তরুণের আত্মহত্যার পেছনে যৌতুকের চাপ!
Published: 12th, April 2025 GMT
মানিকগঞ্জে নিজ বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে আকাশ হোসেন (২১) নামের এক তরুণের ঝুলন্ত লাশ। শনিবার দুপুরে সদর উপজেলার মুকিমপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
তাঁর স্ত্রীর অভিযোগ, যৌতুক হিসেবে শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা এনে দেওয়ার জন্য আকাশকে চাপ দিচ্ছিল পরিবার। এ ক্ষোভ থেকেই দেড় মাস বয়সী এক ছেলে রেখেও গলায় দড়ি দিয়েছেন তিনি। যদিও আকাশের বাবা বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
প্রতিবেশীরা জানান, প্রেমের সম্পর্কের সূত্রে আড়াই বছর আগে আকাশ হোসেনের সঙ্গে সুরমা আক্তারের বিয়ে হয়। সুরমার পরিবার তাদের মেনে নিলেও আকাশের বাড়ির পরিবার বিয়ে মানতে রাজি হয়নি। ছয় মাস পর তারা সম্পর্ক মেনে নিলেও যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকে।
সুরমা আক্তারের ভাষ্য, বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁকে যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকে। এ নিয়ে ঝগড়াঝাঁটি লেগেই ছিল। যৌতুক এনে না দেওয়ায় ছয় মাস আগে তাঁকে ও তাঁর স্বামীকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। তখন আকাশকে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে যান সুরমা। এরই মধ্যে তাদের ছেলে সন্তান হয়।
তিনি বলেন, ‘আমার স্বামীকে তাঁর বাবা-মা সবকিছু মেনে নেবে বলে ঈদের পর বাড়িতে ডেকে নেন। এর পর আবারও তাঁকে দিয়ে যৌতুকের জন্য চাপ দেন। তাদের মানসিক নির্যাতনে সে (আকাশ) আত্মহত্যা করেছে। দেড় মাসের ছেলে সন্তান নিয়ে আমি এখন কোথায় গিয়ে উঠব?’
আকাশের বাবা ফারুক হোসেনের দাবি, তারা যৌতুকের জন্য চাপ দেননি। ছেলের সঙ্গে স্ত্রীর সম্পর্কের অবনতি থেকেই এই ঘটনা ঘটেছে।
মানিকগঞ্জ সদর থানার এস এম আমান উল্লাহ বলেন, এ ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। লাশটিকে ময়নাতদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছেন তারা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম ন কগঞ জ য ত ক র জন য চ প দ
এছাড়াও পড়ুন:
শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই
বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।
একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।
আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।
ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।
ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।
পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল