।
মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জালাল উদ্দিন জানান, এ বছর জেলায় হাওর ও হাওরের বাইরে ৬২ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬২ হাজার ১০০ হেক্টর। চলতি বছর ২ লাখ ৪৮ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন ধান ফলনের আশা করা হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, জেলার হাওর অঞ্চলে ব্রি-৯২ জাতের ধানের ফলন সবচেয়ে ভালো হয়েছে। এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়ার সঙ্গে এই জাতের ধান অভিযোজিত হয়েছে। ৩৫০ হেক্টর ধান কাটা শেষ হয়েছে।
ঢাকা/আজিজ/বকুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য
কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।
মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।
দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।
লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।
দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।
জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।
রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।
দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।