ভর্তুকি দামে দেওয়া সমন্বিত ধান মাড়াই যন্ত্র (কম্বাইন হারভেস্টার) নিয়ে লুকোচুরি গেল ১৫ বছর ধরে চলেছে সুনামগঞ্জের হাওরজুড়ে। এখনও সেটি অব্যাহত আছে। হিসাবের ফাইলে হারভেস্টার যন্ত্রের যে খতিয়ান, বাস্তবে তার দেখা নেই।
জেলায় ৭৭০টি হারভেস্টার মেশিন কাজ করছে বলে দাবি করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। অচল মেশিনের সংখ্যা ৬৯টি। অথচ স্থানীয় কৃষকদের দাবি, এতগুলো ধানকাটার যন্ত্র হাওরে নেই। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় হারভেস্টার আছে ৮৫টি, এর মধ্যে সচল ৭৮টি এবং কাজ করছে না ৭টি দাবি করা হয়েছে। বাস্তবতার সঙ্গে এই তথ্যের মিল পাওয়া যায়নি।
কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গেল শনিবার সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠইর ইউনিয়নে গিয়ে সাতটি কম্বাইন হারভেস্টারের মধ্যে একটির দেখা মিলেছে। সেটিও বিকল।
ইউনিয়নের গোলেরগাঁও গ্রামে একই পরিবারের চার ভাইয়ের নামে ৭০ শতাংশ ভর্তুকির চারটি হারভেস্টার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। ২০২২ সালে বরাদ্দ পাওয়া ওই হারভেস্টার গেল দুই বছরে চোখে দেখেছেন– এমন কৃষক সেখানে খুঁজে পাওয়া যায়নি। যন্ত্রগুলো কোথায় আছে, এলাকার কেউ জানেন না। অনেকের ধারণা, এই হারভেস্টারগুলো বিক্রি হয়ে গেছে।
ইউনিয়নের কান্দারহাটি গ্রামের কৃষক ফারুক আহমেদ জানান, এলাকায় চারটি হারভেস্টার আছে; অথচ তারা দেখেন না। তারা নিশ্চিত, এলাকায় কোনো হারভেস্টার নেই। অভিযুক্তরা বলছেন, একটি যন্ত্র কোম্পানি তাদের না দিয়েই বিক্রি দেখিয়েছে। অন্য তিনটি যন্ত্রে ত্রুটি আছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠইর ইউনিয়নের সাতজনকে হারভেস্টার দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন– গোলেরগাঁও গ্রামের আবরু মিয়া, আনোয়ার হোসেন, আব্দাই মিয়া ও আয়ুব আলী, কাঠইর গ্রামের আব্দুল মতিন, শাখাইতির আব্দুল হান্নান ও কলাইয়ার মিরাজুল আমিন।
এসব এলাকায় গিয়ে জানা যায়, আরজ আলীর পরিবার এলাকায় আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। তাঁর এক ছেলে শাহ্ আলম দেলোয়ার আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা। তিনি বলেন, চার ভাইয়ের নামে ৭০ শতাংশ ভর্তুকির চারটি হারভেস্টার বরাদ্দ হয়েছে। আব্দাই মিয়ার নামে এস-কিউ কোম্পানির যে হারভেস্টার বরাদ্দ হয়েছিল, সেটি তারা পাননি। আব্দাই মিয়ার নামে বিতরণ দেখিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছে ওই কোম্পানি। এ বিষয়ে সম্প্রতি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তারা। অন্য তিনটি হারভেস্টার যন্ত্রের একটি বাড়িতে নষ্ট অবস্থায় মেরামত করতে দেখা যায়। অন্য দুটির একটি যশোরে, আরেকটি জেলার জামালগঞ্জে রয়েছে বলে জানান তিনি।
এস-কিউ কোম্পানির সুনামগঞ্জের মার্কেটিং অফিসার তানভির আহমেদকে এ ব্যাপারে কথা বলতে কয়েকবার ফোন করে এবং খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।
কাঠইর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিনয় তালুকদার জানান, এখানে গেল বছরের জানুয়ারি মাসে যোগদান করেছেন তিনি। ইউনিয়নের সাতটি হারভেস্টার যন্ত্রের চারটি কাজ করছে না, এলাকায়ও নেই। বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের জানিয়েছেন। অন্য তিনটির একটি দেখার হাওরে, অন্য দুটি কৃষকের বাড়িতে আছে– চাইলে কৃষকরা ধান কাটার জন্য নিতে পারবেন।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাকিবুল আলমের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আব্দাই মিয়া হারভেস্টার যন্ত্রের টাকা দেওয়ার পর কোম্পানিকে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। কোম্পানি ৭০ শতাংশ ভর্তুকিও কৃষি বিভাগ থেকে নিয়েছে। ডেলিভারিও দেখানো হয়েছে। ২০২২ সালের শেষের দিকে অফিসিয়ালি হারভেস্টার যন্ত্রটি পেয়েছিলেন তিনি। সব কার্যক্রম শেষে বছরখানেক পর তিনি জানালেন, যন্ত্রটি পাননি। কৃষি অফিসের তদারক কর্মকর্তা বাড়িতে খোঁজ নিতে গেলে তিনি (আব্দাই মিয়া) জানান, যন্ত্র পাননি তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মোস্তফা ইকবাল আজাদ বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে গেল অর্থবছর পর্যন্ত ৭০ শতাংশ ভর্তুকির হারভেস্টার যন্ত্র দেওয়া হয়েছে। ভর্তুকির হারভেস্টার দেওয়ার ক্ষেত্রে কৃষক নির্ধারণ করে উপজেলা যাচাই কমিটি। ওই কমিটিগুলোর সভাপতি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সদস্য সচিব কৃষি কর্মকর্তা। বরাদ্দকৃত হারভেস্টার থেকে বেশি কৃষক হারভেস্টার পেতে আবেদন করলে, যাচাই কমিটি কর্তৃক কৃষক নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ স ন মগঞ জ সদর উপজ ল কর মকর ত শ ভর ত ক ভর ত ক র অফ স র এল ক য় বর দ দ
এছাড়াও পড়ুন:
টানা তিন মাস কমল দেশের পণ্য রপ্তানি
বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান দুই উৎসের একটি পণ্য রপ্তানি স্বস্তিতে নেই। টানা তিন মাস ধরে দেশের পণ্য রপ্তানি কমেছে। গত মাসে রপ্তানি হয়েছে ৩৮২ কোটি ডলারের পণ্য। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ কম।
চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে প্রায় ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। তারপরের দুই মাস, অর্থাৎ আগস্টে ২ দশমিক ৯৩ এবং সেপ্টেম্বরে পণ্য রপ্তানি কমেছে ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। তাতে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবরে) সামগ্রিক পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশে পৌঁছেছে। অথচ বিদায়ী অর্থবছর পণ্য রপ্তানি বেড়েছিল সাড়ে ৮ শতাংশ।
পণ্য রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ পরিসংখ্যান আজ সোমবার প্রকাশ করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে ১ হাজার ৬১৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ২ শতাংশ বেশি।
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত অক্টোবরে তৈরি পোশাক, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হিমায়িত চিংড়ি, প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানি কমেছে। তবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, চামড়াবিহীন জুতা ও প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। মূলত তৈরি পোশাকের রপ্তানি ৮ শতাংশ কমে যাওয়ায় সামগ্রিক পণ্য রপ্তানি নেতিবাচক ধারায় চলে গেছে।
দেশের মোট রপ্তানি ৮০ শতাংশই তৈরি পোশাক। টানা তিন মাস ধরে তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমলেও অর্থবছরের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। গত জুলাইয়ে ৩৯৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল সাড়ে ২৪ শতাংশ। পরের মাসে রপ্তানি কমে পৌনে ৫ শতাংশ। আর সেপ্টেম্বরে কমেছিল প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ। গত মাসে, অর্থাৎ অক্টোবরে রপ্তানি হয়েছে ৩০২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। এই রপ্তানি গত বছরের অক্টোবরের তুলনায় ৮ শতাংশ কম।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ১ হাজার ২৯৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ২৮১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক।
দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পণ্য রপ্তানি খাত বর্তমানে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। চলতি অর্থবছর এখন পর্যন্ত ইতিবাচক ধারায় আছে এই খাতের রপ্তানি। গত জুলাই-অক্টোবর সময়ে রপ্তানি হয়েছে ৪১ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি।
পণ্য রপ্তানিতে তৃতীয় শীর্ষ খাত কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে ৩৮ কোটি ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় পৌনে ২ শতাংশ কম। শুধু গত মাসে ১০ কোটি ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রপ্তানি কমেছে সাড়ে ৯ শতাংশ।
এদিকে চতুর্থ শীর্ষ রপ্তানি খাত হোম টেক্সটাইলের রপ্তানি গত মাসে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অক্টোবরে রপ্তানি হয়েছে ৭ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ শতাংশ। যদিও সেপ্টেম্বরে রপ্তানি কমেছিল দশমিক ৫৪ শতাংশ। সামগ্রিকভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে ২৮ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে ৯ শতাংশ বেশি।
দেশের পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি এখনো ইতিবাচক ধারায় আছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে ২৭ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেশি। শুধু গত মাসে ৮ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ শতাংশ।