Samakal:
2025-05-01@00:22:04 GMT

ফাইলে বন্দি ৭৭০ হারভেস্টার

Published: 17th, April 2025 GMT

ফাইলে বন্দি ৭৭০ হারভেস্টার

ভর্তুকি দামে দেওয়া সমন্বিত ধান মাড়াই যন্ত্র (কম্বাইন হারভেস্টার) নিয়ে লুকোচুরি গেল ১৫ বছর ধরে চলেছে সুনামগঞ্জের হাওরজুড়ে। এখনও সেটি অব্যাহত আছে। হিসাবের ফাইলে হারভেস্টার যন্ত্রের যে খতিয়ান, বাস্তবে তার দেখা নেই।

জেলায় ৭৭০টি হারভেস্টার মেশিন কাজ করছে বলে দাবি করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। অচল মেশিনের সংখ্যা ৬৯টি। অথচ স্থানীয় কৃষকদের দাবি, এতগুলো ধানকাটার যন্ত্র হাওরে নেই। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় হারভেস্টার আছে ৮৫টি, এর মধ্যে সচল ৭৮টি এবং কাজ করছে না ৭টি দাবি করা হয়েছে। বাস্তবতার সঙ্গে এই তথ্যের মিল পাওয়া যায়নি।

কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গেল শনিবার সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠইর ইউনিয়নে গিয়ে সাতটি কম্বাইন হারভেস্টারের মধ্যে একটির দেখা মিলেছে। সেটিও বিকল।

ইউনিয়নের গোলেরগাঁও গ্রামে একই পরিবারের চার ভাইয়ের নামে ৭০ শতাংশ ভর্তুকির চারটি হারভেস্টার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। ২০২২ সালে বরাদ্দ পাওয়া ওই হারভেস্টার গেল দুই বছরে চোখে দেখেছেন– এমন কৃষক সেখানে খুঁজে পাওয়া যায়নি। যন্ত্রগুলো কোথায় আছে, এলাকার কেউ জানেন না। অনেকের ধারণা, এই হারভেস্টারগুলো বিক্রি হয়ে গেছে।

ইউনিয়নের কান্দারহাটি গ্রামের কৃষক ফারুক আহমেদ জানান, এলাকায় চারটি হারভেস্টার আছে; অথচ তারা দেখেন না। তারা নিশ্চিত, এলাকায় কোনো হারভেস্টার নেই। অভিযুক্তরা বলছেন, একটি যন্ত্র কোম্পানি তাদের না দিয়েই বিক্রি দেখিয়েছে। অন্য তিনটি যন্ত্রে ত্রুটি আছে। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠইর ইউনিয়নের সাতজনকে হারভেস্টার দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন– গোলেরগাঁও গ্রামের আবরু মিয়া, আনোয়ার হোসেন, আব্দাই মিয়া ও আয়ুব আলী, কাঠইর গ্রামের আব্দুল মতিন, শাখাইতির আব্দুল হান্নান ও কলাইয়ার মিরাজুল আমিন। 

এসব এলাকায় গিয়ে জানা যায়, আরজ আলীর পরিবার এলাকায় আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। তাঁর এক ছেলে শাহ্‌ আলম দেলোয়ার আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা। তিনি বলেন, চার ভাইয়ের নামে ৭০ শতাংশ ভর্তুকির চারটি হারভেস্টার বরাদ্দ হয়েছে। আব্দাই মিয়ার নামে এস-কিউ কোম্পানির যে হারভেস্টার বরাদ্দ হয়েছিল, সেটি তারা পাননি। আব্দাই মিয়ার নামে বিতরণ দেখিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছে ওই কোম্পানি। এ বিষয়ে সম্প্রতি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তারা। অন্য তিনটি হারভেস্টার যন্ত্রের একটি বাড়িতে নষ্ট অবস্থায় মেরামত করতে দেখা যায়। অন্য দুটির একটি যশোরে, আরেকটি জেলার জামালগঞ্জে রয়েছে বলে জানান তিনি।
এস-কিউ কোম্পানির সুনামগঞ্জের মার্কেটিং অফিসার তানভির আহমেদকে এ ব্যাপারে কথা বলতে কয়েকবার ফোন করে এবং খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।
কাঠইর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিনয় তালুকদার জানান, এখানে গেল বছরের জানুয়ারি মাসে যোগদান করেছেন তিনি। ইউনিয়নের সাতটি হারভেস্টার যন্ত্রের চারটি কাজ করছে না, এলাকায়ও নেই। বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের জানিয়েছেন। অন্য তিনটির একটি দেখার হাওরে, অন্য দুটি কৃষকের বাড়িতে আছে– চাইলে কৃষকরা ধান কাটার জন্য নিতে পারবেন।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাকিবুল আলমের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আব্দাই মিয়া হারভেস্টার যন্ত্রের টাকা দেওয়ার পর কোম্পানিকে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। কোম্পানি ৭০ শতাংশ ভর্তুকিও কৃষি বিভাগ থেকে নিয়েছে। ডেলিভারিও দেখানো হয়েছে। ২০২২ সালের শেষের দিকে অফিসিয়ালি হারভেস্টার যন্ত্রটি পেয়েছিলেন তিনি। সব কার্যক্রম শেষে বছরখানেক পর তিনি জানালেন, যন্ত্রটি পাননি। কৃষি অফিসের তদারক কর্মকর্তা বাড়িতে খোঁজ নিতে গেলে তিনি (আব্দাই মিয়া) জানান, যন্ত্র পাননি তারা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মোস্তফা ইকবাল আজাদ বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে গেল অর্থবছর পর্যন্ত ৭০ শতাংশ ভর্তুকির হারভেস্টার যন্ত্র দেওয়া হয়েছে। ভর্তুকির হারভেস্টার দেওয়ার ক্ষেত্রে কৃষক নির্ধারণ করে উপজেলা যাচাই কমিটি। ওই কমিটিগুলোর সভাপতি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সদস্য সচিব কৃষি কর্মকর্তা। বরাদ্দকৃত হারভেস্টার থেকে বেশি কৃষক হারভেস্টার পেতে আবেদন করলে, যাচাই কমিটি কর্তৃক কৃষক নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ স ন মগঞ জ সদর উপজ ল কর মকর ত শ ভর ত ক ভর ত ক র অফ স র এল ক য় বর দ দ

এছাড়াও পড়ুন:

মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের

এমন পারফরম্যান্সই তো চাওয়ার থাকে ভালো দলের কাছে। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য, সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি, তাইজুল ইসলামের ৯ উইকেট শিকারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট হারের পর যে সমালোচনা হয়েছিল, তার জবাবটা বোধ হয় দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনে জিতে দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ‘বাউন্স ব্যাক’ করে সিরিজ ড্র ১-১-এ।

চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। এটি সম্ভব হয়েছে পছন্দের উইকেটে খেলা হওয়ায়। স্পিন ভুবনে উইকেট উৎসব করেছেন তাইজুল, মিরাজ গাঁটছড়া বেঁধে। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি দারুণ অর্জন অধারাবাহিক ব্যাটিং লাইনআপের। এই টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো করেছে। লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই সঙ্গ দেন সাদমানকে। লোয়ার মিডলঅর্ডারে মিরাজের লড়াই ছিল দেখার মতো।

টেলএন্ডারদের নিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। শেষ ৩ উইকেটে তৃতীয় দিন ১৫৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৪৪৪ রানে। ২১৭ রানের লিড থাকায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন পূরণ হয়। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর। 

গত বছর দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুটাও ভালো ছিল না। সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামে জিততেই হতো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কন্ডিশনেও পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে খেলা হয় দ্বিতীয় টেস্ট। যেখানে শাসন ছিল স্পিনারদের। পছন্দের উইকেট পাওয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তিনজনই দারুণ বোলিং করেন প্রথম থেকে।

দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিং করে গেছেন। বেশি উইকেট না পেলেও এক প্রান্তে ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন। যার সুফল তাইজুল ও মিরাজ পেয়েছেন অন্য প্রান্তে। প্রথম দিন শেষ সেশনে ব্রেক থ্রু দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার পরে পিক করে ৬ উইকেট শিকার করেন। জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে প্রথম দিন শেষ করে। পরের দিন এক বল খেলে ওই রানেই অলআউট হয়। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে বড় লক্ষ্য নিয়ে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি করায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ হয়। সাদমানের সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম কিছু রান করায় ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।

সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাদমান আশা প্রকাশ করেন, মিরাজ ও তাইজুল জুটি করবেন। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি দু’জনের। বেশি ভালো করেছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজের সঙ্গে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি। অভিষেক টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং দারুণ লেগেছে অধিনায়ক শান্তর কাছে। ৮০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মাথায় বল লাগার পরও বিচলিত হননি তিনি। মিরাজ ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রাপ্তি হিসেবে ওপেনিং জুটির ভালো খেলা, সাদমানের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ৫ উইকেট শিকার ও সাকিবের রান করাকে মনে করেন শান্ত। 

শেষের তিন উইকেটে তৃতীয় দিন প্রায় দুই সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ। তাইজুল, সাকিব ও হাসানকে নিয়ে ১৫৩ রান যোগ করে। মিরাজ ১০৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে উইকেট দেন। নার্ভাস নাইটির ঘরে প্রবেশ করে কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিলেন মিরাজ। ৯৮ রানে পৌঁছানোর পর সেঞ্চুরি ছুঁতে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল চলে যাওয়ায় এক রানে থামতে হয়। তখন স্ট্রাইকে হাসান থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কখন হাসান আউট হয়ে যায়, সে ভয় কাজ করছিল হয়তো। কিন্তু হাসান ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাসাকাদজাকে ডিফেন্স করে স্বস্তি দেন।

মিরাজ স্ট্রাইকে এসে মেদেভেরের প্রথম দুই বলে ঝুঁকি নেননি। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ। প্রথম ম্যাচের উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট করে ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে অতীতের সব পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটপ্রাপ্তি, দুই হাজার রানের মাইলফলক পেয়েছেন। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২১৭ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফ্লাডলাইটের আলো জ্বেলে নির্ধারিত সময়ের বেশি খেলান আম্পায়াররা। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা হয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা তাতে আপত্তি করেননি। তাইজুল ৩, নাঈম ১ ও মিরাজ ৫ উইকেট নিলে ম্যাচ শেষ হয়।  

সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জেতার পরও খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘আমি টেস্ট সিরিজ ড্র করে খুশি না। কারণ, প্রথম টেস্টে আমরা একেবারেই ভালো খেলিনি। এই টেস্টে একপেশে খেলে জিতলেও সিরিজে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। সিরিজটি জিততে হতো।’ টাইগার দলপতি জানান, এই পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফরে কাজে দেবে। দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বিদেশে খেলার পরিবেশ তৈরি করছিল বিসিবি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। কিউইদের বিপক্ষে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেলেও মিরপুর থেকে হারতে শুরু করে। দেশের মাটিতে টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ