নববর্ষের প্রথম দিনে ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই হোসেন ও ইয়াসমিন দম্পতির কোলজুড়ে এসেছিল নতুন অতিথি। তখন তাদের পরিবারে ছিল বাধভাঙা উচ্ছ্বাস। কিন্তু সেই উচ্ছ্বাস বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি হোসেন-ইয়াসমিন দম্পতির, রূপ নেয় বিষাদে। সোমবার রাত ৯টায় তারা জানতে পারেন শিশুটি আর নেই।
এর সোমবার ভোর ৫টা ৪৮ মিনিটে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হোসেন-ইয়াসমিন দম্পতির তৃতীয় কন্যার জন্ম হয়। শখ করে নামও রেখেছিলেন ইকরাতুল জান্নাত হাসানা। বড় হয়ে ডাক্তার বানাতে চেয়েছিলেন মেয়েকে। কিন্তু সব স্বপ্ন যেন অধরাই রয়ে গেল তাদের।
শিশুটির চাচী ফাতেমা আক্তার জানান, সোমবার রাত ৯ টায় হাসপাতালের এনআইসিইউতে থাকা অবস্থায় শিশুটি মারা যায়। কর্তব্যরত ডাক্তার তাদেরকে ডেকে মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন।
এদিকে মেয়ের মৃত্যুর খবরে বিলাপ করছেন মা ইয়াসমিন আক্তার। তিনি বলেন, জন্মের পর মেয়েকে একবারের জন্যও কোলে নিতে পারিনি। তাকে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল আমার। তাকে ডাক্তার বানাতে চেয়েছিলাম।
‘বাংলা বছরের প্রথম দিনে জন্ম হওয়াতে আমাদের পরিবারে সুখের বন্যা বয়ে গিয়েছিল। আল্লাহ তো তার হায়াত দেয় নাই। এজন্য জন্ম আর মৃত্যুর দিন একই রয়ে গেল।’ বলেন তিনি।
শিশুটির বাবা হোসেন আলী বলেন, ‘মেয়েকে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল আমাদের। সব স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল। বাবা হওয়ার পর কত মানুষকে গর্ব করে বলেছিলাম। এখন এসব শুভেচ্ছা আর গর্ব দিয়ে কি করব আমি। আমার মেয়েটাই আর বাঁচল না।’
চিকিৎসকরা জানান, শিশুটির অবস্থা সংকটাপূর্ণ ছিল। মাত্র ২৯ সপ্তাহে পৃথিবীর আলো দেখে শিশুটি। নির্দিষ্ট বয়সের আগে জন্ম হওয়ায় তাকে এনআইসিইউতে রাখা হয়েছিল। সেখানে থাকা অবস্থায় রাত ৯টার দিকে মারা যায় শিশুটি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ময়মনস হ
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?