কাতারের ঘুষ কেলঙ্কারিই কি নেতানিয়াহুকে ডোবাবে
Published: 13th, April 2025 GMT
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী কি দেশের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানকে বরখাস্ত করতে পারেন? এ প্রশ্নে ৮ এপ্রিল ইসরায়েলের সর্বোচ্চ আদালত শুনানি করে।
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা ‘শিন বেত’-এর প্রধান রোনেন বারকে বরখাস্ত করেন। তবে সুপ্রিম কোর্ট সেই সিদ্ধান্ত ২০ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত রেখেছেন।
আদালত বলেছেন, এ সময়ের মধ্যে সরকারকে দেশের স্বাধীন অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছাতে হবে। অ্যাটর্নি জেনারেল বারকে বরখাস্তের বিরোধিতা করেছেন। কারণ, তিনি মনে করেন, এই বরখাস্তের ঘটনার সঙ্গে নেতানিয়াহুর স্বার্থের সংঘাত আছে।
এটা সাধারণত একধরনের সাংবিধানিক সংকট তৈরি করতে পারে। কারণ, নেতানিয়াহু ইতিমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, আদালতের বিরূপ রায় হলেও তিনি তা মানবেন না। তবে পরিস্থিতি একটু জটিল। কারণ, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলা সম্পর্কে শিন বেত আগে থেকে কোনো সতর্কতা দিতে না পারায় বারকে বরখাস্ত করার যৌক্তিকতা আছে। বার নিজেও তাঁর ব্যর্থতা স্বীকার করেছেন এবং পুরো ঘটনায় তদন্তের জন্য একটি রাষ্ট্রীয় তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি তুলেছেন। কিন্তু নেতানিয়াহু নিজে যাতে দায়ী না হন, সে জন্য তিনি এই তদন্ত কমিশনের বিরোধিতা করছেন।
তার ওপর, বার অভিযোগ করেছেন, নেতানিয়াহু (যাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মামলা চলছে) তাঁকে চাপ দিয়েছিলেন যেন আদালত তাঁর (নেতানিয়াহুর) সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ পিছিয়ে দেন।
তাই একদিকে যেমন বারকে বরখাস্ত করার কিছু যৌক্তিক কারণ আছে, অন্যদিকে আছে স্বার্থের সংঘাতের প্রশ্ন। সবচেয়ে বড় ও বিতর্কিত বিষয় হলো ‘কাতারগেট’ নামের একটি দুর্নীতির ঘটনা, যেটির তদন্ত করছিলেন রোনেন বার। এ মামলায় নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ কিছু সহযোগীর বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়া ও গোপন তথ্য ফাঁস করার অভিযোগ আছে। আর এই তদন্ত শুরুর পরপরই নেতানিয়াহু বারকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেন।
ধারণা করা হচ্ছে, কাতার ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু লোককে ঘুষ দিয়েছে, যেন তারা গাজায় ইসরায়েলি জিম্মিদের ভাগ্য নিয়ে চলমান পরোক্ষ আলোচনা প্রসঙ্গে কাতারকে একটি বিশ্বস্ত অংশীদার হিসেবে উপস্থাপন করে। কাতার অন্য জায়গাতেও তার স্বার্থ রক্ষায় ঘুষ দেওয়ার কৌশল ব্যবহার করেছে। যেমন ২০২২ সালে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সেই গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তাঁরা কাতারের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন।সংক্ষেপে কাতারগেট মামলার মূল বিষয় হলো, নেতানিয়াহুর দুই ব্যক্তিগত সহযোগী—ইয়োনাতান উরিখ ও এলি ফেল্ডস্টেইন—কাতারের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তাঁরা নাকি ইসরায়েলি মিডিয়ায় এমন কিছু বিবৃতি ফাঁস করতেন, যা কাতারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে। আরেক সহযোগী, যিনি এখন সার্বিয়ায় চলে গেছেন, তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য খোঁজা হচ্ছে। জেরুজালেম পোস্টের প্রধান সম্পাদক এই মামলায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সন্দেহভাজন। এ ছাড়া এক ব্যবসায়ী স্বীকার করেছেন, তিনি আমেরিকার একজন কাতারি লবিস্টের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ফেল্ডস্টেইনের হাতে দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে যেসব তথ্য ফাঁস হয়, অনেক সময়ই তা নেতানিয়াহুর পক্ষ থেকেই ফাঁস হয় বলে ধারণা করা হয়। কারণ, অতীতেও তিনি রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে গোপন তথ্য ফাঁস করেছেন। যদিও এই কাতারগেট বিষয়ে নেতানিয়াহু সরাসরি জড়িত ছিলেন, এমন প্রমাণ নেই। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, তার নির্দেশেই উরিখের মাধ্যমে কিছু তথ্য ফাঁস হয়েছিল।
ধারণা করা হচ্ছে, কাতার ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু লোককে ঘুষ দিয়েছে, যেন তারা গাজায় ইসরায়েলি জিম্মিদের ভাগ্য নিয়ে চলমান পরোক্ষ আলোচনা প্রসঙ্গে কাতারকে একটি বিশ্বস্ত অংশীদার হিসেবে উপস্থাপন করে। কাতার অন্য জায়গাতেও তার স্বার্থ রক্ষায় ঘুষ দেওয়ার কৌশল ব্যবহার করেছে। যেমন ২০২২ সালে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সেই গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তাঁরা কাতারের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন।
আরও পড়ুনইসরায়েল এখন শেষ সময়ের সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো১০ ঘণ্টা আগেতবে ইসরায়েলে কাতারের টাকার অর্থ ভিন্ন। ২০১৮ সাল থেকে নেতানিয়াহু সরকারের স্পষ্ট অনুমোদনে কাতার সরকার গাজার হামাস শাসনকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রতি মাসে ৩০ মিলিয়ন ডলার পাঠাত। এই অর্থ স্যুটকেসে করে আনা হতো, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবিরোধী নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যাওয়া যায়। এসব টাকা সরকারি কর্মচারীদের বেতন ও সামাজিক কল্যাণভাতা দিতে ব্যবহৃত হতো। ফলে হামাস তাদের অন্যান্য তহবিল সন্ত্রাসবাদে ব্যবহার করতে পারত।
ইসলামপন্থীদের প্রতি কাতারের সমর্থন তাকে আরব বিশ্বের চোখে প্রায়ই একঘরে করে তুলেছে। নেতানিয়াহুর যুক্তি ছিল, গাজায় হামাসের শাসন ইসরায়েলের স্বার্থে কাজ করছে। গাজায় সন্ত্রাসীরা ও রামাল্লায় দুর্নীতিপরায়ণ ও অদক্ষ ফাতাহ আমলারা থাকায় ইসরায়েল ফিলিস্তিনি ইস্যুতে আলোচনায় না যাওয়ার একটি সুবিধাজনক অজুহাত পেয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রোনেন বার যে রাষ্ট্রীয় তদন্ত কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সেটি হলে এই চিত্র প্রকাশ পেয়ে যেত।
যদিও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আইনজীবীরা এসব অভিযোগের বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি, তবে তাঁরা জোর দিয়ে বলেছেন, কাতার কোনো ‘শত্রুরাষ্ট্র’ নয়, অর্থাৎ এতে বিশ্বাসঘাতকতার কোনো প্রশ্ন আসে না। তাঁরা এটাও উল্লেখ করেন, ইসরায়েলের আইনে শুধু সরকারি কর্মচারীরাই ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হতে পারেন। আর প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ব্যক্তিগত সহযোগীরা আইনত সরকারি কর্মচারী নন। তাঁরা এটাও যুক্তি হিসেবে আনতে পারেন, ইসরায়েলি গণমাধ্যমও এই গোপন তথ্যগুলো নির্দ্বিধায় ছাপিয়ে সমানভাবে দায়ী।
তবে ইসরায়েলের রাজনীতিতে পেছন থেকে আঘাত দেওয়া বা গোপন তথ্য ফাঁস করাই যেন নিয়ম। সাংবাদিকেরাও এই ফাঁস হওয়া তথ্যের ওপর নির্ভর করেন, রাজনীতিকেরাও তা–ই করেন। ফেল্ডস্টেইনকে আগেও আরেকটি গোপন তথ্য ফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, কিন্তু তিনি তখনো চাকরি হারাননি।
এখন দুই পক্ষ স্পষ্টভাবে মুখোমুখি। বিচারমন্ত্রী ইয়ারিভ লেভিন বলেছেন, নেতানিয়াহুর সরকার ‘মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষের অধিকার রক্ষা করছে, যাদের গণতান্ত্রিকভাবে ব্যালট বাক্সে দেওয়া সিদ্ধান্ত কিছু অহংকারী ও বাস্তবতাবিচ্ছিন্ন বিচারকেরা কেড়ে নিতে চাইছেন’। অথচ জনমত জরিপ বলছে, ৬৩ শতাংশ ইসরায়েলি দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং তারা সুপ্রিম কোর্ট, অ্যাটর্নি জেনারেল ও শিন বেতকে নেতানিয়াহুর সরকারের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি বিশ্বাস করে।
স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ
কনস্তান্তি গেবার্ট একজন পোলিশ সাংবাদিক। তিনি একসময় কমিউনবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। পোল্যান্ড, ইহুদি জনগোষ্ঠী এবং আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে তিনি ১৪টি বই লিখেছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র ব যবহ র হয় ছ ল কর ছ ন র কর ছ সরক র তদন ত সহয গ
এছাড়াও পড়ুন:
নীতি সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ, কী প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব অর্থনীতিতে
অবশেষে সুদের হার কমিয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ। গত বছরের ডিসেম্বর মাসের পর এই প্রথম সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে দুর্বলতার লক্ষণ, আফ্রো-আমেরিকানদের মধ্যে উচ্চ বেকারত্ব, কর্মঘণ্টা কমে যাওয়া ও নতুন চাকরি সৃষ্টির গতি কমে যাওয়ায় ফেড এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট কমিয়ে ৪ থেকে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়ার পর ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেন, অক্টোবর ও ডিসেম্বর মাসে সুদহার আরও কমতে পারে। তিনি বলেন, শ্রমবাজারের ক্রমবর্ধমান দুর্বলতা এখন তাঁর ও সহকর্মী নীতিনির্ধারকদের প্রধান উদ্বেগ। খবর রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক দিন ধরেই ব্যাপক হারে সুদ কমানোর দাবি তুলছিলেন। তাঁর বক্তব্য, এতে অর্থনীতি চাঙা হবে। তবে ফেডের এ সিদ্ধান্ত তাঁর প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। ফেডের পর্ষদে নতুন গভর্নর স্টিফেন মিরান ছিলেন একমাত্র ভিন্নমতাবলম্বী। তিনি ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট হারে সুদহার কমানোর পক্ষে ছিলেন। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে আরও বড় কাটছাঁটের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
সুদের হার নির্ধারণে রাজনৈতিক প্রভাবের প্রশ্ন সব সময়ই তোলা হয়। ট্রাম্প সম্প্রতি ফেডের এক গভর্নর লিসা কুককে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। যদিও কুক আদালতের লড়াইয়ে আপাতত নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন এবং বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান মিরানকে ফেডের পর্ষদে বসান।
শ্রমবাজারে দুর্বলতাপাওয়েল বলেন, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে, তরুণেরা আরও ভঙ্গুর হয়ে পড়ছেন। সামগ্রিকভাবে চাকরি সৃষ্টির গতি খুবই কম। শ্রমবাজারকে আর দুর্বল হতে দেওয়া যাবে না।
পাওয়েল আরও সতর্ক করেন, নতুন চাকরির সংখ্যা এখন বেকারত্বের হার স্থিতিশীল রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে সামান্য ছাঁটাইও বেকারত্ব বাড়িয়ে দিতে পারে।
মূল্যস্ফীতি বনাম কর্মসংস্থানমূল্যস্ফীতি এখনো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। আশঙ্কা করা হচ্ছে বছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতির হার ৩ শতাংশে উঠবে, যেখানে ফেডের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২ শতাংশ। কিন্তু ফেড মনে করছে, কর্মসংস্থানের ঝুঁকি এখন বেশি গুরুত্ব পাওয়ার মতো বিষয়।
ফেডের নতুন পূর্বাভাসে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা বাড়িয়ে ১ দশমিক ৬ শতাংশ করা হতে পারে বলা হয়েছে। বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশেই স্থির থাকবে বলে তারা অনুমান করছে।
রাজনৈতিক টানাপোড়েনএ সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক নাটকও কম ছিল না। ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা থাকলেও ফেডের পর্ষদের অন্য দুই ট্রাম্প-মনোনীত গভর্নর মিশেল বোম্যান ও ক্রিস্টোফার ওয়ালার শেষ পর্যন্ত মূল সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়েছেন। ওয়ালার বরাবরই শ্রমবাজারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলে আসছেন।
পাওয়েল অবশ্য পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, ‘আমাদের সংস্কৃতির মূল বিষয় হলো তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত। আজকের বৈঠকে সুদহার ব্যাপক হারে কমানোর বিষয়ে বিপুল সমর্থন ছিল না।’
বাজারের প্রতিক্রিয়াসুদহার কমানোর ঘোষণার পর ওয়াল স্ট্রিটে প্রথমে শেয়ারের দাম বাড়লেও পরে ওঠানামা করে। শেষমেশ মিশ্র পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন শেষ হয়। ডলার কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে ঠিক, কিন্তু ট্রেজারি বন্ডের সুদ প্রায় অপরিবর্তিত। বাজার এখন প্রায় নিশ্চিত, অক্টোবরের বৈঠকেও সুদ কমানো হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ফেডের সাম্প্রতিক নীতি পরিবর্তনের মানে হলো তারা এখন ধীরে ধীরে ‘নিরপক্ষে’ অবস্থানের দিকে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি সাময়িকভাবে কিছুটা বাড়লেও ২০২৬ সালের মধ্যে স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নীতিসুদ কীকেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদহারে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ দেয়, সেটাই নীতি সুদহার। ইংরেজিতে একে বলে রেপো রেট। রেপোর বাংলা হচ্ছে পুনঃক্রয় চুক্তি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে এটি পরিচিত। অর্থনীতিতে নগদ তারল্যের জোগান দিতে বা অন্যভাবে বলতে গেলে ব্যাংকগুলোর জরুরি প্রয়োজনে অর্থ সরবরাহ করতে মুদ্রানীতির এ হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়। বিশ্বের সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ হাতিয়ার ব্যবহার করে।
কোভিডের পর রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। তখন ফেডারেল রিজার্ভ বাজারে মুদ্রার চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে দফায় দফায় নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে। ফলে নীতি সুদহার গত দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ২৫ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশে উঠে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহারের প্রভাববিশ্ব অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিসুদের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। ফেডের নীতিসুদের হার বাড়লে ট্রেজারি বন্ডের দাম কমে এবং সুদহার কমলে ট্রেজারি বন্ডের দাম বাড়ে। এর কারণ হলো বাজারে নতুন ও অধিক সুদের বন্ড আসার পর পুরোনো বন্ডের কুপন (সুদ) কম মনে হয়, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম কমে যায়। আবার যখন সুদের হার কমে, তখন নতুন বন্ডের কুপন কম হওয়ায় পুরোনো বন্ডের উচ্চ কুপনযুক্ত সুদ বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম বেড়ে যায়।
নীতিসুদ কমলেও একই প্রক্রিয়া ঘটে, তবে বিপরীতভাবে। সুদের হার কমলে নতুন বন্ডের কুপনও কমে যায়। এতে আগের উচ্চ সুদের কুপনযুক্ত বন্ডগুলো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। বিনিয়োগকারীরা এই পুরোনো বন্ডগুলো কিনতে আগ্রহী হন, ফলে সেগুলোর দাম বেড়ে যায়। বিনিয়োগকারীরা তখন তুলনামূলক ঝুঁকিপূর্ণ বাজারেও বিনিয়োগ আগ্রহী হন। এতে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগপ্রবাহ বাড়ে এবং ডলারের চাপ কিছুটা কমে।
সে কারণে বাজার নীতি সুদহারের দিকে তাকিয়ে থাকে, সুদ কমলে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।