খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী। ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ সহানুভূতির সঙ্গে পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে। অন্যরা শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।

গতকাল মঙ্গলবার ও আজ বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো পৃথক পৃথক বিবৃতিতে কুয়েট শিক্ষার্থীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে ছাত্রসংগঠনগুলো। গত সোমবার রাতে কুয়েটের ১০১তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কুয়েটের উপাচার্যের অপসারণ চেয়ে ক্যাম্পাসে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা।

এ ঘটনায় গতকাল এক বিবৃতিতে কুয়েট শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটকে সহানুভূতির সঙ্গে পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন। ছাত্রদল বলেছে, ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে এনে দ্রুত শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে হবে।

এ ঘটনার নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের ভিত্তিতে নির্দোষ শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে ছাত্রশিবির। গতকাল এক বিবৃতিতে শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম অবিলম্বে নির্দোষ শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার এবং একটি গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে যাঁদের বিরুদ্ধে বিধিমালা লঙ্ঘন, বহিরাগত সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করার জোর দাবি জানান।

এদিকে অবিলম্বে কুয়েটের শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ ও তাঁদের নামে হওয়া মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, হামলার বিচার এবং সব ঘটনার দায় নিয়ে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেছে ছাত্র ইউনিয়ন। আজ এক বিবৃতিতে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহির শাহরিয়ার ও সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন এ দাবি জানান।

কুয়েটের শিক্ষার্থীদের নামে হওয়া মিথ্যা মামলা ও অন্যায় বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে গতকাল বিবৃতি দিয়েছেন ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মশিউর রহমান খান ও সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ। তাঁদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের নামে মিথ্যা মামলা ও বহিষ্কারের মতো অন্যায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মূলত হামলাকারী সন্ত্রাসীদের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে।

অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের নামে হওয়া মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি সালমান সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ। গতকাল এক বিবৃতিতে তাঁরা এ দাবি জানান।

আরও পড়ুন৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার, ২ মে হল খোলার সিদ্ধান্ত১৪ এপ্রিল ২০২৫

কুয়েটের শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ ও মামলা প্রত্যাহার এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার দাবি করেছে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী। গতকাল এক বিবৃতিতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি দিলীপ রায় ও সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল এ দাবি জানান।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়। ওই দিন রাতেই খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে প্রশাসন।

২৫ ফেব্রুয়ারি সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করা হয়। এর মধ্যে ১০ এপ্রিল কুয়েটের ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আমলি আদালতে মামলা করেন নগরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার হোচেন আলী নামের এক ব্যক্তি। মামলার পরপরই সোমবার (১৪ এপ্রিল) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আরও পড়ুনকুয়েটের শিক্ষার্থীদের একদফা ও হলে তালা ভাঙা১২ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গতক ল এক ব ব ত ত ৩৭ শ ক ষ র থ ক ছ ত রদল ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ