মেটার প্রধান ও সহপ্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গের আলোচিত একটি মামলায় গতকাল সোমবার বিচারকাজ শুরু হয়েছে।

মার্ক জাকারবার্গের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপকে প্রতিযোগিতামূলকভাবে অধিগ্রহণ করা এড়াতে তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম (মেটা) বাজারক্ষমতার অপব্যবহার করেছে।

ফেডারেল ট্রেড কমিশনের (এফটিসি) কৌঁসুলিরা যুক্তি দিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক (পরে মেটা নাম গ্রহণ) বাজার প্রতিযোগিতাকে হুমকি হিসেবে বিবেচনা করে ওই দুই প্রতিষ্ঠানকে ‘গ্রাস’ করেছে।

ইনস্টাগ্রামকে অধিগ্রহণ করাবিষয়ক ২০১২ সালের আরেকটি ই-মেইলে কোনো উন্নয়ন না করেই জনপ্রিয় এ অ্যাপ চালু রাখার ও ফেসবুকের নিজস্ব সেবার উন্নয়ন করার ইঙ্গিত দেওয়া হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল, ফেসবুকের হতাশ ব্যবহারকারীদের এ প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে যাওয়া এড়ানো।

২০১১ সালে ফেসবুকের একটি অভ্যন্তরীণ ই-মেইলে সতর্ক করা হয়েছিল যে ইনস্টাগ্রাম স্মার্টফোনে একটি জনপ্রিয় অ্যাপ হয়ে উঠেছে এবং জাকারবার্গের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নেটওয়ার্ক (ফেসবুক) যা অফার দেয়, তা সহজেই অনুলিপি করতে পারে এটি।

ইনস্টাগ্রামকে অধিগ্রহণ করাবিষয়ক ২০১২ সালের আরেকটি ই-মেইলে কোনো উন্নয়ন না করেই জনপ্রিয় এ অ্যাপ চালু রাখার ও ফেসবুকের নিজস্ব সেবার উন্নয়ন করার ইঙ্গিত দেওয়া হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল, ফেসবুকের হতাশ ব্যবহারকারীদের এ প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে যাওয়া এড়ানো।

ইনস্টাগ্রামকে অধিগ্রহণ করার আগে এসব ই-মেইলকে প্রাথমিক কথাবার্তা হিসেবে খাটো করে দেখান মার্ক জাকারবার্গ।

আরও পড়ুনঅ্যাপলের নিন্দায় মার্ক জাকারবার্গ, কেন১৫ জানুয়ারি ২০২৫

গতকাল ওয়াশিংটনের একটি ফেডারেল আদালতে এ মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হলে ফেসবুকের বিরুদ্ধে মামলাটির বিচার আর হবে না বলে আশা করছিলেন জাকারবার্গ। তবে এখন তাঁর সে আশায় ছেদ পড়েছে।

মামলায় হারলে ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ ছেড়ে দিতে বাধ্য হতে পারে ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা, যা ওই দুই অ্যাপ কেনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জগতে বৈশ্বিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে।

তারা (মেটা) সিদ্ধান্ত নেয় যে প্রতিযোগিতা করাটা খুবই কঠিন। তাই প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামার চেয়ে এগুলো কিনে নেওয়াই সহজ।ড্যানিয়েল ম্যাথসন, এফটিসির অ্যাটর্নি

মামলায় শুনানি শুরুর পর এফটিসির অ্যাটর্নি ড্যানিয়েল ম্যাথসন বলেছেন, ‘তারা (মেটা) সিদ্ধান্ত নেয় যে প্রতিযোগিতা করাটা খুবই কঠিন। তাই প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামার চেয়ে এগুলো কিনে নেওয়াই সহজ।’

তবে মেটার অ্যাটর্নি মার্ক হ্যানসেন এ বক্তব্যে পাল্টা যুক্তি দেন। তিনি বলেন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য সেটি অধিগ্রহণ করা যুক্তরাষ্ট্রে বেআইনি নয়। ফেসবুক সেই কাজই করেছে।’

আরও পড়ুনমার্ক জাকারবার্গের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী০৪ অক্টোবর ২০২৪

উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ২০২০ সালে মেটার বিরুদ্ধে ওই মামলা করা হয়। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হলে তিনি মামলাটি প্রত্যাহার করতে এফটিসিকে অনুরোধ করেন কি না, সেদিকে অনেকের নজর ছিল।

ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর বিশ্বের তৃতীয় ধনাঢ্য ব্যক্তি জাকারবার্গ একাধিকবার হোয়াইট হাউসে যান। ওই মামলা নিয়ে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে একটি সমঝোতায় আসার জন্য ট্রাম্পকে রাজি করানোর চেষ্টা করেন তিনি।

গতকাল ওয়াশিংটনের একটি ফেডারেল আদালতে এ মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হলে ফেসবুকের বিরুদ্ধে মামলাটির বিচার আর হবে না বলে আশা করছিলেন জাকারবার্গ। তবে এখন তাঁর সে আশায় ছেদ পড়েছে।

এই তদবিরের অংশ হিসেবে জাকারবার্গ ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে অর্থায়নও করেন এবং মেটার কনটেন্ট–সংক্রান্ত (আধেয়) নীতিমালা ঢেলে সাজান। তা ছাড়া ওয়াশিংটনে ২ কোটি ৩০ লাখ ডলারে একটি ম্যানশনও কেনেন জাকারবার্গ। ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা ব্যক্তিটির কাছাকাছি থাকতেই তিনি এ ম্যানশন কিনেছেন বলে মনে করা হয়।

জাকারবার্গের সাবেক সহযোগী শেরিল স্যান্ডবার্গ ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাহীদের অনেকেরই এ মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার কথা রয়েছে। অন্তত আট সপ্তাহ ধরে মামলাটির বিচার চলতে পারে।

আরও পড়ুন মার্ক জাকারবার্গের করা সবচেয়ে বড় ভুল কোনটি জানেন১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ফেসবুক ২০১২ সালে শতকোটি ডলারে ইনস্টাগ্রাম কিনে নেয়। সেই সময় ইনস্টাগ্রাম ছোট হলেও ছবি আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে সম্ভাবনাময় একটি অ্যাপ ছিল। বর্তমানে এটির সক্রিয় ব্যবহারকারী ২০০ কোটি।

কোনো প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য সেটি অধিগ্রহণ করা যুক্তরাষ্ট্রে বেআইনি নয়। ফেসবুক সেই কাজই করেছে।মার্ক হ্যানসেন, মেটার অ্যাটর্নি

জাকারবার্গের ই-মেইলের বরাত দিয়ে এফটিসি আদালতে বলেছে, ইনস্টাগ্রাম অধিগ্রহণ করার আগে তিনি এটির উত্থানকে ‘প্রকৃতপক্ষেই আতঙ্ক’ হিসেবে নিয়েছিলেন। ই-মেইলে জাকারবার্গ লিখেছিলেন, ‘(ইনস্টাগ্রামের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমে) এটির পেছনে আমরা কেন বিপুল অঙ্কের অর্থ গুনতে যাব।’

এফটিসি আরও যুক্তি দেয়, একই প্রক্রিয়ায় মেটা ২০১৪ সালে ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারে হোয়াটসঅ্যাপ কিনে নেয়।

আরও পড়ুনএবার ২০০ বিলিয়ন ডলারের ক্লাবে মার্ক জাকারবার্গ, আগে থেকে আছেন তিনজন২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম র ক জ ক রব র গ র ন জ ক রব র গ ইনস ট গ র ম ফ সব ক র টসঅ য প ব যবহ এফট স যবহ র

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ