‘বাংলা নববর্ষের প্রথম প্রহরে আমাদের পরিবারে এসেছে স্বর্গীয় অতিথি, আসমানি পরী। এতে পহেলা বৈশাখের আনন্দে ভিন্ন মাত্র যুক্ত করেছে। যত সংকটই আসুক না কেন, ছোট মেয়েকে ডাক্তার বানাবো’- বলছিলেন রাকিবুল ইসলাম।

পহেলা বৈশাখে মিরপুর-১ নম্বরে মা ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে কন্যা সন্তান জন্ম দেন তার স্ত্রী। সেখানেই কথা হয় রাকিবুলের সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘অর্থ সংকটে নিজে পাড়াশোনায় ঠিকভাবে এগোতে পারেনি। তবে সন্তানকে সেই সংকট দেখতে হবে না। নিজের অর্জিত সম্পদ দিয়ে ছোট সন্তানকে চিকিৎসক বানাতে চাই। সন্তান চিকিৎসক হয়ে নিম্ন আয়ের মানুষদের বিনামূ্ল্যে সেবা করবে, এটা আমার স্বপ্ন। সে গর্ভে আসার আগে থেকে ভবিষ্যতের জন্য টাকা জমাচ্ছি। আশা করি, টাকা পয়সা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি আমার দুই সন্তানকে সুস্থ রাখুক। আর কোনো সন্তান নিতে চাই না। আমরা এই দুই সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করতে চাই।’

সোমবার সকালে হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা যায়, দ্বিতীয় তলায় ২নং শয্যায় শুয়ে রয়েছেন রাকিবুলের স্ত্রী জেসমিন আক্তার। তার পাশে রয়েছে সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তান। সাদা দুধের মতো গায়ের রং। এরই মধ্যে কন্যা সন্তানটির নাম রাখা হয়েছে। বাবা রাকিবুল ইসমালের বড় ভাই রাজীব আহমেদ সদ্য জন্ম নেওয়া শিশু নাম জেবিন তাবাসসুম রেখেছে। তাবাসসুমের বাবা বলেন, সন্তান গর্ভে আসার সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রী ও গর্ভের সন্তান যাতে সুস্থ এজন্য নিয়মিত চিকিৎসকের পরার্মশ নিয়েছি, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছি। নয় মাসে এই হাসপাতালের তিন বার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছে। সব পরীক্ষা স্বাভাবিক ছিল। কোনো জটিলতা ছিল না।

গত রোববার বিকালে মা ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে ভর্তি হয় জেসমিন আক্তার। পহেলা বৈশাখের আগের রাতে সন্তান হওয়ার কথা ছিল। রাকিবুল ইসলাম বলেন, আমরা স্বাভাবিক প্রসবের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। চিকিৎসকরাও আমাদের প্রস্তাবে সাড়া দেয়। তারপর অপেক্ষায় ছিলেন। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে সকাল সাড়ে সাতটায় স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব হয়েছে। আমিনবাজার থেকে ইজিবাইকে করে ১৫ মিনিটের মধ্যে হাসপাতালে আসতে পেরেছি। নিজের ইজিবাইক থাকার কারণে যাতায়াতে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।

তিনি আরও বলেন, গত সাত বছর ধরে ঢাকাতে থাকি। জীবিকার তাগিদে ঢাকায় আসা। ভাড়া বাসায় থাকি। গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জ। অল্প পড়াশোনা করার কারণে কোনো চাকরি হয়নি। ২০২২ সালে পারিবারিকভাবে আমাদের বিয়ে হয়। নিজে এখন ইজিবাইক চালাই। আমাদের প্রথম সন্তানের বয়স দেড় বছর। তার নাম রাবেয়া খাতুন। দ্বিতীয় সন্তান বৈশাখের প্রথম দিনে হবে এমন ধারণ বা কল্পনাও ছিল না। তবে বাংলা নর্ববষের প্রথম প্রহরে সন্তান হওয়ার কারণে হাসপাতালের পরিচালক ও চিকিৎসকেরা এসে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। নার্স ও চিকিৎসকরা মা ও শিশুর আলাদা যত্ন নিয়েছেন। আর আমার বাবা নাতিনের জন্য নতুন জমা উপহার হিসেবে নিয়ে আসেন। যদিও এখনও পরানো হয়নি। বাচ্চা হওয়ার পর বাজার থেকে নতুন তোয়ালে কেনা হয়েছে। এটি দিয়ে মেয়েকে জড়িয়ে রাখা হয়েছে। এখন শিশুটি সারাক্ষণ ঘুমিয়ে থাকে, শুধু ক্ষুধা লাগলে কান্না করে। মায়ের দুধই তার একমাত্র খাবার।

রাকিবুলের স্ত্রী জেসমিন আক্তার গৃহিণী। বিয়ের পর থেকে তারা ঢাকায় থাকেন। জেসমিনের গ্রামের বাড়ি ভোলা। তিনি পড়াশোনা করেননি। জেসমিন সংসার সামলায় আর রাকিবুলের সময় কাটে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে। শুধু রাতে স্বামী স্ত্রীর দেখা হয়। বাচ্চা দেখভাল করার জন্য গ্রাম থেকে ঢাকা এসেছেন জেসমিনের মা-বাবা।

জেসমিন আক্তার বলেন, বৈশাখের প্রথম দিনে সন্তান জন্ম নেওয়াতে আলাদা আনন্দ আছে। তবে সুস্থ বাচ্চা পৃথীবিতে এসেছে, এটা সবচেয়ে বেশি আনন্দের। প্রথম সন্তানটিও এই হাসপাতাল থেকে প্রসব করা।

জানতে চাইলে হাসপাতালটির পরিচালক ডা.

মো. ইকবার কবীর বলেন, নবজাতকের ওজন হয়েছে ২ কেজি ৭০০ গ্রাম। সাধারণত নবজাতকের ওজন আড়াই কেজি হলে স্বাভাবিক ওজন ধরা হয়। তবুও আমরা এরইমধ্যে কিছু মৌলিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছি। অন্য কোনো জটিলতাও নেই। নবজাতক যদি সঠিকভাবে খেতে পারে তাহলে রক্ত পরীক্ষা লাগে না। স্বাভাবিক প্রসবের পর হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা পর্যাবেক্ষণে রাখা হয়। সবকিছু ঠিক থাকলে মঙ্গলবার জেসমিনকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ শ র জন ম র প রথম চ ক ৎসক পর ক ষ র জন য আম দ র প রসব

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ