মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর বাংলাদেশ মানবিক কার্যক্রম এবং উদ্ধারকাজ সফলভাবে সম্পন্ন করে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর টিম। 

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ বানৌজা সমুদ্র অভিযান জাহাজে এই উদ্ধারকারী টিম চট্টগ্রামে ফিরে আসে। 

বাংলাদেশ নৌবাহিনী যথাযথ সামারিত রীতিতে ফিরে আসা জাহাজ ও উদ্ধারকারী দলকে স্বাগত জানায়। ফিরে আসা টিমে ছিলে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর উদ্ধারকর্মী, ডাক্তার, নার্স এবং অগ্নিনির্বাপক কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত সমন্বিত ইউনিট। 

পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সূত্র জানায়, সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধারকাজ ছাড়াও মিয়ানমার সরকারের অনুরোধে বাংলাদেশ ১৫১ দশমিক ৫ টন মানবিক সহায়তা মিয়ানমারে পৌঁছে দিয়েছে। যার মধ্যে খাদ্য, ওষুধ, তাঁবু, পানীয় জল, কম্বল, পোশাক, স্বাস্থ্যবিধি পণ্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছিল।

দায়িত্বশীল প্রতিবেশী এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞ দেশ হিসেবে বাংলাদেশ মিয়ানমারের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছিল এবং তাৎক্ষণিকভাবে মানবিক সহায়তা প্রদান করেছিল।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস মিয়ানমার সরকারের কাছে একটি সমবেদনাপত্র পাঠিয়ে মানবিক সহায়তা প্রদানের প্রস্তাব দেন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং মায়ানমারে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস প্রাসঙ্গিক মানবিক কার্যক্রমের সমন্বয় সাধন করে।

৩০ মার্চ থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত, তিনটি ধাপে, পাঁচটি বাংলাদেশি বিমান এবং একটি নৌবাহিনীর জাহাজ ১৫১ দশমিক ৫ টন সহায়তা পৌঁছে দেয়। মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তিন ধাপে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে বাংলাদেশের সহায়তা হস্তান্তর করেন। দূতাবাস মিয়ানমারে প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও মান্দালয় শহরে মানবিক কর্মকাণ্ডে নিযুক্ত করেছিল বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

ঢাকা/রেজাউল/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

করিডোরের জন্য দু’দেশের সম্মতি লাগবে: জাতিসংঘ 

রাখাইন রাজ্যের বেসামরিক নাগরিকের জন্য মানবিক সহায়তা পাঠাতে করিডোরের বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সম্মতি প্রয়োজন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। 

ঢাকার জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় সমকালকে এক বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশে জাতিসংঘ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। একই সঙ্গে রাখাইনে মানবিক পরিস্থিতির অবনতি নিয়েও উদ্বিগ্ন তারা।

জাতিসংঘ অন্য অংশীদারকে সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন জোরদার করবে। বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে যে কোনো মানবিক সহায়তা বা সরবরাহের জন্য প্রথমে দুই সরকারের মধ্যে সম্মতি প্রয়োজন। সীমান্ত অতিক্রম করে সহায়তা দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর অনুমতি নেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এটি ছাড়া জাতিসংঘের সরাসরি ভূমিকা সীমিত।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গত রোববার এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, ‘নীতিগতভাবে আমরা রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোরের ব্যাপারে সম্মত। কারণ এটি একটি মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ হবে। তবে আমাদের কিছু শর্ত আছে। সেই শর্ত যদি পালন করা হয়, অবশ্যই আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।’ 

এ খবর চাউর হলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নের শঙ্কা করছে রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া সরকার কীভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

তথাকথিত মানবিক করিডোর স্থাপন নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কারও সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনা হয়নি বলে দাবি করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

গত অক্টোবরে জাতিসংঘের উন্নয়ন প্রকল্প (ইউএনডিপি) রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে ১২ পাতার একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে রাখাইনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির কথা উল্লেখ করা হয়। রাখাইনের পণ্য প্রবেশের জন্য আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সীমান্ত বন্ধ রয়েছে, আয়ের কোনো উৎস নেই। ভয়াবহ মূল্যস্থিতি, অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদনে ধস, জরুরি সেবা এবং সামাজিক সুরক্ষায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে সেখানে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতি আরও অবনতির শঙ্কা করছে জাতিসংঘ। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ