দৈনিক ভিত্তিতে শ্রমিক নিয়োগ দেবে সরকার
Published: 16th, April 2025 GMT
সরকারের সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা, দপ্তর, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে জরুরি কাজ সম্পাদনে সাময়িকভাবে দৈনিক ভিত্তিতে শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া যাবে। যারা জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক এবং বয়স ১৮ থেকে ৫৮ বছরের মধ্যে, তারা দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োগের সুযোগ পাবেন।
জরুরি কাজ সম্পাদনে সাময়িকভাবে দৈনিক ভিত্তিতে শ্রমিক নিয়োগের লক্ষ্যে ‘দৈনিক ভিত্তিতে সাময়িক শ্রমিক নিয়োজিতকরণ নীতিমালা, ২০২৫’ প্রণয়ন করেছে সরকার। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) অর্থ সচিব ড.
এ নীতিমালা অনুযায়ী, এক জন শ্রমিক মাসে সর্বোচ্চ ২২ দিন কাজের সুযোগ পাবেন। ১৮ থেকে ৫৮ বছর বয়সীরা কাজের সুযোগ পাবেন। বয়স প্রমাণে জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন সনদ থাকতে হবে। নারী, পুরুষ ও তৃতীয় লিঙ্গের মধ্যে কোনো বৈষম্য করা যাবে না। মজুরি দেওয়া হবে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস অথবা ব্যাংক হিসাবে। শ্রমিকের জন্য নিরাপদ ও নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা হবে।
‘দৈনিক ভিত্তিতে সাময়িক শ্রমিক নিয়োজিতকরণ নীতিমালা, ২০২৫’ অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং শুধু সাময়িক শ্রমিক নিয়োগ করার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা, দপ্তর, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে সাময়িকভাবে নিয়োজিত শ্রমিকের মজুরির হার অর্থ বিভাগ থেকে নির্ধারিত হবে।
যেসব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা, দপ্তর, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক নিয়োগ সংক্রান্ত নিজস্ব বিধি, প্রবিধি, নীতিমালা আছে, তাদের এ নীতিমালা কার্যকর হওয়ার পর অর্থ বিভাগের মতামত নিয়ে তা সংশোধন করতে হবে।
সাময়িক শ্রমিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে মজুরি দেয়া হবে। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের হিসাব বিবরণী নিয়োগ দেওয়া কর্তৃপক্ষকে পরবর্তী মাসের বিলের সঙ্গে হিসাবরক্ষণ অফিসে আবশ্যিকভাবে দাখিল ও সমন্বয় করতে হবে।
শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া কর্তৃপক্ষ শ্রমিকের জন্য নিরাপদ ও শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করবে। নিয়োজিত নারী শ্রমিকের জন্য নিরাপদ ও নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিকদের কর্মকালে পরিবেশের ওপর যেন কোনো বিরূপ প্রভাব না পড়ে, শ্রমিক নিয়োজিত করা কর্তৃপক্ষ সে বিষয়টি নিশ্চিত করবে, এমন বিধান রাখা হয়েছে নীতিমালায়।
‘সাময়িক কার্য’ বলতে সরকারের মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা, দপ্তর, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের জরুরি ধরনের অত্যাবশ্যক কাজ বোঝাবে, যা সময়ে সময়ে প্রয়োজন হয় এবং যা প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান জনবল দ্বারা সম্পাদন করা সম্ভব হয় না।
‘সাময়িক শ্রমিক’ বলতে বোঝাবে—কেবল মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা, দপ্তর, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের আওতায় দৈনিক ভিত্তিতে সাময়িকভাবে নিয়োজিত ব্যক্তি ও যিনি সরকারি তহবিল বা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অর্থ হতে দৈনিক ভিত্তিতে মজুরি প্রাপ্য হবেন।
দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োজিত সাময়িক শ্রমিকের যোগ্যতা:
জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
শ্রমিকের বয়সসীমা হবে ১৮ থেকে ৫৮ বছর।
শারীরিক ও মানসিকভাবে সক্ষম হতে হবে।
শ্রমিক নিয়োজিত করার সময় বয়সের প্রমাণ হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম নিবন্ধন সনদ থাকতে হবে।
শ্রমিক নিয়োজিত করার সময় সার্বিক সামাজিক আচরণ ও স্বভাব-চরিত্র বিষয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি/ সিটি কর্পোরেশন/ পৌরসভার কাউন্সিলর/ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত ইতিবাচক প্রত্যয়নপত্র থাকতে হবে।
মজুরি বা পারিশ্রমিক নির্ধারণ:
মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, সংস্থা, রাষ্টায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের জরুরি কাজের জন্য নিয়োজিত সাময়িক শ্রমিকের মজুরির হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের জারি করা শ্রমিক মজুরি-সংক্রান্ত পরিপত্র অনুসরণ করতে হবে, যা অর্থ বিভাগ প্রয়োজনে সময়ে সময়ে পরিমার্জন/পরিবর্তন/সংশোধন করবে।
জরুরি কাজের জন্য নিয়োজিত সাময়িক শ্রমিক অর্থ বিভাগ নির্ধারিত মজুরি ছাড়া অন্য কোনো আর্থিক সুবিধা পাবেন না।
মজুরি প্রদানের ক্ষেত্রে নারী, পুরুষ ও তৃতীয় লিঙ্গের মধ্যে কোনো প্রকার বৈষম্য করা যাবে না।
শ্রমিক নিয়োগ করা কর্তৃপক্ষকে অর্থবছরের সুনির্দিষ্ট কাজের জন্য মোট জন-দিন হিসাবে সাময়িক শ্রমিককে প্রদেয় মজুরি বাবদ প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ হিসাব করতে হবে।
সাময়িক শ্রমিক নিয়োজিত করার অনুমোদন/বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে নির্ধারিত ছক অনুযায়ী আবশ্যিকভাবে তথ্য পাঠাতে হবে।
দৈনিক ভিত্তিতে সাময়িক শ্রমিক নিয়োগে যেসব বিষয় অনুসরণ করতে হবে:
সাময়িক শ্রমিক নিয়োজিত করার লক্ষ্যে কোনো পদ সৃজন করা যাবে না।
অন্য কোনো আইন/অধ্যাদেশ বা বিধিতে দৈনিক ভিত্তিতে সাময়িক শ্রমিক নিয়োগ-সংক্রান্ত বিষয় সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকলে মন্ত্রণালয়/ বিভাগ/ দপ্তর/ রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান/স্বা য়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে জরুরি কাজের জন্য অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে উক্ত আইন/অধ্যাদেশ অনুসরণ করে শ্রমিক নিয়োগ করা যাবে।
এক জন সাময়িক শ্রমিক দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োজিত হবেন এবং মাসে ২২ দিনের বেশি সময়ের জন্য কোনোক্রমে নিয়োজিত রাখা যাবে না।
সকল মন্ত্রণালয়/ বিভাগ/ দপ্তর/ সংস্থা/ রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান /স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শ্রমিকের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)/ জন্মনিবন্ধন সনদসহ প্রাথমিক ব্যক্তিগত তথ্যাদি, মজুরি ইত্যাদি বিষয় ডিজিটাল ডাটাবেজে সংরক্ষণ করবে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ।
অত্যাবশ্যকীয়ভাবে কার্যক্রম বাস্তবায়নে সাময়িক শ্রমিক নিয়োগ করার বিষয় বা এ-সংশ্লিষ্ট বিশেষ ব্যতিক্রম কোনো বিষয় উত্থাপিত হলে বা থাকলে অর্থ বিভাগের অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে।
অনুমোদিত শূন্য পদ/ নিয়মিত পদ/ জাতীয় বেতন স্কেলের গ্রেডভুক্ত পদের বিপরীতে কাজ করার জন্য সাময়িক শ্রমিক নিয়োগ করা যাবে না।
অর্থ বিভাগের ‘আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবা গ্রহণ নীতিমালা, ২০১৮’ অথবা এর সর্বশেষ সংশোধিত নীতিমালার আওতাভুক্ত সেবাগুলোর বিপরীতে দৈনিক ভিত্তিতে সাময়িক শ্রমিক নিয়োগ করা যাবে।
শ্রমিক নিয়োগ করার ক্ষেত্রে নারী, পুরুষ ও তৃতীয় লিঙ্গের মধ্যে কোনো বৈষম্য লালন করা যাবে না।
যেসব বিষয় নীতিমালার আওতাবহির্ভূত থাকবে:
‘সাময়িক শ্রমিক’র সংজ্ঞা ও সংশ্লিষ্ট বিষয় ছাড়া অন্য কোনো আইন/অধ্যাদেশ বা বিধির আলোকে অন্য কোনো সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত শ্রমিকের সংজ্ঞা।
‘কোম্পানি আইন ১৯৯৪’-এর আওতায় গঠিত কোনো রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির নিযুক্ত শ্রমিক।
‘সোসাইটিজ রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট ১৮৬০’ এর আওতায় গঠিত কোনো প্রতিষ্ঠানের নিযুক্ত শ্রমিক।
‘বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬’ ও ‘বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫’ প্রযোজ্য হয়, এরকম শিল্প প্রতিষ্ঠানের নিযুক্ত শ্রমিক।
ঢাকা/হাসনাত/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক জ র জন য ন শ চ ত কর র জন য ন অন য ক ন পর ব শ অন ম দ সরক র র আওত
এছাড়াও পড়ুন:
নারীদের সেরা সঞ্চয়; পরিবার সঞ্চয়পত্রে মুনাফা কত, কীভাবে কিনবেন
দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় সঞ্চয়পত্র হলো পরিবার সঞ্চয়পত্র। নারীরা এই সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। এই সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার তুলনামূলক বেশি এবং প্রতি মাসে মুনাফা তোলা যায়।
পরিবার সঞ্চয়পত্র নামে এই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে মেয়াদ শেষে অর্থাৎ পাঁচ বছর পর ১১ দশমিক ৯৩ শতাংশ হারে মুনাফা পাবেন।
বর্তমানে যে চারটি সঞ্চয়পত্র আছে, এর মধ্যে পেনশনার সঞ্চয়পত্রের পরেই এই সঞ্চয়পত্রে সবচেয়ে বেশি মুনাফার হার। ২০০৯ সালে এই সঞ্চয়পত্র চালু করে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর। দেড় দশক ধরে এই সঞ্চয়পত্র দেশের অন্যতম জনপ্রিয় সঞ্চয়পত্র হিসেবে পরিচিত।
মূল্যমান কত১০ হাজার টাকা, ২০ হাজার টাকা, ৫০ হাজার টাকা, ১ লাখ টাকা, ২ লাখ টাকা এবং ১০ লাখ টাকা।
কোথায় পাওয়া যায়জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখাসমূহ, বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ এবং ডাকঘর থেকে কেনার পাশাপাশি নগদায়ন করা যায়।
মেয়াদ
পাঁচ বছর
মুনাফার হার১ জুলাই থেকে সরকার সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমিয়েছে। যেমন পরিবার সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে পঞ্চম বছর শেষে ১১ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আর সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ।
মেয়াদ পূর্তির আগে নগদায়ন করলে কম হারে মুনাফা প্রাপ্য হবে এবং অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধিত হয়ে থাকলে তা মূল টাকা থেকে কর্তন করে সমন্বয়পূর্বক অবশিষ্ট মূল টাকা পরিশোধ করা হবে।
উৎসে করপাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সর্বমোট বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার ওপর ৫ শতাংশ হারে এবং এর অধিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার ওপর ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তন করা হয়।
কারা কিনতে পারবেনতিন শ্রেণির বিনিয়োগকারী পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবে। এক. ১৮ ও তদূর্ধ্ব বয়সের যেকোনো বাংলাদেশি নারী; দুই. যেকোনো বাংলাদেশি শারীরিক প্রতিবন্ধী (পুরুষ ও মহিলা); তিন. ৬৫ ও তদূর্ধ্ব বয়সের যেকোনো বাংলাদেশি (পুরুষ ও মহিলা) নাগরিক।
ক্রয়ের ঊর্ধ্বসীমাএকক নামে সর্বোচ্চ ৪৫ (পঁয়তাল্লিশ) লাখ টাকা।
অন্য সুবিধাপরিবার সঞ্চয়পত্র কেনায় কিছু সুবিধা আছে। যেমন মাসিক ভিত্তিতে মুনাফা পাওয়া যায়; নমিনি নিয়োগ বা পরিবর্তন ও বাতিল করা যায়; সঞ্চয়পত্রের ক্রেতার মৃত্যুর পর নমিনি সঙ্গে সঙ্গে সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করে টাকা উত্তোলন করতে পারেন অথবা মেয়াদ পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত যথারীতি মাসে মাসে মুনাফা উত্তোলন করতে পারেন।